Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আলু নিয়ে বিপাকে রংপুর অঞ্চলের কৃষক

বাম্পার ফলন হলেও উৎপাদন খরচ উঠছে না

| প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রংপুর থেকে হালিম আনছারী :
ফলন ভালো হলেও বাজারে দাম না থাকায় উৎপাদন খরচ উঠছে না রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের। ফলে আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। মুনাফার আশায় ধারদেনা করে অধিক জমিতে আলু চাষ করে এখন চোখে সরষের ফুল দেখছেন তারা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রংপুর ও দিনাজপুর কৃষি অঞ্চলে এক লাখ ৫৯ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও চাষ করা হয় এক লাখ ৬৬ হাজার ২২৬ হেক্টর জমিতে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর এ অঞ্চলের আলু ক্ষেতে লেটব্রাইটসহ বিভিন্ন ছত্রাকের আক্রমণের ঘটনা বেশি ঘটায় আলু ক্ষেতে বেশি করে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়েছে। ফলে এ বছর উৎপাদন খরচ অন্যান্য বারের তুলনায় অনেকটাই বেশি হয়েছে। তবুও আশা ছাড়েননি এ অঞ্চলের কৃষকরা। চলতি মৌসুমে রংপুর জেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আলু চাষ করেছেন কৃষকরা। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর এ বছর রংপুরে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৪৯ হাজার হেক্টর জমি। অথচ এবার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে আলু চাষ হয়েছে ৫৪ হাজার সাত শ’ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদরে তিন হাজার ৫০০ হেক্টর, মেট্রোপলিটন এলাকায় সাত হাজার ৫৫০ হেক্টর, কাউনিয়ায় পাঁচ হাজার ৫৫০ হেক্টর, গংগাচড়ায় ছয় হাজার ২৫০ হেক্টর, মিঠাপুকুরে ১১ হাজার ৯০০ হেক্টর, পীরগঞ্জে চার হাজার ৫০০ হেক্টর এবং পীরগাছায় ৯ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়।
কৃষকরা জানায় আগাম জাতের আলু বিশেষ করে গ্রানুলা, ডায়মন্ড, কারেজ ও সেভেন জাতের আলু প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২১ মেট্রিক টন করে। শীল আলু এখন উঠানো হচ্ছে। কিন্তু ইতোমধ্যে বাজারে আলুর ব্যাপক দরপতনে উৎপাদন খরচ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। উৎপাদন খরচ না ওঠায় এ অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে প্রান্তিক চাষিরা বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন। বাজারে আলুর চাহিদা না থাকায় কেজি প্রতি পাঁচ-সাত টাকা কমে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে লাভের মুখ দেখা তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠছে না। ফলে ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না অনেকেই। অন্যদিকে চাহিদার তুলনায় আলু চাষ বেশি হওয়ায় মহাজনরাও আলু নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না। ফলে অনেকটা পানির দামেই আলু বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।
বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের কাঁচাবাড়ি গ্রামের কৃষক রহিদুল মন্ডল ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে খরচ পড়েছে ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা। আলু বিক্রি করে ১০ হাজার টাকাও উঠেছে না। গত বছর আগাম আলুচাষিরা প্রতি কেজি আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারলেও এবার তা সাত-আট টাকা কমে এসেছে।
তিনি আরো জানান, গত এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বস্তাপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কমে গেছে। বর্তমানে গ্রানুলা জাতের ৮৫ কেজির এক বস্তা আলু ৩০০ থেকে ৩২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিনই আলুর দাম কমছে। মহাজনরাও আলু নিতে চাচ্ছেন না। এ অবস্থায় কী করব, ভেবে পাচ্ছি না।
সদর উপজেলার বুড়িরহাট এলাকার একজন প্রান্তিক চাষি ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, এ বছর তিনি ২৪ দোন (২৫ শতক) জমিতে আলু চাষ করেছেন। দোন প্রতি জমিতে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। একই উপজেলার পালিচড়া এলাকার প্রান্তিক চাষি মমিনুল জানিয়েছেন, তিনি ১৫ দোন জমিতে গ্রানুলা জাতের আলু আবাদ করেছেন। বাজারে আলুর চাহিদা না থাকায় এখনো ক্ষেত থেকে আলু তোলেননি। ক্ষেতেই বস্তা ভরে রেখেছেন। লাভের আশায় ঋণ নিয়ে আলু চাষ করে এখন চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। তিনি জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আলু ক্ষেতে লেটব্রাইটসহ বিভিন্ন ছত্রাকের আক্রমণ বেশি ছিল। ফলে কয়েক দফা বাড়তি ছত্রাকনাশক ওষুধ প্রয়োগসহ বাড়তি পরিচর্যা করতে গিয়ে উৎপাদন খরচ অনেকটাই বেড়ে গেছে। কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের আলুচাষি বোরহান জানিয়েছেন, এবার ২১ দোন জমিতে আগাম গ্রানুলা জাতের আলু চাষ করে প্রতি দোনে আলু পেয়েছেন প্রায় ৩২ মণ। আলু উঠানো পর্যন্ত দোন প্রতি তার খরচ হয়েছে ১২ থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। গত সপ্তাহে ২১৫ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করে পেয়েছেন সাত হাজার ২০০ টাকা। ফলে প্রতি দোনে তার লোকসান হয়েছে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার।
রংপুর সিটি বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আজমল জানিয়েছেন, তারা মণপ্রতি ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা দরে আলু কিনছেন। শ্রমিক ও পরিবহন খরচসহ বিভিন্ন খরচের কারণে তাদের আলু বিক্রি করতে গিয়ে খুব একটা লাভ হচ্ছে না। তা ছাড়া এ বছর আলুর চাহিদা হঠাৎ করেই কমে গেছে। চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে বাজারে আলুর দামও অনেকটা কমে গেছে বলে তিনি মনে করেন। তবে, কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতর ও কৃষি বিপণন অধিদফতরের কর্মকর্তারা মনে করেন, এ বছর আলুর দাম নিম্নমুখী হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে- আগাম আলুর চাষ বৃদ্ধি পাওয়া। তা ছাড়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে আলু চাষ এবং বাম্পার ফলন হাওয়ায় কৃষকরা তুলনামূলকভাবে একটু কম দাম পাচ্ছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষক


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ