Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছাতকে ফসলি জমির মাটি দিয়ে তৈরি হচ্ছে সিমেন্ট

পরিবেশ বিপর্যয় রোধে নীরব কর্তৃপক্ষ

| প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ছাতক (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : ছাতকে লাফার্জ- হোলসিম সিমেন্ট লিমিটেডের কাঁচমাল সংগ্রহে নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। এরসাথে কারখানার ডাস্টে কয়েকটি গ্রামের লোকজন মারাত্মক পরিবেশ দুষণের কবলে পড়েছেন। এব্যাপারে প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা নিয়ে জনমনে চরম অসন্তেুাষ ছড়িয়ে পড়েছে। জানা যায়, কারখানার প্রধান কাঁচামাল মাটি সংগ্রহ করায় মাঠের পর মাঠ ফসলি জমি গভীর জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। এভাবে কারখানার ডাস্টে ঠেঙ্গারগাঁও, বাতিরকান্দি, বারকহন, নোয়ারাই, জয়নগর, শারফিননগরসহ ১২/১৩টি গ্রামের হাজার হাজার লোকজন মারাত্মক শব্দ দুষণসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। তারা শ্বাসকষ্ট ও এলার্জিসহ বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও বৃদ্ধ লোকজন। শিশুদের বাড়ন্তে ও ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। বিষাক্ত ডাস্টে মৌসুমি ফলমূল ও শাক-সবজি উৎপাদন যেন এলাকায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। সবুজ বৃক্ষরাজি এখন ধূসর রঙ্গে পরিণত হয়েছে। সর্বোপরি স্থানীয় লোকজন কারখানার নির্গত ডাস্টের যন্ত্রনা থেকে রেহাই পেতে বসত ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও প্রতিকার পাচ্ছেনা। বিষাক্ত ডাস্টের তেজস্ক্রিয়ায় যেভাবে গাছ-পালা, ফলমূলের উৎপাদন ও বাড়ন্ত ক্ষমতা ব্যাঘাত ঘটছে তেমনি শিশু, যুবক ও বৃদ্ধ পুরুষ-মহিলাদের কঙ্কালসার পরিলক্ষিত হয়। ২০০৬সাল থেকে সিমেন্ট উৎপাদন শুরুর পর এলাকাবাসি সরকারের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করে আসছেন। ২০১৪সালের ২০মে’ সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে এলাকাবাসির পক্ষে লিখিত অভিযোগ করেন ঠেঙ্গারগাঁও গ্রামের আইনুল আহমেদসহ লোকজন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ৩জুলাই জেলা প্রশাসক বরাবরে (স্মারক নং ৬৪৫/১) মূলে অভিযোগের সত্যতার ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। এতে জেলা প্রশাসক লাফার্জ কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। কিন্তু পরবর্তিতে রহস্যজনক কারণে এর কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। এদিকে ২০১৬ সালের ৭ডিসেম্বর ও ২০১৭ সালের ৯নভেম্বর সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক, ২০১৭সালের ১৬জানুয়ারি ও ২০১৮সালের ৪জানুয়ারি সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবরে কারখানার পরিবেশ দুষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করা হয়। বারকাহন নাগরিক পরিবেশ ও যুব সমাজকল্যাণ সংস্থার (রেজিঃ ৯২৩/১৬) সভাপতি/সম্পাদক প্রেরিত এসব আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৭সালের ৮ফেব্রæয়ারি সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের তদন্তে পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আইনুল আহমেদ বলেন, পরিবেশ দুষণ রোধে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এতে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামণা করেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক এড. সাহেদা আকতার বলেন, লাফার্জ কর্তৃক পরিবেশ দুষণ বন্ধের ব্যাপারে তারা সোচ্চার আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, লাফার্জের বিরুদ্ধে পরিবেশ দুষণের একটি অভিযোগ করা হয়েছে। তবে এটির অগ্রগতির ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারছেনা। সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ছালাহ উদ্দিন চৌধুরি বলেন, লাফার্জের পরিবেশ দুষণের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। লাফার্জ-হোলসিম সিমেন্ট লিমিটেডের কমিউনিটি রিলেশন ম্যানেজার সাব্বির হোসেন তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিমেন্ট

৩ জুলাই, ২০২২
১৯ নভেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ