Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘ব্যবধানের নাম লিওনেল মেসি’

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

শেষ বাঁশি বেজে গেছে। দু’দলের খেলোয়াড় কর্মকর্তাদের মাঝে চলছে সৌহার্দ্য বিনিময়। এমন সময় একজন এসে ম্যাচের নায়ককে জড়িয়ে নিলেন বুকে, পরম মমতায় বদনে এঁকে দিলেন ভালোবাসার চুমু। হাসি মুখে দুজনের মধ্যে চললো কিছুক্ষণ আলাপও।
নিশ্চয় ভাবছেন সেই লোকটি বিজয়ী দলের কোচ। হ্যাঁ, তিনি কোচ বটে। তবে বিজয়ী দলের নয়, পরাজিত দলের। লিওনেল মেসির নান্দ্যনিকতায় আন্তেনিও কোন্তে এতটাই মুগ্ধ, দল যে তার কারণেই ৩-০ গোলে হেরে গেছে তা যেন বেমালুম ভুলে গেছেন তিনি। ম্যাচ শেষে তাই মেসিকে বুকে জড়িয়ে অভিবাদন জানাতে একটুও কার্পন্য বোধ করেননি কোন্তে।
আর্জেন্টাইন তারকার অনন্য সাধারণ ফুটবলের কাছেই দুই লেগ মিলে ৪-১ ব্যবধানে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শেষ হয়ে গেছে চেলসির। রেকর্ড টানা ১১বারের মত আসরের শেষ আটে পৌঁছে গেল বার্সেলোনা। লন্ডনের স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে প্রথম লেগের ১-১ ড্র ম্যাচে বার্সার হয়ে একমাত্র গোলটি করেন মেসি। এই পর্বে ন্যু ক্যাম্পে তিন গোলের দুটিই তার। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে করেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোলের সেঞ্চুরি। পর্তুগিজ তারকার চেয়ে অবশ্য ১৪ ম্যাচ কম খেলেই এই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন ‘বার্সা নাম্বার টেন’।
ম্যাচের বয়স তখন কেবল দুই মিনিট পেরিয়েছে। চেলসির খেলোয়াড়রা বলে স্পর্শও করেননি। তার আগেই মেসির জাদুরকী গোল। বলের যোগানদাতা ছিলেন লুইস সুয়ারেজ। যে দুরহ কোন থেকে চেলসি গোলরক্ষকের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জালে পাঠিয়েছেন তা অবিশ্বাস্য। এসময় মেসি বন্দনায় যেন ভাষাটাও হারিয়ে ফেলেন টেলিভিশন ধারাভাষ্যকার। আর্জেন্টাইন তারকার পুরো ক্যারিয়ারের দ্রæততম গোল এটি, করেন ১২৬তম সেকেন্ডে। ৬৩তম মিনিটে তার দ্বিতীয় গোলটিও গোলরক্ষক থিবাউট কোর্টিসের দু’পায়ের ফাঁক দিয়ে করা। চারজন ডিফেন্ডারকে এক ঝাপটায় পাশ কাটিয়ে বাঁ প্রান্ত থেকে মেসির বাঁ পায়ের বুলেট গতির শট। কোর্টিস কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ। ম্যাচ শেষে কোর্টিসের ভাষ্য, ‘আমি কল্পনাও করিনি মেসি ওখান থেকে এভাবে শট নেবেন। পা দুটো একত্র করতে আমি বড্ড দেরি করে ফেলেছিলাম।’
প্রথমার্ধের ২০তম মিনিটে দলের দ্বিতীয় গোলেও ছিল মেসির অবদান। মাঝমাঠে স্কেস ফেব্রিগাসের কাছ থেকে বল কেড়ে বিদ্যুৎ গতিতে ঢুকে পড়েন ডি বক্সের দিকে। ডিফেন্ডাররা নিশ্চিত ছিলেন শট তিনিই নেবেন। তাকে সামলাতে তাই ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়ে সফরকারী রক্ষণ। কিন্তু তাদের বোকা বানিয়ে বল পাঠিয়ে দেন অপর প্রান্তে অনেকটা অরক্ষিত অবস্থায় থাকা ওউসমান ডেম্বেলের কাছে। দুরহ কোন দিয়ে বাতাসে ভাসিয়ে বল জালে পাঠান দলের সবচেয়ে খরুচে খেলোয়াড়। বার্সার জার্সিতে যা ফরাসি তরুণ তারকার প্রথম গোল।
‘এই মেসিতে মুগ্ধতা প্রকাশ না কটারা কার্পন্য, সুযোগ পেলে অবশ্যই আপনাকে সেটা করা উচিত’ এমন মন্তব্য কোন্তের। ৪৮ বছর বয়সী ইতালিয়ান বলেন , ‘আমরা এমন একজন অনন্য সাধারণ খেলোয়াড় সম্পর্কে কথা বলছি যিনি বিশ্বের এক নম্বর। এমন একজনের প্রসঙ্গে কথা বলছি যিনি যে কোন দলের জন্যে একাই ব্যবধান গড়ে দিতে যথেষ্ঠ। এমন খেলোয়াড় ৫০ বছরে একজন জন্মে।’
চেলসিও যে এদিন মন্দ খেলেছে তা কিন্তু নয়। দু’বার তাদের গোলবঞ্চিত করে বারপোস্ট, দুই লেগ মিলে চারবার। অ্যালোনসোর একটি পেনাল্টির আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি। আর পোস্টের নীচে টার স্টেগেন তো ছিলেনই। কিন্তু আসল সত্যটা কোন্তের মুখেই শুনুন, ‘দুই লেগেই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে মেসি।’
১০০তম গোলের মাইলফলক স্পর্শ করা মেসি উয়েফাকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘এই ধরনের চমৎকার একটি প্রতিযোগিতায় ১০০ গোলে পৌঁছাতে পেরে আমি খুশি। ভালো মানের অনেক খেলেয়াড় থাকা একটি দলের বিপক্ষে এগিয়ে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’ তিনি বলেন, ‘এটা কঠিন এক ম্যাচ ছিল। দল হিসেবে আমরা শক্তিশালী ছিলাম। যখন তৃতীয় গোলটি করলাম তখনই ম্যাচ আমাদের হয়ে যায়।’
একই রাতে ‘আনুষ্ঠানিকতা’র ম্যাচে বাসিকতাসকে তাদেরই মাঠে ৩-১ গোল হারায় বায়ার্ন মিউনিখ। বিজয়ী দলের হয়ে গোল করেন থিয়াগো আলসান্ত্রা ও সান্দ্রো ওয়াগনার। বাকিটা আত্মঘাতি। দুই লেগ মিলে ৮-১ ব্যবধানে এগিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে জার্মান জায়ান্টরা। বার্সার সঙ্গে ট্রেবল জয়ের সম্ভাবনাও জোরালো করলো তারা।
আজ সুইজারল্যান্ডের নিয়নে অনুষ্ঠিত হবে শেষ আটের ড্র।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শীর্ষ ৫ গোলদাতা
খেলোয়াড় ম্যাচ গোল
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ১৪৮ ১১৭
লিওনেল মেসি ১২৩ ১০০
রাউল গঞ্জালেস ১৪২ ৭১
রুড ফন নিস্টলরয় ৭৩ ৫৬
করিম বেনজেমা ১০০ ৫৩

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটে যারা
বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ, জুভেন্টাস, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি, রিয়াল মাদ্রিদ, রোমা ও সেভিয়া।
-দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোলের সেঞ্চুরি করলেন লিওনেল মেসি।
-১৩৯ ম্যাচে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, তার চেয়ে ১৪ ম্যাচ কম সময় লেগেছে মেসির।
-সর্বোচ্চ ৯ গোল করেছেন আর্সেনালের বিপক্ষে। ইংলিশ দলের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ২০ গোল।
-এদিন ক্যারিয়ারের দ্রুততম গোল করেন মেসি, ২.০৮ সেকেন্ডে। আর্জেন্টিনার হয়ে দ্রুততম গোল ২.২৬ মিনিটে বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে।



 

Show all comments
  • আরীফ মাহমুদ ১৬ মার্চ, ২০১৮, ৩:৩০ এএম says : 0
    এরই নাম লিওনেল মেসি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ