মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
তারা স্থান, কাল ও পাত্র না দেখে যত্রতত্র প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে ফেলছে। প্রকাশ্যে জনসমক্ষে নির্লজ্জের মতো প্র¯্রাব-পায়খানা করছে। সতর ও ফরজ তরকের প্রতিও ভ্রƒক্ষেপ করছে না। এটা যে খুব দায়ে পড়ে করছে এমনও নয়, তবুও করছে। ফসলি ক্ষেতে, ছায়াযুক্ত গাছের নিচে, নদীর ঘাটে, চলাচলের রাস্তায় ও পানিতে প্র¯্রাব-পায়খানা করে রাখছে। গ্রামের হাটে, বাজারে ও মহাসড়কের পাশে মলমূত্র ত্যাগ করছে। শহরের স্টেশনে, ফুটপাত, ফুটওভার ব্রিজের পাশে এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন গলি-পাড়ায় স্থান সঙ্কুলানে ও অযতেœ রাখা টয়লেটে বেশ নির্লজ্জের মতো সারছে প্রাকৃতিক ওই কাজটি। অথচ নির্লজ্জতার জন্য বলা হয়েছে, ‘লজ্জাশীলতা না থাকলে তুমি যা ইচ্ছা করতে পারবে।’ অবশ্য এ নির্লজ্জতার খেসারত তাকে দিতে হবে। এ ব্যাপারে আল্লাহতায়ালাও শাস্তি বিধান করতে দ্বিধা ও লজ্জাবোধ করেন না। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ সত্য কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন না।’ (সূরা আহজাব : ৫৩)
বর্তমানে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের মোক্ষম সময়েও মানুষ অবাধে রাস্তার পাশে প্র¯্রাব করছে। ক্ষেত্রবিশেষে পায়খানা করতেও তাদের বাধছে না। যার দুর্গন্ধে মানুষের যাতায়াত কষ্টকর হয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, ওই প্র¯্রাব দেয়ালের কিনারা থেকে মূল রাস্তায় চলে আসছে। বিকল্প পথ না থাকায় মানুষ দেখে বা না দেখে তা পাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে মানুষের চলাচল। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। রোগ-জীবাণু ও দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। রোগাক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এ জন্যই মানবতার নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পানির ঘাটে, রাস্তার মাঝে এবং বৃক্ষের ছায়ায় মলত্যাগ থেকে বিরত থাকবে।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)। স্থির পানি বা বদ্ধ জলাশয়ে পায়খানা-প্র¯্রাব করা একেবারেই অনুচিত। বদ্ধ জলাশয়ে প্র¯্রাব-পায়খানা করলে তাতে রোগজীবাণু জন্ম নেয়। ফলে গোসলের সময় ওই পানি মুখে, নাকে, চোখে প্রবেশ করে নাক, মুখ, চোখ, খাদ্যনালি ও শ্বাসনালিতে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করতে পারে। চর্মে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জির সৃষ্টি হতে পারে। এ প্রসঙ্গে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন স্থির পানিতে প্র¯্রাব না করে এবং এরপর ওখানে গোসল না করে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
ভোরবেলায় শহরের বাসস্ট্যান্ডগুলোতে, মহাসড়কের পাশে, দেয়াল ঘেঁষে অনাকাক্সিক্ষতভাবে এসব নোংরা কাজের আলামত চোখে পড়ে। রেলস্টেশনের আশপাশে, প্লাটফর্মে এসব কষ্টকর দৃশ্য মানুষকে দেখতে হয়। এসব কার্যকলাপ নিঃসন্দেহে গর্হিত এবং শিষ্টাচার বিবর্জিত । মুসলিম শরিফে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমার কাছে আমার উম্মতের ভালোমন্দ সব আমলের ফিরিস্তি পেশ করা হয়েছিল। আমি ভালো কাজসমূহের তালিকার মধ্যে রাস্তা থেকে অপসারিত কষ্টকর বস্তুকে দেখতে পেয়েছি এবং মন্দ কাজসমূহের তালিকার মধ্যে দেখতে পেয়েছি মসজিদে নাকের ময়লা নিক্ষেপ করা, যা সেখান থেকে মুছে ফেলা না হয়।’ এই হাদিস দ্বারা সুস্পষ্ট হয়েছে, সামান্য নাকের ময়লা ঝাড়া এবং রাস্তা থেকে কষ্টকর যে কোনো বস্তু অপসারিত করার ব্যাপারেই ইসলাম কত সতর্ক। অথচ আমরা আজ কত নিচে নেমেছি যে, মানুষ চলাচলের পথে অবাধে প্র¯্রাব-পায়খানা করতে দ্বিধা করছি না। রাস্তা থেকে কষ্টকর বস্তু অপসারণ তো দূরে থাক, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যেন পরিবেশ বিপন্ন করছি। অথচ একজন সুস্থ মস্তিষ্কের ব্যক্তি যত্রতত্র মলত্যাগ করতে পারে না। এ ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ঈমানের সত্তরের চেয়ে অধিক শাখা রয়েছে। এর মধ্যে উত্তম শাখা হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ কালেমা পাট করা এবং ক্ষুদ্রতম শাখা হচ্ছে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। (বোখারি ও মুসলিম)।
অনেক ইট, পাথর, দেয়াল, শক্ত মাটি কিংবা প্রবল বাতাসের দিকে খুব আয়েশে প্র¯্রাব করেন। ফলশ্রুতিতে বাতাসে কিংবা ওই শক্ত বস্তু থেকে প্র¯্রাবের ছিটা নিজের শরীরে ফিরে আসে। অনেকে আবার দাঁড়িয়েই সেরে নিচ্ছে প্র¯্রাবের কাজটি। অথচ একান্ত ওজর ব্যতীত এমনটি করা ঠিক নয়। যেখানে বসে প্র¯্রাব করলে ময়লা লাগার কিংবা প্র¯্রাবের ছিটা লাগার সন্দেহ থাকে এমন স্থান ব্যতীত রাসূলুল্লাহ (সা.) দাঁড়িয়ে প্র¯্রাব করা থেকে বারণ করেছেন।
এ ছাড়াও প্র¯্রাব-পায়খানার আরও কিছু নীতিমালা রয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, পূর্ব বা পশ্চিমমুখী হয়ে প্র¯্রাব-পায়খানা করা উচিত নয়। নিচু স্থানে বসে উঁচু স্থানে, গর্তে, নদীতে, পুকুরে, খালে, ঘাটে কিংবা গোসলখানায় প্র¯্রাব করতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। প্র¯্রাব-পায়খানার পর পবিত্রতার জন্য ঢিলা-কুলুপের সঙ্গে সঙ্গে পানি ব্যবহার করার কথাও বলেছেন। অথচ যত্রতত্র প্র¯্রাব-পায়খানায় ঢিলা-কুলুপ ও পানির ব্যবহার নিশ্চিত হয় না। এ থেকে নানা যৌনরোগ, ক্ষত, ভগন্দর, চর্ম ইনফেকশন ও ফুসফুসের রোগ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।