পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দৃশ্যপট পাল্টেছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের। রাজ্যের কোয়েতান কাউক গ্রামে এক সময় ছিল রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিবাস। এখন সেই গ্রামের প্রবেশপথে বাঁশের খুঁটিগুলোতে শোভা পাচ্ছে বৌদ্ধদের পতাকা। এখানে বসতি গড়তে আসতে শুরু করেছে জাতিগত রাখাইনরা। এএফপির প্রতিবেদন বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যের যেসব স্থান থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিতাড়িত করা হয়েছে সেখানেই থিতু হচ্ছে নতুন আগত বৌদ্ধ রাখাইনরা। রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করে গ্রামের পর গ্রাম মিশিয়ে দেয়া হয়েছে মাটির সাথে।
রোহিঙ্গাদের এসব গ্রামে আসতে থাকা জাতিগত রাখাইন অভিবাসীদের সংখ্যা আপাতত কম। কিন্তু বড় আশা নিয়ে তারা রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে পাড়ি জমাচ্ছেন। এক সময়ের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকার ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যা বিন্যাস উল্টে দেয়ার যে ‘রাখাইনিকরণ’ পরিকল্পনা রয়েছে তার অংশ হতে পেরে তৃপ্তি পাচ্ছেন তারা। এই পরিকল্পনার পেছনে রয়েছে দাতাদের অর্থেও যোগান।
কোয়েতান কাউকের একটি কুঁড়েঘরে উঠেছেন ২৮ বছরের চিত সান ইয়ান ও তার স্বামী। মুসলিমদের নির্দেশ করতে মিয়ানমারে ব্যবহৃত অমর্যাদাকর একটি শব্দ ব্যবহার করে চিত এএফপিকে বলেন, ‘আমরা ওই কালারদের অনেক বেশি ভয় পেতাম। কিন্তু এখন যেহেতু তারা আর এখানে নেই আমরা এখানে বসবাসরত স্বজনদের সঙ্গে আবারো দেখা করার সুযোগ পেয়েছি।’ চিতের নতুন বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই দেখা যায় রোহিঙ্গা স্থাপনার ধংসস্তুপ।
গত বছরের ২৫শে আগস্ট থেকে শুরু করে উত্তর রাখাইন থেকে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। ‘মুসলিম মিলিট্যান্টদের’ বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে বিতাড়িত করা হয় তাদের। ৭০এর দশকের শেষের দিকে দক্ষিণ ও মধ্য রাখাইন থেকে আরো ৩ লাখ রোহিঙ্গাকে সেনা অভিযানে জোরপূর্বক পুশ আউট করা হয়। গেল বছরের বর্মী সামরিক অভিযানকে জাতিগণ নিধনযজ্ঞ আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ। আর শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেছেন ‘গণহত্যার যাবতীয় বৈশিষ্ট্য’ আছে ওই অভিযানে।
মিয়ানমার জোর গলায় এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। বলছে, শরণার্থীরা ফিরতে চাইলে স্বাগত। কিন্তু, প্রত্যাবাসনের প্রথম ধাপে তাদেরকে দেয়া ৮০০০ শরণার্থীর তালিকার থেকে মাত্র ৩৭৪ জনকে নিতে সম্মত হয়েছে তারা। কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে থাকা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বহু রোহিঙ্গা এখন আর রাখাইনে ফিরতে চান না- যেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে অস্থায়ী শিবির আর বৈরীভাবাপন্ন প্রতিবেশী।
রোহিঙ্গাদের অনুপস্থিতিতে নানা উন্নয়ন প্রকল্পের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। চেহারা পাল্টে যাচ্ছে উত্তর রাখাইনের। সরকারী, সেনা পৃষ্ঠপোষকতা বা বেসরকারি অর্থায়নে চলছে এসব প্রকল্পের কাজ। রোহিঙ্গাদের রেখে যাওয়া খালি জায়গায় জুড়ে বসাটা পুরনো এক খেলা। এটাকে দেখা হয় ইসলাম প্রসারের বিরুদ্ধে বৌদ্ধ প্রধান এ দেশের যে লড়াই তার অগ্রভাগ হিসেবে।
মিয়ানমার্স এনিমি উইদিন ‘বুদ্ধিস্ট ভায়োলেন্স অ্যান্ড দ্য মেকিং অব দ্য মুসলিম আদার’ বইয়ের লেখক ফ্রান্সিস ওয়েড বলেন, ‘৯০ এর দশকের শুরু থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমিয়ে আনার মাধ্যমে উত্তর রাখাইন রাজ্যের সামাজিক চিত্র পাল্টানেরা নকশা করে আসছে সেনাবাহিনী। সংখ্যালঘু মুসলিমরা এখানে নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যাত। তাদের বলা হয় ‘বেঙ্গলিস’, মিয়ানমারে প্রচলিত যুক্তিমতে- বহিরাগত এ জনগোষ্ঠীকে সফলভাবে তাদের জন্ম-উৎসের দেশে ঠেলে পাঠানো গেছে। মি. ওয়েড বলেন, পশ্চিম তীরে ইসরাইলি দখলদারি প্রকল্পের মতো একই ধাঁচে বৌদ্ধরা মুসলিমদের উৎখাতের পর জায়গা হড়পে নিচ্ছে। উল্টে পাল্টে দিচ্ছে আসল বাস্তবতা। আর ধীরে ধীরে ওই ভূখন্ডে মুসলিমদের অধিকার ঘষে মেজে নিশ্চিহ্ন করে ফেলছে। তিনি আরো বলেন, ‘সামনে আরো অনেক বৌদ্ধরা এখানে থিতু হবে বলে আমার ধারণা। এবং এরপর আমরা ভুলে যাবো এই এলাকা একসময় আসলে কি ছিল। আর মুছে ফেলার প্রক্রিয়া তখন শেষ হবে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।