মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ৫০ জন নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে। ত্রিভূবন বিমান বন্দরের জিএম রাজকুমার ছেত্রী এ নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। তবে নিহতদের পরিচয় এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। সোমবার (১২ মার্চ) কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে (টিআইএ) এ বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে। বিমানটিতে ৬৭ যাত্রীর মধ্যে বাংলাদেশি ৩২, নেপাল ৩০, চীন ১, মালদ্বীপের ১ জন যাত্রী ছিল বলে জানা গেছে।
কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনের সূত্র দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনের জানানো হয়েছে, সোমবার দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৭৮ যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায় বিমানটি।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি ইনডিপেন্ডেন্ট স্থানীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে জানাচ্ছে, বিমানটি কাঠমান্ডু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে (দুই নং প্ল্যাটফর্ম) থেকে পাশের ফুটবল খেলার মাঠে বিধ্বস্ত হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, প্লেনটি বোম্বার্ডিয়ার ড্যাশ ৮ কিউ৪০০ মডেলের এস২-এজিইউ। বাইরে পাখাবিশিষ্ট এ ধরনের প্লেনে সর্বোচ্চ ৭৮টি আসন থাকে।
নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সুরেশ আচার্য্য জানিয়েছেন, প্লেনটিতে ৬৭ আরোহী ছিলেন। দুর্ঘটনাস্থল থেকে ১৭ জনকে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উদ্ধারকারী দল এবং নেপাল সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
বিধ্বস্ত বিমান থেকে বেঁচে গিয়ে তখনকার অবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা দিলেন যাত্রী বসন্ত বোহরা। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন বলে জানালেন তিনি। বসন্ত বোহরা এবং আরো ১৫ জন নেপালি আরোহী ছিলেন বিমানটিতে। তারা রাস্তবিতা ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস-এর পক্ষ থেকে তারা বাংলাদেশে এসেছিলেন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে।
বসন্ত বলেন, ঢাকা থেকে বিমানটি উড্ডয়নের সময় সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিমানটি অদ্ভুত আচরণ করছিল।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে বিমানটি প্রবলভাবে ঝাঁকুনি দেয়। তারপরই হয় প্রচণ্ড শব্দ। আমার আসনটি ছিল বিমানের কাছে। আমি জানালা ভেঙে বের হতে পেরেছিলাম।
বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটিতে সিলেটের জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৩ শিক্ষার্থী ছিলেন। এদের সবাই মারা গেছেন বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারা সকলেই নেপালি বংশোদ্ভূত। কলেজের ছুটিতে নিজ দেশে বেড়াতে যাচ্ছিলেন ওই ১৩ শিক্ষার্থী।
এরা হলেন- রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সঞ্জয় পৌডেল, সঞ্জয়া মহারজন, নেগা মহারজন, অঞ্জলি শ্রেষ্ঠ, পূর্ণিমা লোহানি, শ্রেতা থাপা, মিলি মহারজন, শর্মা শ্রেষ্ঠ, আলজিরা বারাল, চুরু বারাল, শামিরা বেনজারখার, আশ্রা শখিয়া ও প্রিঞ্চি ধনি। এ বিষয়ে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আবেদ হোসাইন বলেন, গতকাল গাইনি ও মেডিসিন বিভাগের এমবিবিএস সমাপনী পরীক্ষা শেষ হয়। এরপর নেপালি ১৩ শিক্ষার্থী দেশের বাড়িতে ছুটি কাটাতে ইউএস-বাংলার ওই ফ্লাইটে করে নেপাল যান। তবে নেপাল দূতাবাসসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জেনেছি বিমান বিধ্বস্তে ১৩ শিক্ষার্থীর সবাই মারা গেছেন।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স। আটজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে তারা। তবে তাদের পরিচয় জানাতে পারেনি সংস্থাটি। ইউএস বাংলার জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) কামরুল ইসলাম জানান, বিমানের বিধ্বস্তের এই ঘটনাকে প্রাথমিকভাবে নিছক ‘দুর্ঘটনা’ বলেই ধরে নিচ্ছেন তারা। তবে তাদের দুই কর্মকর্তা কাঠমান্ডু পৌঁছানোর পরপরই আরও তথ্য পাওয়া যাবে। সোমবার (১২ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৫টায় রাজধানীর বারিধারায় ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কামরুল ইসলাম জানান, ৬৭ যাত্রী ও চারজন ক্রু নিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে বিমানটি। যাত্রীদের মধ্যে বাংলাদেশি ৩২ জন, নেপালি ৩৩ জন, মালদ্বীপের একজন, চীনের একজন। ক্রুদের মধ্যে ছিলেন ক্যাপ্টেন আবিদ, ফার্স্ট অফিসার একজন, কেবিন ক্রু দুইজন। তিনি আরও জানান, যাত্রীদের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক মানুষ ৬৫ জন এবং দুটি শিশু। বিমানের মডেল-Q8। স্বজনদের ইমার্জেন্সির জন্য ০১৭৭৭-৭৭৭৭৬৬ নম্বরে কল দিতে বলা হয়েছে ইউএস বাংলার পক্ষ থেকে। ইউএস বাংলা’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ বলেন, ‘আটজন মারা গেছেন বলে নিশ্চিত হয়েছি। তাদের নাম ঠিকানা জানা যায়নি এখনও। আহতদের নেপালের চারটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
এদিকে বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক শোকবার্তায় তিনি শোক প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। এছাড়া শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
বিধ্বস্ত বিমানের ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন https://www.youtube.com/watch?v=4e9T4hJUFro&feature=youtu.be
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।