Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবৈধ শিক্ষার্থীর দখলে রাবির লতিফ হল

অধিকাংশ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী

মিজানুর রহমান রানা, রাবি থেকে | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ঐতিহ্যবাহী হল হিসাবে পরিচিত নবাব আব্দুল লতিফ হলের ৩১৯টি সিটের মধ্যে ৯৫টি সিটই অবৈধ শিক্ষার্থীদের দ্বারা বেদখল হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র হাতেগোনা কিছু শিক্ষার্থীর আবাসিকতার ব্যবস্থা থাকলেও লতিফ হলের মাত্র ৩১৯ সিটের বিপরীতে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা যখন হল প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও আবাসিকতা পাচ্ছেন না এমতাবস্থায় হলের অন্তত ৫০ থেকে ৫২টি রুমে এই বিপুল পরিমাণ অবৈধ শিক্ষার্থীর অবস্থানে হল প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হলের অনেক আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তবে এই অবৈধ শিক্ষার্থীদের বেশীর ভাগই বিশ^বিদ্যালয় হল ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের অছাত্র ও অনাবাসিক নেতাকর্মী ছাড়াও অন্যান্য হলের নেতাকর্মীও আছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। আধিপত্য ধরে রাখতে নিজেদের মধ্যে দ্ব›দ্ব, সিনিয়র আবাসিক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময়ে হুমকি, জোর করে রুম থেকে বাহির করে দেওয়া ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে বৈধভাবে সিট বরাদ্দ হলেও সেগুলো ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন এমন অভিযোগ ছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে হলে সিট দিচ্ছেন এমন অভিযোগও রয়েছে হল ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। হলের নেতাকর্মীরা ব্যাপক ক্ষমতাধর হওয়ায় অনেকটাই নিশ্চুপ হয়ে আছেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তবে হল প্রভোষ্টের ছত্রছায়া ও সহায়তায় ছাত্রলীগই পরোক্ষভাবে হলকে নিয়ন্ত্রণ করছেন এমন অভিযোগ তুলছেন শিক্ষার্থীরা। কিভাবে এত বিপুল সংখ্যক অবৈধ শিক্ষার্থী হলে থাকতে পারে এ ব্যাপারে বিষ্ময় প্রকাশ করেন তারা।
কেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রত্ব শেষ এবং আবাসিকতা না থাকার পরও অবৈধভাবে হলে অবস্থান করছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রভোষ্ট ড. বিপুল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘কিছু ছাত্রলীগ নেতাকর্মী হলে থাকতেই পারে। যেহেতু তারা ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন করেন তাই তাদেরকে কিছু ছাড় দিতেই হয়। আগের হল প্রশাসনও তাদেরকে ছাড় দিয়েছে তাই আমাদেরকেও দিতে হচ্ছে। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শেষ হওয়ার পরও আরো কিছুদিন হলে থাকতে চায়। এটা দোষের কিছু না।’ ছাত্রলীগের তথ্য, আবাসিক শিক্ষার্থী ও হলের রেজিস্টার সূত্রে জানা যায়, হলে মোট ৩১৯ টি সিটে বৈধ শিক্ষার্থী হিসাবে অবস্থান করছেন ২২৪ জন আবাসিক শিক্ষার্থী। এ হিসাব মতে ৯৫ জন শিক্ষার্থী অবৈধভাবে হলে অবস্থান করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ হল ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি এবং ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও অবৈধভাবে অবস্থানকারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, বাকীরা প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষে পড়েন এমন অনাবাসিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। অন্তত ৫০ থেকে ৫২টি রুমে হলের দুই দিকে ‘ছাত্রলীগ ব্লক’ নামে পরিচিত বøকে থাকেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতির অনুসারীরা পূর্ব ব্লক এবং সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা পশ্চিম ব্লক নিয়ন্ত্রন করছেন বলে জানা গেছে। সিনিয়র শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে না পারলেও তুলনামূলক জুনিয়র শিক্ষার্থীদের ‘শুধুমাত্র’ ছাত্রলীগ করা ও সাপ্তাহিত মিছিলে অংশগ্রহণ করতে হবে এই শর্তে হলে তুলছেন তারা। তবে কয়েক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা করে নিয়ে হলে উঠিয়েছেন এমন অভিযোগও উঠেছে। ছাত্রলীগ করতে হবে এই শর্তে অনেক ছাত্রত্ব শেষ হওয়া শিক্ষার্থীকেও হলে থাকতে দিয়েছেন। এক্ষেতে প্রভোষ্ট নিরব ভূমিকা পালন করছেন এমন অভিযোগ করেছেন তারা। এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন ‘কিছু ছাত্রলীগ নেতাকর্মী লতিফ হলে অনাবাসিক হিসাবে আছেন তাদেরকে বৈধ করে নেয়ার জন্য হল ছাত্রলীগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও অন্যান্য হলের অনাবাসিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরকেও একই নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।’ কোন কোন রুমের শিক্ষার্থীরা অবৈধভাবে হলে অবস্থান করছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে হলের উপ-রেজিস্টার মোজাম্মেল হক বলেন, এই মুহূর্তে হলের ২২৪ জন শিক্ষার্থীর আবাসিকতা আছে। আর বাকী যারা আছেন অবৈধভাবে আছেন। তবে তারা ছাত্রলীগ কিনা এবং তারা কোন কোন রুমে অবস্থান করছেন এই তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।’ অন্য হলের ছাত্রলীগ নেতাও এই হলে অবৈধভাবে অবস্থান করছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রভোষ্ট ড. বিপুল কুমার বিশ্বাস বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রভাবশালী দুইজন নেতার নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘দেখ ঐ দুজন নেতা (গোপন রাখা হলো) অন্য হলের হওয়ার পরও বঙ্গবন্ধু হলে থাকেন। আমাদের হলেও দু’একজন থাকতেই পারে। হল প্রশাসনের এ বিষয়ে কিছুই করার নেই।’ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ও হলের অন্যান্য সমস্যার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেই চরম ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করে এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, যেখানে শিক্ষার্থীদের আবাসিকতার মারাত্মক সংকট সেই মুহূর্তে যেকোন হলে অবৈধভাবে যেকোন শিক্ষার্থীর অবস্থান অন্যায় বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ছাত্রলীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ