Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আফরিন ঘিরে ফেলার দাবি তুরস্কের ২ লাখ বেসামরিক লোক অবরুদ্ধ

| প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ভয়েস অব আমেরিকা : তুরস্ক উত্তর সিরিয়ার আফরিন ঘিরে ফেলার দাবি করেছে। এর ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ২ লাখের মত বেসামরিক লোক যাদের অধিকাংশই আসন্ন অবরোধ ও বোমাবর্ষণ থেকে পালাতে চেষ্টা করেছিল।
শহরের দক্ষিণে শহর থেকে বের হওয়ার সর্বশেষ পথটিতে কয়েকশ’ মিটার দীর্ঘ সারিতে উদ্বিগ্ন পরিবারগুলো দাঁড়িয়েছিল। এদিকে তুর্কি সামরিক বাহিনী ও তাদের আরব মিত্র গ্রæপ সাত সপ্তাহ আগে অভিযান শুরুর পর সোমবার আফরিনে তাদের দখল করা স্থানগুলোতে অবস্থান সংহত করছিল।
আফরিনে তুরস্কের অগ্রগতি একটি গুরুত¦পূর্ণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠি অধ্যুষিত এলাকা সম্পর্কে আংকারার পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। আফরিন এখন সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের এক গুরুত¦পূর্ণ কেন্দ্র এবং আরব, তুর্কি ও কুর্দিদের মধ্যে উত্তেজনার পারদ ছড়ানো স্থান।
আফরিন অভিযানে তুরস্কের সাফল্য আংকারা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বিরোধ বৃদ্ধি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কুর্দি গ্রুপগুলোকে ব্যবহার করে। তারা কুর্দি গ্রæপগুলোকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে যা নিয়ে তুরস্কের আপত্তি উপেক্ষা করে তারা। ২০ জানুয়ারি তুরস্ক আফরিন অভিযান শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করেনি এ কথা বলে যে তারা তাদের মিত্রদের প্রতিরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ।
শুক্রবার পলায়নরতদের মধ্যে অনেকেই ছিল কুর্দি পরিবার। তাদের আশংকা যে আংকারার এ অভিযানে তাদের বিতাড়িত করে সে সব স্থানে আরব পরিবারগুলোকে বসানো হবে।
অভিযানের শুরুতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, আফরিনকে তার বৈধ অধিবাসীরে কাছে ফিরিয়ে দেয়াই তুর্কি সামরিক অভিযানের লক্ষ্য। তার এ বক্তব্যের পর থেকে কুর্দি গ্রæপগুলোর দাবি যে তিনি আফরিনে জনসংখ্যাগত পরিবর্তন আনতে চাইছেন। যাহোক, শক্রবার তুর্কি জঙ্গি বিমানগুলো আফরিনে প্রচারপত্র বিলি করে।তাতে বলা হয় যে ওয়াইপিজি মিলিশিয়াদের ঐ এলাকা থেকে বিতাড়িত করাই তাদের সামরিক অভিযানের লক্ষ্য।
একটি প্রচারপত্রে বলা হয়ঃ আমরা এখানে এসেছি আপনাদের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য। তুরস্কের ন্যায়বিচারের উপর আস্থা রাখুন। দয়া করে সন্ত্রাসীদের ফাঁকা প্রতিশ্রæতিতে বিশ^াস করবেন না। ওয়াইপিজি/পিকেকে নেতারা আফরিন ছেড়ে পালাচ্ছে। এই সন্ত্রাসী সংস্থা থেকে দূরে থাকুন। আমাদের বাড়িয়ে দেয়া হাত ধরুন, আত্মসমর্পণ করুন। আফরিনের জন্য শান্তিপূর্ণ সুন্দর ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে।
ওয়াইপিজির সদস্য ও তার অঙ্গ সংগঠন, মার্কিন সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) তুর্কি সৈন্যদের সাথে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলছে বলে মনে হয়। এসডিএফ মুখপাত্র হুরো কিনো বলেন, তুর্কিরা এমন একটি ভ‚খন্ড দখল করছে যা তাদের নয়। তারা জনসংখ্যার পরিবর্তন করতে চায়। তারা উদ্বাস্তু সমস্যা দিয়ে ই ইউকে বø্যাকমেইল করতে চায়।
কিনো বলেন, সিরিয়ার যুদ্ধে নানা স্থান থেকে পালিয়ে আসা মানুষেরা আফরিনে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের মধ্যে আরব, ইয়াজিদি, আলাবি ও খ্রিস্টানরা ছিল। এটা আরব-খ্রিস্টান দ্ব›েদ্বর মত কিছু ভাবা লোকের উচিত হবে না। অধিকাংশ মানুষই আলেপ্পোর মত সিরিয়া সরকারের দখলাধীন এলাকাতে চলে যাচ্ছে।
জাতিসংঘ শুক্রবার বলেছে, সিরিয়া সরকার অধিকৃত এলাকাতে এই জন¯্রােত ইতোমধ্যেই স্থানীয় অধিবাসীদের বিপর্যস্ত অবস্থার আরো অবনতি ঘটিয়েছে।
জাতিসংঘ মানবিক সমন্বয়কারী আলি আল- জাতারি বলেন,তুর্কি হামলা থেকে রেহাই পেতে হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে গিয়ে পাহাড়ি ঢালগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে। অনেকে বনে আশ্রয় নিচ্ছে, অনেকে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে হাজির হচ্ছে। তারা যে সামান্য সম্বল নিয়ে এসেছে তাই দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। ফলে সংকটের মধ্যে সংকট তৈরি হয়েছে। সবারই সাহায্যের দরকার।
পালিয়ে আসা পরিবারগুলো ও আফরিনে যারা এখনো রয়েছেন তারা জানান, জঙ্গিরা লোকজনের চলে যেতে দিতে চাইছে না। খালেদ আল হারবি নামক এক আরব ছাত্র বলেন, কুর্দ ও আরবরা আফরিন ত্যাগের চেষ্টা করছে। কিন্তু তা কঠিন। কুর্দি মিলিশিয়ারা তাদের শহর ছাড়তে দিচ্ছে না। সিরিয়া সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পালিয়ে যেতে সহায়তা দিতে চাইলেও কেউ তাদের সাথে যেতে রাজি নয়। কুর্দিরা স্বভাবতই তুর্কিদের ঘৃণা করে। তারা তুর্কিদের সাথে বাস করতে চায় না।
হারেস রাব্বা নামে ২৪ বছর বয়সের এক আরব জানান, আরবরা কুর্দিদের চলে যেতে দেখে খুশি নয়। আমরা জানি, সব কুর্দি মিলিশিয়াা নয়। তেমনি সব আরবই ইসলামিক স্টেটের ন্যায় জিহাদি গ্রæপের সাথে সম্পৃক্ত নয়।
তুর্কি অভিযান সমর্থনকারী রাব্বা বলেন, আফরিন একটি আরব-সিরীয় এলাকা এবং সব সময় তাই থাকবে।
এদিকে তুর্কি কর্মকর্তা এ সপ্তাহে বলেছেন যে আফরিন আসাদ সরকারের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে দেয়া হবে না। তিনি আভাস দেন যে আফরিনকে উত্তর সিরিয়ায় তুরস্কের প্রভাবের নতুন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
আংকারায় তুরস্কের ক্ষমতাসীন দলের কিছু সিনিয়র সদস্য আফরিন দখলের জন্য এরদোগানের প্রতি বার বার আহবান জানিয়েছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তুরস্ক

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ