পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কন্টেইনার-নির্ভর শিপিং বাণিজ্য : ৬টি দিয়ে শুরু হয়ে এখন সাড়ে ২৫ লাখ
চাহিদা সামাল দিতে অবকাঠামো সুবিধা ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি
শফিউল আলম : আমদানি-রফতানিমুখী অধিকাংশ পণ্যসামগ্রী পরিবহন হচ্ছে শিপিং তথা সমুদ্রগামী জাহাজে। আর শিপিং বাণিজ্য হয়ে পড়েছে প্রধানত কন্টেইনার-নির্ভর। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে জটিলতা, হয়রানি, সময়ক্ষেপণ আগের তুলনায় কমেছে। বন্দর-ব্যয়ও সাশ্রয় হচ্ছে। কন্টেইনারের পাশাপাশি খোলা অবস্থায় সাধারণ মালামাল (ব্রেকবাল্ক কার্গো) পরিবহনও বেড়ে যাচ্ছে। তবে তুলনামূলক কম। এর কারণ খোলা বা বস্তা-ব্যাগবন্দী পণ্যের তুলনায় কন্টেইনারযোগে মালামাল আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ায় ঝক্কি-ঝামেলা, জটিলতা এবং খরচ অনেকাংশে কম হচ্ছে। খোলা পণ্যের চেয়ে কন্টেইনারে বাহিত পণ্য সুরক্ষিত থাকে বেশি। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে শিপিং বাণিজ্য ও সমুদ্রবন্দর কার্যক্রম অনেকটাই কন্টেইনার-নির্ভর হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরমুখী ও বহির্মুখী সিংহভাগ আমদানি-রফতানি পণ্যসামগ্রী সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও কলম্বো বন্দরে ট্রান্সশিপমেন্ট পরিবহন করা হয় কন্টেইনারযোগে। তবে অভ্যন্তরীণ রুটে কন্টেইনার পরিবহন কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে। ৪ বছর আগে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর এবং নারায়নগঞ্জের পানগাঁও টার্মিনালের মধ্যকার কন্টেইনার ফিডার জাহাজযোগে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম চালু হলেও তা চলছে খুবই মন্থর গতিতে। এটি এখনও তেমন ব্যয়-সাশ্রয়ী হয়নি। ফলে আমদানি-রফতানিকারকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেনি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে চলতি বছরের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার পরিবহনকে অধিকতর সহজ করে তুলতে।
দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামের শিপিং বাণিজ্যে কন্টেইনারযোগে পরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় ৪২ বছর পূর্বে ১৯৭৬ সালের মার্চ মাসে। তখন মাত্র ৬টি কন্টেইনার কন্টেইনার ওঠানামা (হ্যান্ডলিং) দিয়েই এর সূচনা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে গত ২০১৭ সালে রেকর্ড পরিমাণে আমদানি-রফতানিমুখী কন্টেইনার ওঠানামা হয়েছে। এ সময় ২৫ লাখ ৬৩ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার (প্রতিটি ২০ ফুটের একক হিসাবে) হ্যান্ডলিং করা হয়। গত ২০১৬ সালে হ্যান্ডেল হয় ২৩ লাখ ৪৬ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার, বিগত ২০১৫ সালে ২০ লাখ ২৪ হাজার, ২০১৪ সালে ১৭ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার। এমনিভাবে প্রতিবছর কন্টেইনারে প্রবৃদ্ধি ঘটছে। বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধির হার ২০১৫ সালে ১৯ শতাংশ, ২০১৬ সালে ১৬ শতাংশ ও ২০১৭ সালে প্রায় ১০ শতাংশ। গতবছর খোলা সাধারণ মালামাল হ্যান্ডলিং ও পরিবহনের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৮ কোটি মেট্রিক টন। প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ। দেশের সমগ্র আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যের ৯০ শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা মূল্যের একশ’রও বেশি রকমের পণ্যসামগ্রী হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে। বাহিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে নিত্য ও ভোগ্যপণ্য, খাদ্য ও কৃষিজ পণ্য, সেবাখাতের পণ্যসামগ্রী, জ্বালানি তেল, শিল্পের কাঁচামাল প্রভৃতি। প্রধান বন্দরের মাধ্যমে সরকার রাজস্ব আহরণ এবং সার্ভিস চার্জ বাবদ আয় করছে বার্ষিক প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা। কন্টেইনার শিপিং পরিচালনার ফলে বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল (টার্ন এরাউন্ড টাইম) কমেছে। এতে করে খরচও কমে এসেছে। তবে দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দরে প্রয়োজনীয় এমনকি অত্যাবশ্যকীয় ভারী ও মাঝারি যান্ত্রিক সরঞ্জামের (ইকুইপমেন্টস) ঘাটতি, জেটি-বার্থ, ইয়ার্ড, টার্মিনালসহ অবকাঠামোর অপ্রতুলতা রয়ে গেছে। এসব কারণে কন্টেইনার শিপিংয়ে সক্ষমতা, দক্ষতা ও গতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
জাতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাÐের স্নায়ুপ্রবাহ ও হৃদপিÐ হিসেবে বিবেচিত চট্টগ্রাম বন্দর। হাজার বছর ধরে মানুষের উত্তরোত্তর চাহিদার হাত ধরে বিকাশ লাভ করে এই বন্দর। ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানে দক্ষিণ এশিয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান এবং বৈশিষ্ট্যসমূহ অনন্য। বঙ্গোপসাগরের কিনারভাগে এবং আসামের লুসাই পাহাড় থেকে উৎসারিত কর্ণফুলী নদীর মিলিত মোহনায় এটি প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়। এককালে বিশালায়তন চট্টগ্রাম বন্দরে নিত্যদিনের সাধারণ চিত্র ছিল জেটিতে আগত দেশী-বিদেশী সওদাগরী জাহাজের অসংখ্য বাক্স-পেটরা, বস্তা খালাস, ওঠানামা, ডেলিভারির ব্যস্ততা। হাজারো শ্রমিক-কুলি মেহনতি মানুষের সকাল-সন্ধ্যা হাঁকডাক, সারি সারি ট্রাক, ট্যাংকলরি, রেল ওয়াগনসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে পণ্য পরিবহন ও অবিরাম ছোটাছুটি। এমনকি অতীতে চট্টগ্রাম বন্দরে হাতির সাহায্যেও ভারী মালামাল ওঠনামা করা হতো। আজ হাতির স্থানে এসেছে রেল মাউন্ডেট কী গ্যান্ট্রি ক্রেন, আরজিটি, কন্টেইনার মুভার, রীচ স্টেকারসহ হরেক যন্ত্রপাতি। সাধারণ জেটির স্থলে উন্নীত হয়েছে এনসিটি, সিসিটি’র মতো অত্যাধুনিক কন্টেইনার টার্মিনাল। ফলে সেদিন আর এদিনে বিস্তর ফারাক। বর্তমান সময়ে সত্যিকার অর্থেই চট্টগ্রাম হচ্ছে আজ বিশ্বের অন্যতম স্বীকৃত কন্টেইনার পোর্ট।
১৯৭৬ সালের মার্চে যেখানে একটি সাধারণ খোলা জাহাজযোগে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিকৃত পণ্যভর্তি প্রথম ৬টি কন্টেইনার খালাস করা হয়েছিল, বর্তমানে অধিকাংশ কন্টেইনার জাহাজযোগে প্রতিদিন হাজারো কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। গোড়াতে বার্ষিক শতকরা ৫ ভাগ হারে কন্টেইনারে পণ্যসামগ্রী পরিবহন বেড়ে চলে। পরবর্তী সময়ে ১২ থেকে ১৮ শতাংশে উন্নীত হয় এই প্রবৃদ্ধির হার। বন্দরে এখন ১০ শতাংশ হারে কন্টেইনারজাত পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ সেই তুলনায় ভৌত ও কারিগরি অবকাঠামো সুবিধা, যান্ত্রিক সুবিধা সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ), খুচরা যন্ত্রাংশ, কাঁচামাল থেকে শুরু করে আদা-হলুদ, মসুর ডাল, মসলা, আপেল-কমলা-আঙুরসহ নিত্যপণ্য, বেশীরভাগ ভোগ্যপণ্য এমনকি নামিদামি ব্রান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি কন্টেইনারে করে আমদানি করা হচ্ছে। অপরদিকে তৈরিপোশাক ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের রফতানি সামগ্রী কন্টেইনারে শিপমেন্ট করা হচ্ছে। সাধারণ খোলা পণ্যের তুলনায় কন্টেইনারযোগে পণ্য আমদানি ও রফতানিতে গড়ে প্রতি মেট্রিক টনে খরচ সাশ্রয় হয়ে থাকে (পণ্যবেদে) সর্বনিম্ন ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত। ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও চাপ সামাল দিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কন্টেইনারের পরিবহনে সক্ষমতা ও দক্ষতা আরও বৃদ্ধির টার্গেট রেখে বন্দরের অর্ধ-শতাব্দীরও বেশিকালের পুরনো জরাজীর্ণ হয়ে পড়া জেটি ও ঘাটসমূহ এলাকা ভেঙ্গে সেখানে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, লালদিয়ায় নতুন কন্টেইনার টার্মিনাল স্থাপন, পতেঙ্গায় বে-টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য অপরিহার্য ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জাম ইতোমধ্যে কিছু কিছু সংগ্রহ করা হয়েছে এবং কী গ্যাট্রি ক্রেনসহ আরও যন্ত্রপাতি সংগ্রহের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।