Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ওয়াজে বিতর্কিত বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ

মাদরাসার ছাত্র নিহত, অর্ধশতাধিক আহত, ৪৫টি বাড়ি-ঘরে হামলা

| প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সিলেট ব্যুরো: সিলেটের জৈন্তাপুরে ওয়াজ বির্তকিত বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন একছাত্র । গুরুতর আহত ৩ জনসহ আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। হামলায় নিহত মোজাম্মেল হোসেন হরিপুর মাদ্রাসা শিক্ষার্থী । এছাড়া আশংকাজনল অবস্থায় হাসপাতলে জীবন মৃত্যুরে সন্ধিক্ষনে রয়েছেন আব্দুল কাদির নামের এক মাদ্রাসা ছাত্র। সোমবার রাত ১১টায় এ সংঘর্ষে গুরুত্বর আহত ৩জনকে ্ওসমানী ্ও বাকীদের জৈন্তাপুর হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। এ পর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয় আমবাড়ি, ঝিঙ্গাবাড়ি ও কাঁঠাল বাড়ি নামের তিনটি গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে। ভোররাত ৪টা পর্যন্ত সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা দায়ের হয়নি। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে
সূত্র জানায়, স্থানীয় বাংলাবাজার আমবাড়ি এলাকায় ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে কথিত সুন্নী মর্তাদশের দাবীদার বির্তকিত ভন্ডপীরের অনুসারীরা। তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ওয়াজ মাহফিলে আমন্ত্রন জানায় স্থানীয় দারুল উলূম হরিপুর মাদ্রাসার মুহাদ্দীস আব্দুস সালাম জৈন্তাপুরীকে। দাওয়াত পেয়ে তিনি ্ওয়াজি মাহফিলে হাজির হন একাধিক সঙ্গী সহকর্মী ও শিক্ষার্থী সহ। ওয়াজের এক পর্যায়ে জনৈক বক্তা বলেন,‘ যারা রাসুল (সা:) নূরের তৈরী স্বীকার করে না তারা কাফের।’ এহেন বক্তব্যে আপত্তিকর বলে তৎক্ষনাৎ প্রতিবাদী হন ম্ওালানা আব্দুস সালাম। এসময় তার উপর অতর্কিত হামলা চালান ওয়াজ মাহফিলের আয়োজক সংশ্লিষ্টরা। একতরফা হামলার ঘটনায় কোনটাসা হয়ে পড়েন আব্দুস সালাম ও তার সঙ্গীরা। পরবর্তীতে এ হামলার পাল্ট জবাব দিতে এগিয়ে আসনে মাওলানা আব্দুস সালামের সমর্থকরা। উভয় পক্ষের হামলা-পাল্ট-হামলা মুর্হুতে ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। সংঘর্ষে অংশ নেয় হাজার হাজার লোক। অবরোধ করা হয় সিলেট-তামাবিল সড়ক। রাতেই হামলা করা হয় প্রায় ৪৫টি বাড়ি ঘরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিতে স্থানীয় পুলিশের পাশাপাশি অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়ন করা হয়। গতকাল এর আগে মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার ও পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে। তাদের সাথে ছিলেন এডিসি (সার্বিক) শহিদুল ইসলাম, জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌরীন করিমসহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। এসময় ক্ষতিগ্রস্থ ৪৫টি বাড়ির তালিকা সহ ভূক্তভোগী লোকদের প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহের উদ্যোগও নেওয়া হয়।। জৈন্তাপুর থানার ওসি খান মোহাম্মদ মঈনুল জাকির জানিয়েছেন, পরিস্থিতি পুলিশের সম্পুর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এদিকে এ ঘটনা নিয়ে গতকাল রাতে স্থানীয় ১৭ পরগনার সালিশীয়ানদের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। স্থাণীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এখলাছুর রহমান বলেন, বিগত কয়েক বছর থেকে ওয়াজ মাহফিল নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। এদিকে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য উপজেলা প্রশাসন পর্যায়ে একাধিক বৈঠক হলেও নিষ্পত্তি হয়নি। জলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার বলেন, সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে এডিসিকে (সার্বিক) প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দেওয়া হয়েছে সহায়তা। ঘটনার সাথে যে কেউ জড়িত থাকুক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া ঘটনার প্রতিবাদে নগরীতে মিছিল সমাবেশ করে কথিত সুন্নী দাবীদারদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষে ন্ওেয়ার দাবী জানিয়েছে একাধিক সংগঠন। গতকাল দেশের ঐতিহ্যবাহী জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজিরবাজার মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক এক মিছিল সমাবেশ করে জৈন্তাপুরে ভন্ড সন্ত্রাসীদের হাতে আলেম-উলামা ও নিরীহ মাদরাসার ছাত্রদের নির্যাতন এবং হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত খুনিদের গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন। প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবীবুর রহমানের আহবানে নগরীতে এক বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে এ দাবী তুলেন। বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তারা বলেন, কওমী আলেম উলামা শান্তিপ্রিয় তাদের অশান্ত করলে দেশবাসী তা বরদাশত করবেনা। জামিয়া মাদানিয়া কাজিরবাজার মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদের সভাপতিত্বে ও ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা সামিউর রহমান মুসার পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রনেতা মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সিরাজী, মাওলানা এমরান আলম, মাওলানা মুশফিকুর রহমান মামুন, মাওলানা মোশাররফ হোসেন, মাওলানা ফাহাদ আমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা মুজাহিদ হাসান, মাওলানা আব্দুল আউয়াল হাসান, ছাত্রনেতা তারিক বিন হাবিব, নূর আহমদ সুমন, মাহদী হাসান জামাল, জি.এস ইকরামুল হক জুনাঈদ, মনছুর আহমদ, মাহফুজ মাহি, ফরিদ উদ্দিন, মিজানুর রহমান, শাহ মিছবাহ, আবু আনাছ, আব্দুল মালেক কয়েছ প্রমুখ। এদিকে একই দাবীতে নগরীতে মিছিল সামাবেশ করেছেন ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ সিলেট জেলা শাখা। মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কোর্ট পয়েন্টে এক পথ সভায় মিলিত হয়। জেলা ছাত্র জমিয়তের সভাপতি এম সাইফুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উদ্দীনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা জমিয়তের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নজরুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন মহানগর যুগ্ম সম্পাদক মাওলাননা সিরাজুল ইসলাম, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা জমিয়তের সভাপতি মাওলানা শরিফ আহমদ শাহান, মহানগর জমিয়ত নেতা সালেহ আহমদ শাহবাগী, কবির আহমদ, যুবনেতা আব্দুর রব, কাওসার আহমদ, আবু সুফিয়ান, মহানগর ছাত্র জমিয়ত সভাপতি লুৎফুর রাহমান, জেলা সাবেক সহ সভাপতি এমাদ উদ্দীন সালিম, সহ সভাপতি আব্দুল হামিদ খান, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন, এম সি কলেজ ছাত্র জমিয়ত সেক্রেটারী হাবিবুর রাহমান প্রমুখ।



 

Show all comments
  • মুহাম্মদ বশির উল্লাহ ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৯:২৮ এএম says : 0
    এতে মুসলমানদেরই ক্ষতি। যা কামনা নয়। ইসলাম কখনো এ ধরনের হটকারিতা পছন্দ করে না। সবাইকে শান্ত ও ধৈর্যশীল হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Karim ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৯:৪৬ এএম says : 0
    এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত
    Total Reply(0) Reply
  • শামিম ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৯:৪৯ এএম says : 0
    এদের দুই পক্ষকেই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • নীপা ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৯:৪৯ এএম says : 0
    ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি কাম্য নয়
    Total Reply(0) Reply
  • saif ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৯:৫৬ এএম says : 0
    হায়রে মুসলমান, আল্লাহ আমাদের যদি হেদায়েত ন দেন তবে মুক্তির কোন উপায় নেই,
    Total Reply(0) Reply
  • parvez ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১১:০৫ এএম says : 0
    জনৈক বক্তা বলেন,‘ যারা রাসুল (সা:) নূরের তৈরী স্বীকার করে না তারা কাফের।’ বক্তার এই কথার জন্য হাঙ্গামা হয়েছে। সুতরাং প্ররোচনা দাতা হিসাবে তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • Nur ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:৩৫ পিএম says : 0
    Namaj ruja korena tar was nai ehudi nasarar sokrante musolman eipat o ondo alim der tandob bondo kore dik gov : valo hobe.এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন
    Total Reply(0) Reply
  • ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৫:৪৬ পিএম says : 0
    ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি উচিত নয়। কিন্তু এখানেতো তা নয়। এখানে হচ্ছে: এক মতাদর্শের মানুষ অন্য মতাদর্শের বক্তাকে দাওয়াত দেয়া। এটাই মূল সমস্যা। দাওয়াত দাতাদের উদ্দেশ্যই ছিল দাঙ্গা, হাঙ্গামা।
    Total Reply(0) Reply
  • ২ মার্চ, ২০১৮, ১১:৫৮ এএম says : 0
    Total Reply(0) Reply
  • রিয়াজ ৬ মার্চ, ২০১৮, ৫:৩২ পিএম says : 0
    মুসলমানদের এহেন দূর্দিনে মুসলমানদের গৃহযুদ্ধ কাফের দেরকেই শক্তিশালী করবে।তাই মুসলমান হিসেবে আমাদের কর্তব্য হল পারস্পরিক দলিয় সব বিবেধ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া আল্লাহু আমাদেরকে তাওফিক দিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সংঘর্ষ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ