Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১৯ মার্চ রাজধানীতে ফের জনসভার ঘোষণা

দেশ ও রাজনীতি কি গোয়েন্দারা চালাচ্ছে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নিরাপত্তাজনিত কারণে বিএনপিকে জনসভা করতে দেওয়া হয়নি। গোয়েন্দা তথ্যের উপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে পুলিশের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তাহলে দেশ ও রাজনীতি কি গোয়েন্দারা চালাচ্ছে? তাদের ওপর ভিত্তি করে একটি বিরোধী দলের সভা করতে দেওয়া না দেওয়া নির্ভর করতে হবে? গত কয়েকবছর ধরে গোটা দেশকে সত্যিকার অর্থেই রাজনীতি বিবর্জিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর কোন অধিকার নেই। রাজনৈতিক নেতাদের হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষেরও কোন অধিকার নেই। গতকাল (সোমবার) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্যান্য দলগুলোকে অনুমতি দিলেও বিএনপিকে না দেওয়ার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে নিরাপত্তা জনিত কারণে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। অথচ এই মাসেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ, রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি, চরমনাই পীর সাহেবসহ কয়েকটি সংগঠন সেখানে সভা করেছেন। জাতীয় পার্টিরও সামনে সেখানে সভা আছে। আমরাও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার ঘোষণা দিয়েছিলাম। জনসভার নিয়মকানুন সব পূরণ করেছি। পূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমতি, ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের (ডিএমপি) কাছে চিঠি দিয়েছি। সাধারণ নিয়ম হচ্ছে অবহিত করতে হয়, জনসভার জন্য অনুমতির প্রয়োজন হয় না। গত কয়েক বছরে তাদের স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সরকার অনুমতির ব্যাপারটি বাধ্যতামূলক করেছে। তারপরও আমরা সেই নিয়ম মেনেই জনসভার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি, প্রচারপত্র বিলি করেছি। অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সাথে বৈঠক করেছি।
তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ জানানোর পথ শান্তিপূর্ণভাব করতে পারবো। কিন্তু এই গণবিচ্ছিন্ন সরকার মানুষকে এতো ভয় পায়। জনগণকে তারা এতো ভয় পায়। গণতন্ত্রের ন্যূনতম জিনিস প্রতিবাদ করার অধিকার, কোন বিষয়ের সাথে একমত না হওয়ার অধিকার, সেটাকে জনসভার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করার অধিকার সেই অধিকারগুলোকে তারা বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ফেব্রæয়ারিতে আমরা জনসভার জন্য অনুমতি চেয়েছিলাম কিন্তু সে সময় বলা হলো ফেব্রæয়ারি মাসে বইমেলা হবে আপনারা মার্চে করেন। এই সময়েও তারা করতে দিল না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা খুব আতঙ্কের সঙ্গে, আশঙ্কার সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, অনির্বাচিত ও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সরকার ক্রমান্বয়ে জনগণের সমস্ত সাংবিধানিক অধিকারগুলোকে কেড়ে নিচ্ছে এবং পথগুলোকে তারা বন্ধ করে দিচ্ছে। গণতান্ত্রিক পথ, গণতন্ত্র চর্চার পথ, মত প্রকাশের স্বাধীনতার পথগুলো তারা একে একে বন্ধ করে দিচ্ছে। এর আগে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু কি বর্বর, মধ্যযুগীয় কায়দায় আমাদের ছাত্রনেতাদের আমাদের সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেল। তার আগের দিন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে একই কায়দায় নিয়ে গেছে। এভাবে সারা বাংলাদেশে তারা আমাদের নেতাকর্মী যারাই সক্রিয়, যারাই গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলছে তাদেরকে আজকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করছে।
গণতন্ত্রে সমালোচনা-বিরোধীতা থাকবেই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রে বলতে বিরোধী পক্ষে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। সরকারের সমালোচনা হবে, জিনিসপত্রের দাম বাড়লে তার সমালোচনা হবে, রাস্তা-ঘাট খারাপ থাকলে তার সমালোচনা করবে। অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেফতার করলে তার সমালোচনা করবে, গুম-খুন, নারী-শিশু অত্যাচারের সমালোচনা হবে। ৭ মার্চ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সমাবেশ থেকে ফেরার পথে নারীদের নির্যাতন করা হয়েছে তার প্রতিবাদ হবে। সেই প্রতিবাদ করাই গণতন্ত্র। দুঃখজনকভাবে আজকে সমস্ত পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেউ সমালোচনা করতে পারবে না। দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এএসএম আবদুল হালিম ও সাবেক সচিব সুজাউদ্দিন উচ্চ আদালতে আগাম জামিন আদেশ নিয়ে নিম্ন আদালতে গেলে কারাগারে পাঠানোর নিন্দা জানান তিনি।
এই কথাগুলো বারবার বলার কারণ ব্যাখ্যা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা দেশের মানুষের বিবেককে জাগ্রত করতে চাই। আজকে আমাদের বেলায় এটা হচ্ছে কালকে আপনাদের সাথেও হবে। হচ্ছেও তাই। আজকে কেউ ছাড় পাচ্ছে না। বুদ্ধিজীবীরা নিজেরাই স্বীকার করছেন, তারা বলছেন, যে তারা লিখতে ভয় পান, কথা বলতে ভয় পান। এটাই বাস্তবতা। কারণ লিখলেই, কথা বললেই তাকে গ্রেফতার করা হবে। তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হবে, গুম করা হবে। পরিবারকে হুমকী দেওয়া হয়।
ঢাকায় আবারও জনসভার ঘোষণা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অত্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক পথে প্রতিবাদ করছি। সভা সমাবেশ বিরোধী দলের সার্বজনীন স্বীকৃত অধিকার। অথচ আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, বেআইনি কর্মসূচি হলে তো বাধা দেবেই। কোনটা বেআইনি আর কোন আইনি, কোনটা কার জন্য আইনি আর কোনটা কার জন্য বেআইনি? এটা নির্দিষ্ট করতে হবে। আপনাদের (আওয়ামী লীগ) জন্য পুরা রাস্তা দখল করে মিটিং করবেন সেটা আইনি। সোহরাওয়াদী উদ্যানসহ আশাপাশের এলাকা ঘিরে রেখে সমাবেশ করবে সেটা আইনি। আর আমরা সোহরাওয়ার্দীর ভেতরে জনসভা করতে যাবো সেটা বেআইনি। এখনো ধৈর্য্য ধরছি, সেজন্য প্রতিবাদ কর্মসূচি না দিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের নিন্দা, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানাচ্ছি। একইসাথে আমরা প্রত্যাশা করছি তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। তারা জনসভার অনুমতি দিবেন। আমরা আবারও আগামী ১৯ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার ঘোষণা দিচ্ছি। একইসাথে আগামী ১৫ মার্চ চট্টগ্রামে, ২৪ মার্চ বরিশালে এবং ৩১ মার্চ রাজশাহীতে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম। ####



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ