দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
আল্লাহ বলেন, ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছ। তোমরা অধিকাংশ অনুমান থেকে বিরত থাক। কেননা অনুমান কোন ক্ষেত্রে পাপ স্বরূপ। ১৮। লেখনীর মাধ্যমে গীবত ঃ লেখনী তথা সাংবাদিকতার মাধ্যমে গীবত করা হয়। যেমন কেউ যদি কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সংবাদপত্রের রিপোর্ট করে কিংবা বই পুস্তকে অপরের দোষ-ত্রæটি তুলে ধরে তাও গীবত হবে। কেননা এর দ্বারা অপরকে ছোট করাই উদ্দেশ্য। আর ইসলাম এসব সমর্থন করে না। ১৯। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে গীবত চর্চা ঃ আমরা যারা বিভিন্ন প্রশাসনের অধীনে কাজ করি একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাব প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী কম বেশি গীবত বা পরের দোষ চর্চার সাথে জড়িত। কেউ ইচ্ছা করে অজ্ঞতা বশত: গীবত করছি আবার কেউ অনিচ্ছায় অজ্ঞাতসারেই গীবত করছি। আমরা পরস্পর দোষ-ত্রæটি সহ্যই করতে পারি না। কর্মস্থল থেকে বেরিয়ে বাসায় যতক্ষণ থাকি তার প্রায় অধিকাংশ সময়ই আমরা কারো না কারো গীবত করে থাকি। আর গীবতের ব্যাপারটি এমন যে, মনে হয় এটা বলা কোন পাপ নয়, অথবা এটা তার দায়িত্ব-কর্তব্যের একটি অপরিহার্য্য অংশ। সমাজে এমনও রেওয়াজ লক্ষ্য করা যায় যে, ততবেশি সহকর্মী অথবা অধীনস্থদের সমালোচনা বা গীবত করতে পারেন সে তত বেশি দক্ষ দায়িত্বশীল। অথচ গীবত করতে গিয়ে আমরা নিজের কর্তব্যে অবহেলা করি, ভুলে যাই আমাদের দায়িত্ববোধের কথা। গীবত না করলে পরকালে কেউ জিজ্ঞাসিত হবেন না। অথচ কেউ যদি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে তবে অবশ্যই সে ব্যক্তি পরকালে জিজ্ঞাসিত হবেন। রাসূল (সা:) বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার কর্তব্য সম্পর্কে পরকালে জিজ্ঞাসা করা হবে। ২০। জাতীয় পর্যায়ে গীবত চর্চা ঃ গীবত আজ আর ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রত্যেকটি স্তরে গীবতের কম বেশি চর্চা হচ্ছে। আর গীবত চর্চাকে মনে করা হয় যোগ্যতা কিংবা সফলতার মাপকাঠি। রাজনীতিতে গীবতের চর্চা এমনভাবে মিশে গেছে, আজ আমরা কেউ এটাকে অন্যায় বা পাপের বিষয় মনে করি না। এটা আমাদের কর্তব্যের একটি বড় অংশ মনে করি। গীবত চর্চা বেশ আগে থেকেই চলে আসছে বর্তমানে তা জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। অথচ রাসূল (সা:) হলেন বিশ্বমানবতার আদর্শের মূর্ত প্রতীক। তিনি মদিনার ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন, মদিনার জনগণের মাঝে রাষ্ট্র পরিচালনার সঠিক দিক নির্দেশনা দিতেন, জাতি ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে তাকে সকলেই সমর্থন করেছিল। কিন্তু তিনি তো কারো গীবত করেননি। আর এ কারণেই তিনি ঘোষণা করতে পেরেছেন গীবত বা পরের দোষ চর্চা করা যিনা-ব্যভিচারের চেয়েও একটি মারাত্মক অপরাধ। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কিরূপে? তিনি বললেন, এক ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তওবা করলে তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়, কিন্তু যে গীবত করে তার গুণাহ প্রতিপক্ষের মাফ না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।
সমাজ জীবনে গীবতের প্রভাব ঃ গীবত বা পরের দোষ চর্চা সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ ও যাবতীয় অশান্তির দাবানল সৃষ্টি করে। গীবত পারস্পরিক বিশ্বাস আস্থা ও সংহতি হারিয়ে সমাজে অবিশ্বাস, হিংসা এবং জিঘাংসার জন্ম দেয় এতে জাতীয় সংহতি বিনষ্ট হয়। মানুষের অন্তরে অপরের প্রতি সন্দেহ ও অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়। ভালবাসা, প্রেম-প্রীতি ও পারস্পরিক সৌহার্দবোধ বিলুপ্ত হয়। ফলে সমাজ জীবনে নেমে আসে জাহান্নামের অশান্তি। কুরআন ও হাদীসের আলোকে গীবতের ভয়াবহ পরিণাম নিম্নরূপঃ
১। দোয়া কবুল হয় না ঃ যে ব্যক্তি সব সময় গীবতে লিপ্ত থাকে তার দু’আ কবুল হয় না। কেননা সে খুবই কম অনুতপ্ত হয়। লোকেরা ইবরাহীম ইবন আদহাম-এর কাছে এই মর্মে অভিযোগ করলো যে দু’আ করছে কিন্তু কবুল হচ্ছে না, এর কারণ কী? তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আটটি দোষ রয়েছে। [এর মধ্যে একটি গীবত] ফলে অন্তরের সজীবতা নষ্ট হয়ে গেছে, তাই তোমাদের দু’আ কবুল হচ্ছে না। ২। নেক আমল বিনষ্ট হয় ঃ বিশিষ্ট সাহাবী আবু উমামা আল বাহিনী (রা:) থেকে বর্ণিত আছে যে, কিয়ামতের দিন কোন ব্যক্তি তার আমলনামায় তার কোন আমল লিপিবদ্ধ না দেখে জিজ্ঞেস করবে, হে আল্লাহ! আমি তো দুনিয়ার জীবনে অমুক অমুক নেক আমল করেছি অথচ তা আমার আমলনামায় দেখতে পাচ্ছি না। আল্লাহ বলবেন, তুমি অমুক অমুক ব্যক্তির গীবত করেছো, তাই তোমার আমলনামা থেকে তা বিয়োগ করে তুমি যার গীবত করেছো তার আমল নামায় যোগ করে দিয়েছি। মহানবী (সা:) বলেছেন, বান্দার নেক আমল গীবতের দ্বারা যত দ্রæত নষ্ট হয়ে যায় আগুনও তত দ্রæত শুকনা বস্তু ধ্বংস করতে পারে না। ৩। অসৎ কাজের পরিণাম বেড়ে যায় ঃ মহানবী (সা:) বলেছেন, সাবধান তোমরা গীবত থেকে দূরে থাক। কারণ গীবতের মধ্যে তিনটি বিপদ রয়েছে। গীবতকারীর দু’আ কবুল হয় না, তার সৎ কাজ সমূহও কবুল হয় না এবং তার আমলনামায় তার পাপ বর্ধিত হতে থাকে। ৪। রোযার সওয়াব নষ্ট হয় ঃ দুই রোযাদার ব্যক্তি রাসূল (সা:) এর সাথে যুহর ও আসরের নামায আদায় করলো। আসরের নামাযের পর তিনি তাদের বললেন, তোমরা উভয়ে উযু করে যুহর ও আসরের নামায পুনরায় পড়ে নাও এবং রোযারও কাযা করো। তারা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্য এই হুকুম কেন? রাসূল (সা:) বললেন, তোমরা রোযা অবস্থায় গীবত করেছ। মানুষ বিভিন্ন কারণে অপরের দোষ চর্চায় লিপ্ত হয়। এর মধ্যে আটটি কারণ এমন যা সর্ব সাধারণের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং তিনটি কারণ এমন যা উচ্চ পর্যায়ের দীনদার ব্যক্তিদের সাথে সংশ্লিষ্ট। সর্বসাধারণের আটটি হলো ঃ ১. ক্রোধের বশবর্তী হয়ে মনের সাময়িক ক্ষোভ মেটানোর জন্য; ২. অন্যের দেখাদেখি তথা অন্যের সাথে তাল মিলানোর জন্য; ৩. পরিণাম চিন্তার বশবর্তী হয়ে; ৪. কোন দোষ থেকে মুক্ত থাকার উদ্দেশ্যে; ৫. অহংকার, গর্ব ও ঔদ্ধত্যের কারণে; ৬. ব্যক্তি প্রতিহিংসা পরায়ণ হলে; ৭. হাসি তামাশা তথা ঠাট্টাচ্ছলে; ৮. অন্যকে অবজ্ঞা তথা তুচ্ছজ্ঞানার্থে।
(চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।