Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিয়ানমারকে দায় নিতে হবে

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৩ নোবেলজয়ীর সাক্ষাৎ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ‘কাইন্ড মাদার’ হিসেবে বর্ণনা বিএনপি দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে -প্রধানমন্ত্রী
কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরে মিয়ানমার থেকে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সরেজমিন দেখে আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন নোবেল বিজয়ী তিন নারী। গতকাল বুধবার গণভবনে তিন নোবেল জয়ী ইরানের শিরিন এবাদি, ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান এবং যুক্তরাজ্যের মরিয়েড মুগুয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
এ সময় মিয়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের নির্মূল করতে সেদেশের সরকার পরিকল্পিত গণহত্যা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন শান্তিতে নোবেল জয়ী এ তিন নারী। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তারা বলেন, মিয়ানমারকে এর দায় নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম পরে এই বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান।
প্রেস সচিব বলেন, মরিয়েড মুগুয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যা দেখেছেন, তাতে তারা গভীরভাবে শোকাহত। রাখাইনের ঘটনাকে গণহত্যা হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, এরপরও বিশ্ব স¤প্রদায় এখনো কীভাবে নীরব রয়েছে, তাতে তিনি বিস্মিত। মানবিক কারণ দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ায় শেখ হাসিনার প্রশংসা করে তাকে ‘কাইন্ড মাদার’ হিসাবে বর্ণনা করেন ১৯৭৬ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়া মুগুয়ের। বাংলাদেশ সফররত নোবেল বিজয়ী তিন নারী সোম ও মঙ্গলবার কক্সবাজারের উখিয়ায় দুটি আশ্রয় শিবির ঘুরে রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে রাখাইনের গ্রামে গ্রামে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ শোনেন।
আরব বসন্তের দিনগুলোতে ইয়েমেনের বিপ্লবের প্রতীক হয়ে ওঠা সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী তাওয়াক্কুল কারমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে বলেন, রাখাইনে যা ঘটছে, তার দায় মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের যে খবর প্রচার মাধ্যমে আসছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহতা সেখানে ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন নোবেল বিজয়ী এই নারী। আশ্রয়শিবির পরিদর্শনের সময় একশ নারীর সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি শেখ হাসিনাকে বলেন, ওই নারীরা মিয়ানমারে ধর্ষণের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। ক্যাম্পের অধিকাংশ এতিম রোহিঙ্গা শিশুর অভিভাবককে হত্যা করা হয়েছে।
তাওয়াক্কুল কারমান বলেন, এটা জাতিগত নিধনের পরিকল্পিত সরকারি নীতি। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে এর বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে।
২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়া ইরানের শিরিন এবাদি এই গণহত্যার জন্য দায়ীদের আইনের আওয়াতায় আনার কথা বলেন।
সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী নোবেল জয়ী তিনি নারীদের বলেন, সব মিলিয়ে দশ লাখ ৭৮ হাজার রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। প্রতিবেশীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার যাতে ওই চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে নেয়, সেজন্য আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার আহŸান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা গওহর রিজভী ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এডিবি প্রেসিডেন্টের সাক্ষাত
সফররত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রেসিডেন্ট তাকাহিকো নাকাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অসামান্য অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, এশিয়ার একটি অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে এই দেশের এগিয়ে যাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, চীন ও ভারতের মতো এশিয়ার অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক দেশ বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
গতকাল বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এডিবি প্রেসিডেন্ট এসব কথা বলেন।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান।
এডিবি ১৯৭৩ সাল থেকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তাকিহিকো নাকাও বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও সহযোগিতা দিতে তারা প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুৎ, পরিবহন এবং অন্যান্য খাতে কাজ করতে আগ্রহী।
এডিবি প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে তৃণমূল লোকদের উন্নয়ন নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, আমরা চাই জনগণ স্বাচ্ছন্দ্য জীবনযাপন করুক এবং এ জন্য আমরা তাদের জন্য নানা কল্যাণমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।
সরকার শিক্ষার প্রতি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। তিনি বলেন, তার সরকার শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষায় উৎসাহিত করছে।
যানজট সম্পর্কে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সমস্যার সমাধানে সরকার মেট্রোরেল এবং ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
প্রেস সচিব জানান, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গারা কিভাবে স্থানীয় লোকদের এবং কক্সবাজারের পরিবেশের ক্ষতি করছে প্রধানমন্ত্রী সে বিষয় তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আজম এবং এডিবির বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আহমেদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মানুষের খাবার জোগানোর মতো মহৎ কাজ আর হতে পারে না; প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দেয়া, পেটের ক্ষুধা নিবৃত্ত করা, মুখের খাদ্য জোগানোর মতো মহৎ কাজ আর হতে পারে না।
গতকাল বুধবার বিকালে দেশব্যাপী ই-এগ্রিকালচার সেবা স¤প্রসারণে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ‘কৃষি বাতায়ন’ (এগ্রিকালচার পোর্টাল) এবং ‘কৃষক বন্ধু ফোন সেবা’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ দু’টি সেবার উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি একটি পবিত্র কাজ। কৃষকের ছেলে শিক্ষা নিয়ে কৃষিকাজে যাবে না, এ মনোভাব যেন না থাকে। সরকার আইটিভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন এবং জীবন-যাত্রাকে আরও সহজ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কৃষিকে আধুনিক পদ্ধতিতে যান্ত্রিকীকরণ করা হচ্ছে। ফলে কৃষির যে জ্ঞান তারা নিজের বাবা-মায়ের কাছ থেকে পাবেন তাকে ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, কৃষি কাজে সবাইকে সম্পৃক্ত হতে হবে। দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষির ওপর নির্ভরশীল বিধায় জাতির পিতা স্বাধীনতার পরে কৃষিকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। ফলে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ উঠে দাঁড়িয়েছিল এবং প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগ অর্জিত হয়েছিল। ধীরে ধীরে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলাও জাতির পিতার একটা লক্ষ্য ছিল। কিন্তু ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিহত হওয়ায় জাতির পিতা তার এ পদক্ষেপকে সম্পূর্ণ করে যেতে পারেননি এবং এরপরই দেশে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি শুরু হয়।
কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মইনুদ্দীন আব্দুল্লাহ অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) করিব বিন আনোয়ার ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে ৫টি জেলা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল এবং সারা দেশের ৬৪টি জেলার ৫৬০টি উপজেলাতেই এ ভিডিও কনফারেন্সটি প্রচারিত হয়।
শীতকালীন সমাপনী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বিএনপি দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, দূর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যারা দূর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদেরকে কোনও অবস্থাতেই ছাড় দেয়া হবে না। যারাই এসবে জড়িত থাক শাস্তি তাকে পেতেই হবে। আমার দলের লোকও যদি দূর্নীতিতে জড়িত হয় তাকেও শাস্তি পেতে হবে।
গতকাল বুধবার দশম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে আমরা কোনোভাবে প্রশ্রয় দেবো না। আজকে বিএনপি নেত্রীর সাজা হয়েছে। এই মামলা করেছিলো তত্ত¡াবধায়ক সরকার। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে টাকা আসে কিন্তু সেই টাকা এতিমরা পায়নি। সেই টাকা তিনি (খালেদা জিয়া) আত্মসাৎ করেছেন। বিএনপি মামলার আসামিকে দলের নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছে বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায় বের হওয়ার আগেই বিএনপি দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দুর্নীতিবাজদের পদে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। এর মানে দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। তিনি বলেন, যারা গঠনতন্ত্রে দুর্নীতিকে আশ্রয় দেয় আর দুর্নীতিবাজকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করে, তারা জনগণের জন্য কী কাজ করবে? তারা লুটপাট করতে পারবে। মানুষ খুন করতে পারবে। দুর্নীতি করতে পারবে কিন্তু মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারবে না। বিএনপি নেত্রী কারাগারে যাবেন এটা আগেই টের পেয়ে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করছে কিনা- সেই প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত আরেকজনকে দায়িত্ব দিলো, তিনি আবার দেশেও থাকেন না, পলাতক। দেশের ভেতর বিএনপিতে কি একজন লোকও নেই, যে তাকে দায়িত্ব দেয়া যায়? অবশ্য বিএনপির প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই তো দুর্নীতির মামলা রয়েছে। এই যদি রাজনৈতিক দলের অবস্থা হয়। তাহলে সেই দল দেশকে কী দেবে? খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার রায় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এতিমদের জন্য টাকা এসেছিল। সেই অরফানেজটা কোথায়? ২৭ বছর আগে টাকা এসেছে। সেই টাকা নয়-ছয় করেছে। তখনকার আমলে ২ কোটি টাকার মূল্য কত ছিল? ওই টাকায় তখন ধানমন্ডিতে ১০/১২টা ফ্ল্যাট কেনা যেতো। তারা দুই কোটি টাকার লোভ সামলাতে পারলো না। সেই এতিমদের সাহায্য না করে সেই টাকা আত্মসাৎ করলো। আর এখানে আমাদের দোষ কোথায়? এটা খুঁজে দিয়েছে তত্ত¡াবধায়ক সরকার আর মামলা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ১০ বছর ধরে এই মামলা চলে এসেছে। তারপর শাস্তি হয়েছে। সাজা দিয়েছেন তো কোর্ট। এখানে সরকারের কিছু করার নেই। এই টাকা এতিমদের মধ্যে বিলিয়ে দিলে তো এটা হতো না। দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে দাবি করে সংসদ নেতা বলেন, দুর্নীতিকে আমরা প্রশ্রয় দিতে চাই না। আমাদের এমপি-মন্ত্রী কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে, তাদের (দুদকের) যদি সন্দেহ হয়, তাহলে তাদের ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারে। আমরা কোনও হস্তক্ষেপ করি না, করবো না। কারও দুর্নীতি প্রমাণ হলে যে সাজা পারে। কোর্ট আদেশ দিলে আমাদের মন্ত্রীরা সেখানে গিয়ে হাজির হচ্ছে। বিচারের রায় নিয়ে বিএনপির কোনও কোনও নেতা হুমকি দিচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, চোরকে চোর বলিও না, দুর্নীতিবাজকে দুর্নীতিবাজ বলিও না। এটাই শিক্ষা হবে বাংলাদেশে? অপরাধীদের অভয়ারণ্য হবে? তা তো হবে না। আমরা তা চাই না। আমরা বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া চলছে : এদিকে প্রশ্নোত্তর পর্বে বঙ্গবন্ধুর খুনি এবং দন্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের জন্য চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধী ও রাজাকারদের কোনো সম্পত্তি স্বাধীন দেশে থাকতে পারে না, রাখার কোনো অধিকার নেই।’ বঙ্গবন্ধুর খুনি এবং দন্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের নামে-বেনামে থাকা সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রথম ধাপ হিসেবে তাদের সম্পত্তি চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে চায় সরকার : আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে চায় সরকার। পাশাপাশি মিয়াননমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে কূটনৈতিক উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চুক্তি স্বাক্ষর হলেও এতে সময় লাগার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যে কোনো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘ মেয়াদী। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চার মাসের মধ্যে তিনটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে শিগগিরই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
বিদ্যুতের ক্ষমতা ক্যাপটিভসহ ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াটে উন্নীত : আলী আজমের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুতের স্থাপিত স্থাপিত ক্ষমতা প্রায় তিন গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ক্যাপটিভসহ ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে নিবিড় তদারকির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ১৪ হাজার ৪১৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে। এছাড়া আরো ২০ হাজার ৭৩২ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, ৪ হাজার ৫৬৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে।
ইলিশের আশাতীত উৎপাদন : শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ইলিশের আশাতীত উৎপাদনের ফলে উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯৬ হাজার মে. টনে যা মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ। অন্যদিকে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ১৩ হাজার মে. টন। তিনি বলেন, জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকরা ছাড়াও গত অর্থবছরে মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালীন ২২ দিনের জন্য পরিবার প্রতি ২০ কেজি হারে মোট ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৭২৩টি পরিবারকে মোট ৭ হাজার ১৩৪ মে. টন ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
শেষ হলো শীতকালীন অধিবেশন \ শেষ হলো শীতকালীন দশম সংসদের ১৯তম অধিবেশন। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি বছরের প্রথম এই অধিবেশন শুরু হয়। এতে প্রেসিডেন্টে মো. আবদুল হামিদ বক্তব্য রাখেন। পুরো অধিবেশন জুড়ে তার ভাষণের ওপর সংসদ সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেন। অধিবেশন শেষ হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ সমাপনী ভাষণ দেন। পরে সন্ধ্যা ৬টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশন শেষ সংক্রান্ত প্রেসিডেন্টের আদেশ পড়ে শোনান। সমাপনী বক্তব্যে স্পিকার জানান, এবারের অধিবেশনে ৩৫টি কার্যদিবসে ১৫টি বিল পাস হয়েছে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা হয়েছে ৬৪ ঘণ্টা ৯ মিনিট। এতে সরকার ও বিরোধী দলের ২৩৩ জন এমপি অংশ নেন। এছাড়া কার্যপ্রণালি বিধির ৭১ বিধিতে ২০৪টি নোটিশ পাওয়া যায়। যার মধ্যে ১৮টি গৃহীত এবং ১১টি নোটিশ আলোচিত হয়। একই সঙ্গে একাত্তরের ‘ক’ বিধিতে ৩৭টি নোটিশ নিয়ে আলোচনা হয়। অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দেয়ার জন্য ২১৩টি প্রশ্ন পাওয়া যায়। যার মধ্যে ৮৮টি প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের উত্তর দেয়ার জন্য ৩ হাজার ২৫৮টি প্রশ্ন পাওয়া যায়। যার মধ্যে মন্ত্রীরা জবাব দেন ২ হাজার ২৫৮টি প্রশ্নের।



 

Show all comments
  • শুকুর আলী ১ মার্চ, ২০১৮, ১:২০ পিএম says : 0
    অবশ্যই দায় নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আবির ১ মার্চ, ২০১৮, ১:২১ পিএম says : 0
    মিয়ানমার কি বাংলাদেশ নাকি যে স্টুপিডিটি তাদের মজ্জাগত
    Total Reply(0) Reply
  • James sentu joydhor ১ মার্চ, ২০১৮, ১:২১ পিএম says : 0
    সারা বিশ্বে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলেতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • গনতন্ত্র ১ মার্চ, ২০১৮, ১:২২ পিএম says : 0
    সরকার মিয়ানমার ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে বিদেশে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করছে এবং নির্বাচনী ফায়দা উঠাতে চেচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ