পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোঃ সাদাত উল্লাহ, বান্দরবান থেকে : পুনর্বাসনের প্রলোভনে বান্দরবানের দুর্গম এলাকা থেকে অনেক পাহাড়ি পরিবার মিয়ানমারে পাড়ি দিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। গত বুধবার সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমারে যাবার সময় মাইন বিস্ফোরণে এক ¤্রাে পরিবার প্রধান নিহত হয়েছেন। এসময় তার স্ত্রী ও চার শিশু সন্তান আহত হয়েছেন। বর্তমানে তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একটি দালাল চক্রের খপ্পরে গত এক বছরে পাঁচ শতাধিক মারমা, ¤্রাে, ত্রিপুরাসহ কয়েকটি স¤প্রদায়ের পরিবার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলায় রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানান, বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া থানছি, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে গরীব অসহায় পরিবারগুলো প্রলোভনে পড়ে মিয়ানমারে যাচ্ছেন। তারা জানান, গত বছর থেকে পরিবারগুলো মিয়ানমারে যাওয়া শুরু করলেও এ বছরের শুরু থেকে এই সংখ্যা বেড়েছে। রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার বিভিন্ন জায়গায় পরিবারগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে মিয়ানমার সরকার। প্রলোভনে পড়ে পাহাড়ি পরিবারগুলো মিয়ানমারে চলে যাচ্ছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানালেও মিয়ানমারের গণমাধ্যমগুলো বলছে, বাংলাদেশে নির্যাতন নিপীড়ণ ও খাদ্য সংকটের কারণে পরিবারগুলো সেদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। এদিকে পাহাড়ি পরিবারগুলো মিয়ানমারে যাওয়া ঠেকাতে ইতোমধ্যে প্রশাসন ও বিজিবির পক্ষ হতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়ণে ইতোমধ্যে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা যখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ঠিক সে সময়ে বান্দরবানের সীমান্ত থেকে পাহাড়িদের মিয়ানমারে চলে যাওয়ার খবরটি এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। থানছি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লা চিং মারমা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সীমান্ত এলাকায় একটি দালাল চক্র নানা প্রলোভন দেখিয়ে গরীব অসহায় পাহাড়িদের মিয়ানমারে নিয়ে যাচ্ছে। তবে এলাকার প্রশাসন জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সচেতন করছেন মিয়ানমারে না যেতে।
যেভাবে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে পাহাড়িরা
বান্দরবানের থানছি উপজেলার সাংঙ্গু রিজার্ভের বড় মদক, আন্দার মানিক, লেইক্রে ঝিরি, পানঝিড়ি, বুলু পাড়া আলীকদম উপজেলার পুয়ামুহুরী কুরুকপাতা সীমান্তের দুর্গম এলাকার পাহাড়িরা দালাল চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে মিয়ানমারে পাড়ি দিচ্ছে। গত এক সপ্তাহে থানছির সাংঙ্গু রিজার্ভ এলাকার থোয়াইচং পাড়া থেকে ৯ পরিবার, উসাথোয়াই পাড়া থেকে ৭ পরিবার, ইয়াং বং পাড়ার ৫ পরিবার, থাংকোয়াই পাড়ার ৬ পরিবার, বড় মদক পাড়ার ৫ পরিবার, পুশোথোয়াই পাড়া থেকে ২ পরিবারসহ ৪০টিরও বেশি পরিবার মিয়ানমারে চলে গেছে। একইভাবে আলীকদমের কুরুকপাতা এলাকার রালাই ম্রো পাড়া থেকে ৫ পরিবার মায়ানমারে পাড়ি দিয়েছে। এছাড়া জানুয়ারিতে নাইক্ষ্যংছড়ির সোনাইছড়ি ও থানছি উপজেলার বড় মদক এলাকা থেকে ২০ পরিবার মিয়ানমারে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। সাঙ্গু সংরক্ষিত বচনাঞ্চলের থোয়াইচিং কারবারি পাড়ার পাড়া প্রধান থোয়াইচিং মারমা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, জুম থেকে যে ধান পান তার অর্ধেকেরই বেশি দাদন ব্যবসায়ীদের দিয়ে দিতে হয়। ফলে প্রতিবছরই খাদ্য সংকট থাকে। এছাড়া বনাঞ্চল থেকে আগের মতো গাছ বাঁশ পাওয়া যায় না। তাই উন্নত জীবনের আশায় তিনি ও তার পরিবার মিয়ানমারে যাচ্ছেন। একই এলাকার বাসি থোয়াই মারমা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, গত বছর যারা মিয়ানমারে গিয়েছে তারা অনেকে জায়গা-জমি সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে বলে তারা খবর পেয়েছেন। এ কারণে অনেকেই সেখানে গিয়ে বসবাস করতে চাইছে।
এ ব্যাপারে থানছি উপজেলার রেমাক্রী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মুশোথুয়াই মারমা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নের পুয়ামুহুরী সীমান্তের পাহাড় ভাঙা এলাকা দিয়ে লোকজন মিয়ানমারে যাচ্ছে। তিনি জানান, সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য স্থল মাইন থাকায় শুধুমাত্র আলীকদম সীমান্ত পথেই মিয়ানমারে যাওয়া সহজ। এ কারণে ওই সীমান্ত পথটি তারা ব্যবহার করছে। থানছি থেকে দুদিন পায়ে হেঁটে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যাওয়া যায়। এছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত পথেও পাহাড়িরা মিয়ানমারের মংডু রাজ্যে যাচ্ছে বলে জানান ওই জনপ্রতিনিধি। আলীকদমের কুরুকপাতা ইউপির চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো জানান, আরীকদমের বড় বেতি, ছোট বেতি, রড় আঙ্গালা, বড় বুঝি এলাকা দিয়ে ম্রো ও মারমা পরিবারগুলো রাখাইনে চলে যাচ্ছে।
জনপ্রতিনিধিরা যা বলছেন
থানছি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লা চিং মারমা ও আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, দীর্ঘদিন থেকেই সীমান্তে বসবাসকারী পাহাড়িরা চাষাবাদসহ আত্মীয়তার কারণে মিয়ানমারে যাওয়া আসা করছে। তবে গত এক বছর ধরে মিয়ানমারে আশ্রয় গ্রহণের সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে সা¤প্রতিক সময়ে রাখাইনে রোহিঙ্গা সমস্যা শুরুর পর থেকে পাহাড়িদের মিয়ানমারে চলে যাওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সীমান্তে দালাল চক্রের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সমস্যা বাড়ছে বলে জানান তারা। থানছি উপজেলার সদর ইউনিয়নের জিঅং পাড়ার বাসিন্দা বৌদ্ধ ভিক্ষু অংরাউ মারমা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, তিনি মিয়ানমারে ১০ একর জায়গা পেয়েছেন। এছাড়া রেশন ও ছেলে-মেয়েদের পড়া লেখার ব্যবস্থা করেছে মিয়ানমার সরকার। তিনি জানান, যেসব পরিবার মিয়ানমারে যাচ্ছে তাদের প্রতি পরিবার প্রতি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা ও মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে ৫০ হাজার বার্মিস টাকা দালালদের দেয়া হয়।
প্রশাসনের উদ্যোগ
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আসলাম হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, পাহাড়িদের মিয়ানমারে চলে যাওয়ার বিষয়টি ইতোমধ্যে মাসিক আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি জানান, দুর্গম এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের নানাভাবে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের পাশাপাশি এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ নিরাপত্তা বাহিনী সহায়তা দিচ্ছে। লোকজনদের সচেতন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিজিবির বান্দরবান সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইকবাল হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, দুর্গমতার কারণে পুরো সীমান্ত এলাকা নজরে রাখা কষ্টকর। ইতোমধ্যে অনেক পরিববার চলে গেছে। নতুন করে যাতে আর কোনো পরিবার না যায় সেজন্য বিজিবির ক্যাম্পগুলো থেকে পাহাড়ে পাহাড়ে গিয়ে সচেতনামূলক কর্মকাÐ পরিচালনা করা হচ্ছে।
এব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সীমান্ত এলাকা থেকে লোকজনদের মিয়ানমারে চলে যাওয়ার কথা তিনি শুনেছেন। তবে কি কারণে তারা মিয়ানমারে যাচ্ছে তা তদন্ত করে দেখার জন্য প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।