রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
চুয়াডাঙ্গায় দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অবাধে বিক্রি হচ্ছে কৃষি জমির টপসয়েল। এর ফলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ জমি উর্বরা শক্তি হারিয়ে অনাবাদি হয়ে পড়ছে। অনেক জমি পরিণত হচ্ছে খানাখন্দে। ইটভাটায় ইট তৈরি, গর্ত, ডোবা, পুকুর ও নিচু জমি ভরাট করতে এসব মাটি ব্যবহার হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে লোকালয়, ফলদ বাগান, ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা অর্ধ শতাধিক ইটভাটায় ইট তৈরির বেশির ভাগ মাটিই ফসলি জমির উপরি ভাগের মাটি বা টপসয়েল। প্রতি বছরই কার্তিক মাস থেকে শুরু করে জৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত ছয়-সাত মাস ধরে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মাঠের কৃষি জমি থেকে প্রতিদিন শত শত গাড়ি মাটি কেটে নেয়া হয়। কৃষকের দারিদ্র্যতা, অজ্ঞতা ও অসচেনতাকে পুঁজি করে জমি মালিকদের নানারকম প্রলোভন দেখিয়ে এক শ্রেণির দালালচক্র এসব জমির মাটি কেটে নিতে সহায়তা করছে। জানা গেছে, এলাকার অনেক ট্রাক্টর মালিক নিজেরা এবং দালালদের মাধ্যমে এসব কৃষি জমির মাটি কিনে ট্রাক্টরযোগে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছে। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মাঠ থেকে শত শত ট্রাক্টর, ট্রাক ও পাওয়ার ট্রিলারে মাটি বোঝাই করে কেটে নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জমির মালিক প্রতি গাড়ি মাটির মূল্যবাবদ পাচ্ছে দেড় থেকে ২০০ টাকা। দালালরা পায় ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা। ট্রাক্টর মালিকরা মাটি কাটার স্থান থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে প্রতি ট্রলি মাটি বিক্রয় করছে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায়। কোনো কোনো জমির মালিক জমি সমান করার নামে নগদ টাকার লোভে আবাদি জমি থেকে দুই-তিন ফুট পর্যন্ত গভীর করে মাটি কেটে বিক্রি করে কৃষি জমির সর্বনাশ করছে।
কৃষিবিদদের মতে, কৃষি জমির উপরিভাগের স্তর থেকে ৯ ইঞ্চি গভীরতার মাটিতেই নানা প্রকার পুষ্টি ও জৈব উপাদান থাকে যা গাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। আর এ স্তরেই বাস করে কৃষকের বন্ধু কেঁচো। এই কেঁচোরা তাদের খাদ্য গ্রহণের জন্য নিচের মাটির ক্রমাগত উপরে তোলার ফলে কৃষিজমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। মাটি কাটার ফলে এই কেঁচো ও নানারকম উপকারী কীটপতঙ্গ মাটির সাথে উঠে পড়ে। তাই কৃষি জমির এ অংশের মাটি কেটে নেয়ার ফলে জমির উর্বরা শক্তি হারিয়ে যায়, যা পুরণ হতে কমপক্ষে আট থেকে ১০ বছর সময় লাগে। আবার বেশি গভীর করে মাটি কাটার ফলে জমিতে গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় জমিতে পানি জমে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে ওই জমিতে ফসল ফলানো যায় না। একটি জমি থেকে গভীর করে মাটি কাটার ফলে বিশেষ করে তার চারপাশের জমিগুলোও ভ‚মিধসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এঁটেল ও দোয়াশ মাটি দিয়ে ইট তৈরি ভালো হয় বলে ভাটামালিকদের কাছে এই মাটির চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি। অপর দিকে এঁটেল ও দোয়াশ মাটিতেই সবরকম ফসল ভালো হয়। তাই এ ধরনের মাটি কাটার ফলে সর্বনাশ হচ্ছে আবাদি জমির।
অনেক ক্ষেত্রে ভাটামালিকরা আবাদি জমিতে পুকুর তৈরি করে দেয়ার শর্তে জমি মালিকদের সাথে চুক্তি করে। উপরের মাটি কেটে নেয়ার পর নিচের বালুর স্তর বেরিয়ে পড়লে কৌশলে সেখান থেকে সরে পড়ে। ফলে ওই জমিতে আর পুকুর কাটা হয় না। তাতে একদিকে জমির মালিক যেমন আবাদি জমি হারায়, অপর দিকে পুকুরও তৈরি হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটে এবং জমি মালিকরা প্রতারিত হয়। উপজেলায় বর্তমানে প্রায় অর্ধ শতাধিক ইটভাটার সবগুলোতেই এই মাটি দিয়ে ইট তৈরি হয়। তাতে করে প্রতি বছর প্রায় দুই শতাধিক বিঘা আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। প্রতি বছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিপুল পরিমাণ আবাদি জমির ক্ষতি হলেও এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে কেনো প্রকার পদক্ষেপ নেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সূফি রফিকুজ্জামান বলেন, আবাদি জমির উপরিভাগের স্তরের ৮-৯ ইঞ্চি গভীরতার মাটিতেই মাটির বেশির ভাগ পুষ্টি থাকে। তাই এই অংশ কেটে নেয়ার ফলে মাটি পুষ্টিশূন্য হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই জমির ক্ষতিপূরণ হতে ছয়-সাত বছর সময় লেগে যায়। তাই কৃষি জমির টপসয়েল না কাটার জন্য আমরা কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়ে থাকি।
সচেতনমহল মনে করেন, জমির উপরিভাগের মাটি বা টপসয়েল কেটে নেয়ার ফলে আবাদি জমির যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, সে ব্যাপারে জমি মালিকদের সচেতন করা ও আইন প্রয়োগ করে এ মাটি কাটা বন্ধ না করা গেলে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। তাই কৃষিজমি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে মাটির তৈরি ইটের বিকল্প হিসেবে সিমেন্ট-পাথর-বালুর বøক বা অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা উদ্ভাবন এখন সময়ের দাবি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।