Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জোটের পরিবর্তন হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক রাখা গুরুত্বপূর্ণ

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ভয়েস অব আমেরিকা: পাকিস্তান যখন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার টানাপড়েনের সম্পর্কের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার কারণে কালো তালিকাভুক্ত হওয়া থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করছে, সে সময় আঞ্চলিক জোট পরিবর্তিত হচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্লেষকরা ভাবছেন যে রাশিয়ার মত দেশগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিবেশি আফগানিস্তানে শান্তির প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলবে কিনা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া প্রতিবেশি আফগানিস্তানে ও পাকিস্তানেও ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি এবং খোরাসান প্রদেশ নামে ইসলামিক স্টেটের একটি গ্রæপের সাথে তালিবানের সংঘর্ষে কারণে শংকিত হয়ে ্উঠেছে। এক সময় আফগানিস্তান, ইরান ও মধ্য এশিয়ার অংশ নিয়ে খোরাসান গঠিত ছিল।
সম্পর্ক জোরদারের সর্বশেষ পদক্ষেপে রাশিয়া গত সপ্তাহে পাকিস্তানের খাইবার পাতুনখাওয়া প্রদেশে একজন অনারারি কন্সালের নাম ঘোষণা করেছে। এ প্রদেশটি আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশের সীমান্তে অবস্থিত। ইসলামিক স্টেট সেখানে তাদের সদর দফতর স্থাপন করেছে। আইএস মধ্য এশিয়ার সাথে উত্তর আফগানিস্তানের সীমান্তেও উপস্থিত যা মস্কোর জন্য আরো মাথাব্যথার কারণ।
রাশিয়ার অনারাির কনসাল পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমের এক ক্ষমতাশালী ব্যবসায়ী পরিবারের মানুষ মোহাম্মদ আরশাল্লাহ খান বলেন, উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে সর্বোত্তম অস্ত্র। তিনি বলেন, তিনি এ লক্ষ্যে রাশিয়াসহ পাকিস্তানের প্রতিবেশি দেশগুলোর সােেথ বাণিজ্য বাড়াবেন। রাশিয়ার সাথে বর্তমানে পাকিস্তানের বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০ কোটি ডলার। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে এক সাক্ষাতকারে তার বাণিজ্য ভিত্তিক কৌশলের ব্যাপারে খান বলেন, আমি মনে করি গোটা অঞ্চলটিই বিশৃঙ্খলার শিকার। আপনি যদি জীবিকার অর্থ আয়ের উপায় দেন তাহলে তারা সন্ত্রাসবাদ, উগ্রপন্থা পরিহার করবে।
তার নিয়োগ রাশিয়র সাথে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক সম্পর্কে মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা। ১৯৮০-র দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানের কম্যুনিস্ট মিত্র শাসকের সাহায্যে দেড় লাখ সৈন্য পাঠায়। তখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে একজোট হয় যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান। সে সময় পাকিস্তান পেশাওয়ারকে মুজাহেদিন বা প্রেসিডেন্ট রিগানের ভাষায় আফগান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান থেকে অস্ত্র সরবরাহ করার ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করে। রাশিয়া দশ বছর লড়াই করার পর জয়লাভে ব্যর্থ হয়ে ১৮৮৯ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি আলোচনা ক্রমে আফগানিস্তান ছাড়ে।
কারো কারো মতে, পাকিস্তানের সাথে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের চোখে খোঁচা দেয়া যে কিনা আফগানিস্তানে আগ্রাসনের পর ১৭ বছর ধরে মার্কিন ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। আফগান পুনর্গঠন বিষয়ক মার্কিন বিশেষ ইন্সপেক্টর জেনারেলের মতে, আফগান যুদ্ধে এ পর্যন্ত ব্যয় ১২২ বিলিয়ন ডলারেরও
স্টকগোমে আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিউিটের এক সিনিয়র গবেষক পিটর টোপিচকানভ বলেন, রাশিয়া আফগানিস্তানে মার্কিন উপস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, রাশিয়া আফগানিস্তােেন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দীর্ঘকালীন উপস্থিতির ব্যাপারে উদ্বিগ্ন । সে কারণে রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। পাকিস্তান এ নজর রাখার জায়গা জায়গা দিয়েছে।
জন হপকিন্স বিশ^বিদ্যালয়ের সিনিয়র গবেষণা অধ্যাপক ড্যানিয়েল মার্কি বলেন, পাকিস্তানের সাথে রাশিয়ার সম্পর্কের ব্যাপারে মস্কোর লক্ষ্য হচ্ছে দু’টি। প্রথম, আফগানিস্তান থেকে আইএসের হুমকি নির্মূল করাা, দ্বিতীয়ত, সেখানে মার্কিন প্রভাব খর্ব করা।
তিনি বলেন, আফগানিস্তানের যুদ্ধ বিষয়ে খুব সম্ভবত রাশিয়া ও পাকিস্তান অভিন্ন মত পোষণ করে, কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। আর এটা হচ্ছে পূর্বের ইতিহাসের চেয়ে একেবারে আলাদা।
গত সপ্তাহে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ আফগানিস্তান ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালাতে ব্যর্থতার অভিযোগ করেন।
তার জবাবে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র ক‚টনীতিক অ্যালি ওয়েলস আই্এসের বিরুদ্ধে পূর্ব আফগানিস্তানে ও একই সময়ে বিশেষ করে উত্তর আফগানিস্তানে তাদের নয়া নিরাপদ আশ্রয়েও মার্কিন ও আফগান বাহিনীর অভিযানকে উপেক্ষা করার জন্য রাশিয়াকে অভিযুক্ত করেন। ওয়েলস বলেন, রাশিয়া যদি আফগানিস্তানে যুদ্ধের অবসান চায় তবে তার দ্ব্যর্থহীন ভাবে আফগান সরকারকে সমর্থন দেয়া উচিত।
ওয়াশিংটনের আফগান নীতির মূল বিষয় হচ্ছে কাবুলে ভয়াবহ হামলা চালানোর জন্য্র দায়ী প্রেসিডেন্ট তালিবান যোদ্ধা, বিশেষ করে হাক্কানি নেটওয়ার্কের নিরাপদ আশ্রয় বন্ধ করে দিতে পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করা।
পাকিস্তান তার ভ‚খন্ডে এ সব গ্রæপের আশ্রয় কেন্দ্র থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে। পাকিস্তানের মতে, আফগান বিদ্রোহীরা সে দেশে থাকা ১৫ লাখ আফগান উদ্বাস্তুর মধ্যে থেকে তৎপরতা চালায়। পাকিস্তান আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে তারা পাকিস্তান বিরোধী জঙ্গিদের তাদের ভ‚খন্ডে অবস্থান করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে ও হামলা চালাচ্ছে।
ইউ এস ইনস্টিটিউট অব পিস-এর এশিয়া কর্মসূচি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু ওয়াইলডার বলেন, রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং চীনের বিপুল বিনিয়োগ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একেবারে কোনো সম্পর্ক না থাকার চেয়ে কিছু সম্পর্ক থাকা ভালো।
তিনি বলেন, আফগান নীতির কারণে পাকিস্তান কৌশলগত অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে হারাচ্ছে এবং এককভাবে চীনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এটা পাকিস্তানের পররাষ্ট্র নীতির সাফল্যের ঘটনা নয় এটা বড় রকমের নীতি ব্যর্থতা। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক, এমনকি তা তার বর্তমান দুর্বল অবস্থানে থাকলেও তা অর্থনৈতিক, ক‚টনৈতিক ও নিরাপত্তার স্বার্থে রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের চেয়ে



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ