Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অলি-আউলিয়াগণ কুরআন সুন্নাহর আলোকে জীবন গড়ার উপদেশ দেন

কে.এম শামছুল হক আল মামুন, ফান্দাউক দরবার থেকে | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলাধীন ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের পীর ও বাংলাদেশ আঞ্জুমানে খাদিমুল ইসলামের আমীর আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি শাহ সূফী সৈয়দ সালেহ আহমাদ মামুন আল হোসাইনী বলেছেন, কুরআন সুন্নাহর আলোকে অলি আউলিয়াগণ জীবন গড়ার উপদেশ দিয়েছেন। যুগ যুগ ধরে অলি আউলিগন পথহারা ও দিশেহারা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে কঠোর পরিশ্রম ও সাধনা করেছেন। আল্লাহ ও তার রাসুলের (সাঃ) এর সস্তুষ্টি লাভের জন্য ইবাদত বন্দিগীতে মশগুল থাকতেন। পীরের কাছে বয়াত হওয়া মানে আল্লাহর সন্তুুষ্টি লাভের পথে চলা। বর্তমান ফেতনা ফ্যাসাদের যুগে ঈমান আকিদা রক্ষা করার লক্ষে হক্কানী পীর আউলিয়াদের অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই। সত্যিকারের মুসলমান হতে হলে হক্ক দরবার এবং হক্কানী পীর মাশায়েখের সংস্পর্শে আসতে হবে। ইলমে শরীয়ত ও তরিকতের ময়দানে কঠোর সাধনা করতে হবে। নৈতিক চরিত্র সংশোধনের মাধ্যমে মানব জীবনের চরিত্রে পরিবর্তন আনতে হবে। পৃথিবীর কোথাও শান্তি খুজে পাওয়া যাবে না, যে পর্যন্ত আল্লাহর জিকির প্রত্যেকের অন্তরে জারি না করা যাবে। শিরক্ ও কুফর থেকে বাচঁতে হবে। শিরক্ একটি জঘন্য অপরাধ, ক্ষমার অযোগ্য। তাওবা ছাড়া আল্লাহ শিরক্কারীদের ক্ষমা করবেন না।
পীর সাহেব আরও বলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি লাভ করতে হলে তরিকত পন্থীদের চারটি কাজ নিয়ম মাফিক করতে হবে। যথা, ফাতেহা শরীফ পাঠ, মোরাকাবা মোশাহেদা, দুরুদ ও খতম শরীফ ঠিকমত আদায় করা। একাধারে ৪০ দিন পর্যন্ত তরিকতের কাজ করলে চরিত্রের নৈতিক পরিবর্তন অবশ্যই ঘটবে। এর কোন ব্যতিক্রম হলে, তরিকত বা মা’রিফতের জগতে উন্নতি লাভ করা সম্ভব নয়। ইলমে শরিয়ত ও ইলমে মা’রিফত ছাড়া কোন মানুষ আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে পারবে না। শরিয়তের পাশাপাশি ইলমে মারিফত ও তরিকতের মাধ্যমেই অলি-আউলিয়াদের ফয়েজ, বরকত লাভ করা সম্ভব। শরিয়ত বাদ দিয়ে মারিফত অর্জন করা সম্ভব নয়। পীর ও মাজারে সিজদা করা যাবে না এটা সম্পূর্ন হারাম। মদ, গাজাঁ, গান বাজনাও হারাম। অনৈসলামিক কার্যকলাপ থেকে সকলকে বিরত থাকতে হবে। বেশী বেশী করে নবীর (সাঃ) ওপর দুরুদ ও সালাম পাঠ করলে দিল রৌশন ও অন্তরে নূর ফায়দা হয়। অন্তরে আল্লাহর ভয় ভীতি থাকতে হবে। একমাত্র আল্লাহভীতির মাধ্যমেই মোত্তাকি ও পরহেজগারী অর্জন সম্ভব।
তিনি বলেন, ফান্দাউক দরবার অলি-আউলিয়াদের দরবার, এ দরবারের প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমত রয়েছে। অলিদের সান্নিধ্য লাভের আশায় দরবারের সাথে গভীর সম্পর্ক রাখতে হবে। তিনি ফান্দাউক দরবারের আদর্শ মোতাবেক সকল তরিকত পন্থি ভাই, বোন ও ভক্তবৃন্দের চলার জন্য আহŸান জানান। পীর সাহেব বলেন, আদর্শ ছাড়া বুজুর্গী লাভ করা যায় না। আদর্শ থাকলে বুজুর্গী নষ্ট ও হয় না। সকল কর্মের ফলাফল নির্ভর করে নিয়তের ওপর। মুমিন হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে ধন সম্পদ, পিতা-মাতা, আওলাদ এমনকি নিজের জানের চেয়েও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বেশী মহব্বত ও ভালবাসতে হবে। তিনি গত ৯ মার্চ শুক্রবার ফান্দাউক খেলার মাঠে পীরে কামেলে মোকাম্মেল হযরত শাহ সূফী আলহাজ্ব সৈয়দ আব্দুস সাত্তার নকশেবন্দী মোজাদ্দেদী ফান্দাউকী (রহঃ) ও পীরে কামেলে মোকাম্মেল মোজাদ্দেদে জামান হযরত শাহ সূফী আলহাজ্ব সৈয়দ নাছিরুল হক মাছুম আল ক্বাদরী চিশতি নকশেবন্দী মোজাদ্দেদী ফান্দাউকী (রহঃ) দ্বয়ের কেন্দ্রীয় বার্ষিক ইছালে ছওয়াব মাহফিলের ১ম দিন সভাপতির বয়ানদানকালে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
মাহফিলের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, বাংলাদেশ খাদিমুল ইসলামের নায়েবে আমীর পীরজাদা আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতি শাহ সূফী সৈয়দ মঈনুদ্দিন আহমাদ আল হোসাইনী ও সার্বিক তত্বাবধানে পীরজাদা আলহাজ্ব মাওঃ সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক আল হোসাইনী ও পীরজাদা আলহাজ্ব সৈয়দ বাকের মস্তোফা আল-হোসাইনী এবং উপস্থাপনা করেন, আলহাজ্ব মাওলানা মোশাহিদ হোসাইন, উদ্বোধন করেন, পীরজাদা শাহসূফী সৈয়দ শামছুল হক, ওয়াজ করেন, মাওলানা মীর হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী, মাওলানা আবু হানিফ আনোয়রী, মাওলানা জহিরুল ফরিদী, মাওলানা মুফতি মুতালেব হোসেন সালেহী, মাওলানা মুফতি মাঞ্জুরুল হোসাইনী, মাওলানা ইব্রাহিম সিদ্দিকী, গাজী আব্বাস উদ্দীন, মাওলানা হুমায়ুন কবির, মাওলানা কামাল উদ্দিন আনসারী, মাওলানা মাঞ্জুর হোসাইন মাছুমী প্রমুখ। নাতে রাসূল পরিবেশন করেন ছাত্রমহলে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাওলানা কবির আহমেদ, মাধবপুর উপজেলা শাখা সাংস্কৃতিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মাছুমী প্রমুখ। ফান্দাউক দরবার আয়োজিত দু’দিনব্যাপী ইছালে ছাওয়াব মাহফিল ঘিরে দেশের পূর্বাঞ্চল হবিগঞ্জ ও বি.বাড়ীয়া জেলা নাসিরনগর উপজেলাসহ ফান্দাউকের সর্বত্র উৎসব মূখর হয়ে উঠে। দূর-দূরান্ত থেকে লাখো মুরিদান, আশেকান, ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ ও ভক্তবৃন্দ মাহফিলের অংশ গ্রহনের মধ্য দিয়ে পূর্ণভূমি ফান্দাউক অলি-আউলিয়া প্রেমিক ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এক অভূতপূর্ব মিলনমেলায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভি^র্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ইছালে ছাওয়াব মাহফিলে দেশ বরেন্য বিশিষ্ট চিন্তবীদ, পীর মাশায়েখ ও ওলামায়ে কেরামগন ওয়াজ নছিহত করেন। মাহফিলের শুরুতে শুক্রবার বাদ জুম্মা ফাতেহা শরীফ, খতমে কুরআন, খতমে বোখারী, মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে সভার কাজ শুরু হয়। ১ম দিন দরবারের উন্নতি সাফল্য ও দেশের কল্যান কামনা করে পীর সাহেব সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট মোনাজাত পরিচালনা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুরআন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ