পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৩ লাখ লোক সমাগমের আশা আ.লীগ নেতাদের//
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামের পটিয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভা আগামীকাল (বুধবার)। জনসভা সফল করতে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। আওয়ামী লীগের নেতারা আশা করছেন পটিয়া উপজেলার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের এ জনসভায় তিন লাখ লোক সমাগম হবে। এটি হবে স্মরণকালের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জনসভা। গতকাল (সোমবার) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতারা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বেশকিছু উন্নয়নের দাবি-দাওয়াও তুলে ধরেন। অন্যদিকে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের উন্নয়নে নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট ঘোষণা দাবি করা হয়েছে।
আগামীকাল একদিনের সফরে চট্টগ্রাম আসছেন প্রধানমন্ত্রী। কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ছাড়াও দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ায় জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি। নির্বাচনী বছরে প্রধানমন্ত্রীর এ জনসভাকে ঘিরে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গণে নানামুখী আলোচনা চলছে। বিগত ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে লালদীঘি ময়দানে সর্বশেষ নির্বাচনী জনসভায় চট্টগ্রামের উন্নয়নের ভার নিজ হাতে তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল, কক্সবাজারমুখী রেললাইন, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণসহ বেশকিছু প্রতিশ্রæতি দেন। তার সরকারের টানা দুই মেয়াদে ৯ বছরের বেশি সময়ে সে প্রতিশ্রæতির বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে তা নিয়েও চলছে নানামুখী মূল্যায়ন।
এ প্রেক্ষাপটে জনসভায় আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী কি ঘোষণা দেন তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য সুখবর থাকবে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও আন্দোলন সংগ্রাম ঐতিহ্যের নগরী বন্দরনগরীর বদলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের একটি উপজেলা সদরে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ জনসভা অনুষ্ঠান নিয়েও দলের অভ্যন্তরে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিশেষ করে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা চলছে। উল্লেখ্য, ছয় বছর আগে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ নগরীর পলোগ্রাউন্ডে সর্বশেষ জনসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উন্নয়ন প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে সুস্পষ্ট ঘোষণা চায় ক্যাব
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জনসভায় চট্টগ্রামের উন্নয়নে ইতিপূর্বে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সুস্পষ্ট ঘোষণা প্রত্যাশা করেছে ক্যাব। ক্যাব নেতৃবৃন্দ গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, চট্টগ্রামকে সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিক রাজধানীতে রূপান্তর, বন্দর, আমদানি-রূপ্তানী, ব্যাংক বীমার প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে স্থানান্তর, কর্নফুলী নদীর তলদেশে ট্যানেল স্থাপন, কালুরঘাট সেতুর পাশে রেল কাম ২য় সড়ক সেতু নির্মাণ, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপন, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন, বাংলাদেশকে এশিয়ান হাইওয়ে ও এশিয়া রেলপথের সাথে যুক্ত করার বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হলেও এর বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না। কিছু প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও কাজ চলছে ধীরগতিতে।
তারা বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিজহাতে নেয়ার যে অঙ্গীকার করেছেন চট্টগ্রামবাসী তার পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চায়। চট্টগ্রাম মহানগরীতে বিরাজমান সমস্যা ও নাগরিক দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে তারা বলেন, চট্টগ্রাম বর্তমানে ভুতুড়ে নগরী। ধুলা, ময়লা, আবর্জনা, যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে। নগরীর উন্নয়নে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানী নগরবাসীর সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। বরং এসব সংস্থার কিছু কর্মকান্ড জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসসিন সুলতানা পারু, চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন
প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, জনসভায় ৩ লাখ লোক সমাগম হবে, এটি হবে স্মরণকারের সর্ববৃহৎ জনসভা। জনসভাকে ঘিরে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে কর্ণফুলী নদীতে কালুরঘাট রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণ, কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে বন্দর সমপ্রসারণ, দক্ষিণ চট্টগ্রামে একটি বিভাগীয় মানের স্টেডিয়াম নির্মাণ এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে কক্সবাজার আরাকান সড়ক চার লেইন করার সরকারী ঘোষণা দ্রুত বাস্তবায়নে এই অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দেন আওয়ামী লীগের নেতারা। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ।
এতে চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদুত নূরুল আলম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী ও ওয়াসিকা আয়শা খান উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে চট্টগ্রাম প্রস্তুত। পটিয়ায় তার জনসভা হবে স্মরণকালের বৃহত্তর জনসভা। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ জনসভা সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান তিনি। আজ মঙ্গলবার নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে জনসভার সমর্থনে মিছিল ও সমাবেশে হবে। লিখিত বক্তব্যে মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আশা করছি তিন লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে এই জনসভায়। মাঠের বাইরে আমরা কয়েক কিলোমিটার জুড়ে সড়কে মাইকের ব্যবস্থা করব। দক্ষিণ চট্টগ্রামের আটটি সাংগঠনিক জেলা কমিটির উদ্যাগে মাইকিং, পোস্টার ও প্রচারপত্র বিলির মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চলছে।
জনসভার জন্য যাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যানজট না হয়, সেজন্য বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও জানিয়েছেন মোছলেম উদ্দিন। তিনি জানান, ২১ মার্চ জনসভার যানবাহন ছাড়া অন্য কোন গাড়ি মহাসড়কের পটিয়া অংশ দিয়ে যেতে পারবে না। উল্লেখ্য, ১৭ বছর পর চট্টগ্রামের পটিয়ায় যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে দক্ষিণ চট্টগ্রামে তার এই জনসভা আট বছর পর। সর্বশেষ বিগত ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের কর্ণফুলী থানা এলাকায় জনসভায় ভাষণ দেন। এরমধ্যে উত্তর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি ও মীরসরাইতেও জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন তিনি।
পটিয়াকে জেলা ঘোষণার দাবি
পটিয়া সংবাদাতা জানান, প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে চলছে সাজসাজ রব। পুরো চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক জুড়ে ব্যানার, পোষ্টার, ফেষ্টুন ও বড় বড় বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রীর ছবি। আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎসাহ উদ্দীপনা। চারদিকে উৎসবের আমেজ। পটিয়ার জনগণের প্রাণের দাবী প্রধানমন্ত্রী পটিয়া আসলে তিনি পটিয়াকে জেলায় বাস্তবায়ন করবেন। কারণ ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পটিয়ার গুরুত্ব বিবেচনা করে জেলা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ‘পটিয়া জেলা’ আর বাস্তবায়ন হয়নি। সরকার পট পরিবর্তনের পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পটিয়াকে মহকুমায় রূপান্তর করেন। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত পটিয়া মহকুমা হিসেবে চলে আসছিল। ১৯৮৫ সালে এইচ এম এরশাদ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণে সকল মহকুমাকে জেলা ও সকল থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করেন। পটিয়া আর জেলা বাস্তবায়ন হয়নি। পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরী সংসদে এ বিষয়টি উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটিয়া নিয়ে কি ভাবছেন তা জানার প্রতীক্ষায় এখন পটিয়াবাসী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।