পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সোনাকান্দা থেকে মোঃ ছলিম উল্লাহ খান : সোনাকান্দা দরবার শরীফের বার্ষিক ইছালে ছাওয়াবের মাহফিলের দ্বিতীয় দিনে আখেরী মোনাজাতকে কেন্দ্র করে গোটা সোনাকান্দার ময়দান লাখ লাখ লোকে লোকারণ্য। দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই মাহফিলে দরবারের ভক্ত মুরীদীন ও সালেকীনদের উপস্থিতিতে সোনাকান্দা দরবার শরীফের মাঠসমূহ কার্যতঃ সর্বস্তরের জনগণ, আশেকিন ও জাকেরীনদের মহাসমাবেশে পরিণত হয়েছে। অলি-গলি, রাস্তা-ঘাট ও সকল প্রকার যানবাহনগুলোয় মানুষের উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। আশ-পাশের এলাকাসমূহে স্থানীয়দের বাড়ি ঘরগুলো আত্মীয় স্বজন দ্বারা ভরপুর দেখা গেছে। চতুর্দিকের জনস্রোত এসে দরবার ময়দানে মিশে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন ছাড়াও আশ-পাশের বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লীর উপস্থিতিতে এই মাহফিল কার্যতঃ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের রূপ ধারণ করেছে। বাদ ফজর মাসনূন তরীকায় তালিম-তাওয়াজ্জুহ ও নফি-ইছবাত এবং আল্লাহ আল্লাহ জিকিরের ধ্বনিতে বেহেশতী আমেজে গোটা এলাকায় ভাব-গম্ভীর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
দ্বীন ও দুনিয়ার কল্যাণের নসীহত প্রদান করতে গিয়ে দরবারের পীর ও বাংলাদেশ তালীমে হিযবুল্লাহর আমীর আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে যারা ইসলাম দরদী বা যত পার্টি রয়েছে আমরা সবাই যদি যার যার নিজস্ব পদ্ধতি বাদ দিয়ে কুরআন-সুন্নাহর পদ্ধতিতে দ্বীন ইসলাম কায়েম করার চেষ্টা করতাম তাহলে এদেশে বহু আগে থেকেই ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়ে যেত। সমাজে হক্ব-ইনসাফ ও ন্যায়-নীতির চর্চা বেড়ে যেত। বাংলাদেশ তা’লিমে হিযবুল্লাহ একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কেবলমাত্র বিপথগামী মানুষকে সঠিক পথের দিশা দানের জন্য। আমাদেরকে অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন এই সংগঠন অরাজনৈতিক কেন? আবার অনেকে আমাদেরকে অপব্যাখ্যা করে বলে থাকেন, যেসব পীরেরা রাজনীতি করে না তারা কাফির। আবার কেউ কেউ বলেন, হক্ব কথা বললে আমাদের হালুয়া-রুটি নষ্ট হয়ে যাবে এজন্য আমরা রাজনীতি করি না। আমরা বলতে চাই, হালুয়া-রুটি নষ্ট হওয়ার ভয়ে আমরা অপরাজনীতি করি না। জেনে রাখুন এই প্রচলিত অপরাজনীতিকে আমরা জঘন্যতম হারাম মনে করি। কারণ যে রাজনীতি করতে গিয়ে আপনি রিকশা ভাঙবেন, গাড়ি ভাঙচুর করবেন সেই রিকশাওয়ালা ও গাড়িওয়ালার কী অপরাধ? হাশরের ময়দানে আমাদের জীবনের সমস্ত নেকীগুলো ঐ রিকশাওয়ালা ও গাড়ীওয়ালাকে দিয়ে দিতে হবে এবং তাদের সমস্ত পাপ আমাদেরকেই বহন করতে হবে। রিকশাওয়ালা ও গাড়ীওয়ালা জান্নাতে চলে যাবে আর আমাদেরকে যেতে হবে জাহান্নামে। পীর সাহেব বলেন, ঈমানের সর্বোচ্চ পর্যায় হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বা আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ বা প্রভু নেই এই স্বীকৃতি দেয়া এবং সর্বনিম্ন পর্যায় হল জনচলাচলের পথ বা রাস্তা থেকে কষ্টকর বস্তু সরিয়ে দেয়া। ইসলামে যেখানে জনচলাচলের রাস্তাকে খুলে দেয়ার কথা বলা হয়েছে সেখানে কেন জনপথকে বন্ধ করা হবে? জনসাধারণের কল্যাণের পরিবর্তে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে হুমকীর মুখে ফেলে দেয়া ইসলামে হারাম। আজকে আমাদের যুব সমাজ প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। মদ-গাঁজা এবং বিভিন্ন মাদক ট্যাবলেটের চর্চা আমাদের সমাজে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। একজন স্বনামধন্য ডাক্তার পত্রিকায় প্রকাশিত তার একটি ফিচারে মন্তব্য লিখতে গিয়ে বলেন- যুবসমাজে যেভাবে মাদকের ব্যবহার চলছে এভাবে চলতে থাকলে আগামী দশ বছর পরে যুব সমাজের আর বিবাহের প্রয়োজন হবে না। দিন দিন ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে সরলমনা মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে একদিকে যেমন সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা ও সৌহার্দ্য বিঘিœত হয় অপরদিকে জাতীয় নিরাপত্তাও অরক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
আমার মরহুম দাদা হুজুর ও আব্বাজান (রহিমাহুমাল্লাহু) ছিলেন নফস মুর্দা পীর। অত্যন্ত বিনয়ী, মহানুভব, বলিষ্ঠ চরিত্র ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। এ বুযুর্গ সাধকদ্বয় তাদের নফস আম্মারা তথা কুরিপুসমূহকে কঠোরভাবে দমন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তারা তাদের মুরীদদেরকে অত্যন্ত যতœসহকারে এই শিক্ষা প্রদান করতেন। হাক্কানী পীর-মাশায়েখরা নবীজির তরীক্বা অনুযায়ী ইসলাম প্রচার করেন। হালুয়া-রুটি পাওয়ার লোভে বা বন্ধ হওয়ার ভয়ে তারা থাকে না। মাহফিলে দান-সদকাহ’র ফযীলত, হালাল ও হারাম, জালিয়াতির কবলে হাদীস, ইসলামে তাসাওউফের অস্তিত্ব ও গুরুত্ব, যিকির একটি পূর্ণাঙ্গ ইবাদত ও এর গুরুত্ব, বিশ^জনীন সংবিধান মহাগ্রন্থ আল কুরআন, তাহারাত ও সালাত প্রভৃতি বিষয়ে বক্তব্য রাখেন মাওলানা আবু বকর ছিদ্দিক রহমানী, মুফাসসির ড. আবু ছালেহ পাটোয়ারী, ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা বেলাল হোসাইন আফসারী, মুহাদ্দিছ মাওলানা মোতালিব হোসাইন ছালেহী, মুহাদ্দিছ মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন আজীজি, মুফাসসির রফিকুল ইসলাম যশোরী, মাওলানা হুমায়ূন কবির আযাদী ও মুহাদ্দিছ মাওলানা মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।