Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বরেন্দ্র অঞ্চলে বেড়ে উঠছে ৩০ লাখ তালগাছ

| প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মো: হায়দার আলী, গোদাগাড়ী, রাজশাহী : তাল গাছ এক পায়ে দাড়িয়ে/ সব গাছ ছাড়িয়ে/ উঁকি মারে আকাশে। ওই দেখা যায় তাল গাছ ওই আমাদের গাঁ কবিতা গুলির মতো রাজশাহী অঞ্চলের রাস্তার দুই পাশে সারি সারি তাল গাছ দাড়িয়ে আকাশে উঁকি মারতে শুরু করেছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীব বৈচিত্র রক্ষায় ভূমিকা রাখে তাল গাছ। বর্ষাকালে প্রচন্ড বিদ্যুৎ চমকায়। মানুষ আতংকিত হয়। বাঁজপড়ে মানুষ মারা যায়। সেজন্য অন্য গাছ বাদ দিয়ে ৩৫ লাখের বেশি তাল গাছের চারা রোপন করেছে বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (বিএমডিএ) বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ। বরেন্দ্র অঞ্চলের রাস্তায় রাস্তায় এখন শোভা পাচ্ছে তাল গাছ। শিশু, আম, জাম গাছের পরিবর্তে শক্ত-মজবুত এবং দীর্ঘজীবি গাছ হওয়ায় ১০ বছর ধরে বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন রাস্তায় লাগানো হচ্ছে তাল গাছ। বিএমডিএ ২০০৮ সাল থেকে প্রকল্পের মাধ্যমে বরেন্দ্র অঞ্চলে রাস্তার দুই পাশে রোপন করেছে কয়েক লাখ তালগাছ। বিএমডিএ তথ্য মতে, ২০০৮ সাল থেকে বরেন্দ্র অঞ্চলে বিভিন্ন রাস্তায় ও খাড়ির পাশে প্রায় ৭২০ কিলোমিটারের বেশি জায়গা জুড়ে রোপন ও বপন করা হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখের বেশি তাল গাছ এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগন সরকারী নির্দেশে তালবীজ বপন করেছেন কয়েক লাখ। বরেন্দ্র অঞ্চল হিসাবে পরিচিত রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, রহনপুর, নওগাঁর পোরশা, নিয়ামতপুর, পত্মীতলা, ধামড়হাট উপজেলার রাস্তার দুই পাশে রোপন করা হয়েছে এসব তালগাছ। রাজশাহীর তানোর উপজেলার দেবিপুর গ্রামের কৃষক ফিরোজ কবির জানান, রাস্তার পাশে তাদের ১৫ থেকে ১৭ বিঘা তিন ফসলি জমি রয়েছে। একযুগ আগে এ রাস্তার পাশে শিশু গাছ ছিল। সে সময় গাছের পাতা লতা ও ছায়া পরে তার জমিতে ফসল অনেক কম হতো। বর্তমানে সে শিশু গাছগুলো কেটে বিএমডিএ রাস্তার পাশে তালগাছ লাগিয়েছে। তালগাছ লাগানোর পর থেকে তার জমিতে পাতালতা পড়ে আর ফসল নষ্ট হয় না। প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম জানান, তাল একটি ওষধি গুনসম্পন্ন ফল। তালের শাঁস খেতেও খুবই সুস্বাধু। তাল গাছ খুবই শক্ত, ঝড়ে ভাঙেনা। ফসলের শেল্টার বেল্ট হিসাবে কাজ করে। ভুমি ক্ষয়রোধ করে। তালপাতা দিয়ে হাতপাখা বানানো যায়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীব বৈচিত্র রক্ষায় ভুমিকা রাখে। তিনি আরো জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে এক সময় গাছপালা খুব কম ছিল। সে সময় গ্রাম গঞ্জে শুধু তাল গাছ চোখে পড়তো। গ্রামের ঐতিহ্য হিসাবে তালগাছকে ধরা হয়। কিন্তু কালের পরির্বতনে তালগাছ বাদ দিয়ে মানুষ শিশুসহ নানা রকম গাছ লাগানো শুরু করে। যেগুলো ছিলো পরিবেশেরও ক্ষতিকর। এসব চিন্তা মাথায় রেখে ২০০৮ সালে বিএমডিএ বরেন্দ্র অঞ্চলে তালবীজ বপনে প্রকল্প গ্রহন করে। তাল গাছ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের সেই ঐতিহ্য ফিরে আসবে পরিবেশবান্ধব হবে বলে জানান এ প্রকৌশলী। রাজশাহী--১ আসনের এমপি, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুুরী এ প্রতিবেদককে জানান, আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মানুষকে তালগাছ লাগানোর জন্য পরামার্শ দিয়েছি, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের তালগাছ লাগানোর জন্য পরামর্শ প্রদান করেছি তারা সে অনুযায়ী কাজ করছেন। কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশও প্রদান করেছি বেশ ভালভাবে গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলার মানুষ লাখ লাখ তালবীজ রোপন করেছেন। আগামীতে এর সুফল পাওয়া যাবে। দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো: আকতারুজ্জামান জানান, সরকারী নির্দেশমতে প্রতি ইউনিয়নে ৫ শ তালবীজ রোপন করার নির্দেশনা ছিল কিন্তু আমি আমার ইউনিয়নের নবাই বটতোলা থেকে কাচারী এবং নিমঘুটু থেকে বর্ষা রাস্তায় ৩ হাজার তালবীজ রোপন করেছি। তিনি আরও জানান, তালগাছ হলে বিজলী পড়ে মানুষের মৃত্যুহার কমে আসবে। পরিবেশ ভাল থাকবে, পাখির আবাস স্থল সৃষ্টি হবে।
রিশিকুল ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম টুলু বলেন, গত বছর আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে রাস্তার ধারে ২ হাজার তালবীজ রোপন করা হয়েছে। এ গুলি বড় হলে জনগন এর সুফল পাবে একদিন। রাজাবাড়ী হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রহমান জানান, বসত বাড়ীর জন্য তালগাছ খুবই উপযোগী, আমি বয়স্ক তালগাছের তীর, রডের পরিবর্তে বাঁশের বাতা দিয়ে ঢালাই করে সিঁড়িসহ দুতলা বাড়ি বানিয়েছি ১৫ বছর হল কোন অসুবিধা হয় না। বাংলাদেশের মাটি তালগাছের জন্য বেশ উপযোগী, পরিবেশের জন্য ভাল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অঞ্চল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ