Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

আলোচনা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই, আওয়ামী লীগকেই পথ দেখাতে হবে -মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:৪৮ পিএম

বর্তমানে দেশ, জাতি ও গণতন্ত্র সঙ্কটের মধ্যে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজের দলকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, ক্ষমতা আকড়ে ধরে থাকার জন্য পুরো ব্যবস্থাটাকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে চায়। এটাই সমস্যা, সঙ্কট তৈরি করেছে। এই সমস্যা থেকে বের হতে হলে আলোচনার কোন বিকল্প নেই। এজন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, তার সাথে এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বসে আলোচনা করে একটা পথ বের করতে হবে। তাহলেই এই সঙ্কট থেকে উত্তরণ হবে। আর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগই ভবিষ্যতের পথ দেখাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মির্জা ফখরুল। রোববার মধ্যরাতে বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভিকে দেওয়া সরাসরি সাক্ষাৎকারে তিনি এ আশাবাদ প্রকাশ করেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ বড়, ঐতিহ্যবাহী ও পুরনো একটি রাজনৈতিক দল। পুরনো গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে সামনে রেখে ‘দেয়ার কামব্যাক টু দেয়ার সেন্সেস’।” দেশের এই সঙ্কটকালীন মূহুর্তে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ দেশ, মানুষ ও জাতির জন্য একটা পথ খুঁজে বের করবে। আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সহনশীলতার রাজনীতি করে তারা একটা সুন্দর ভবিষ্যতের পথ দেখাবে, এটাই আমরা আশা করি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের সবার এই মনোভাবই পোষণ করা উচিত যে সংঘাত বা প্রতিহিংসা নয়, আলাপ-আলোচনার মধ্যদিয়েই সমস্যার সমাধান করা উচিত। দেশের মানুষের ওপর প্রত্যাশা ব্যক্ত মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষের অন্তর্নিহিত যে স্পিরিট, সেটাই সঙ্কটের পথ করে দেবে, বরাবরই দিয়েছে। সেই ১৯৫২ সাল থেকে, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ নানা সময়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলোয় বাংলাদেশের মানুষই উঠে দাঁড়িয়েছে। তারা তাদের পথ করে নিয়েছে। তাদের অধিকার আদায় করে নিয়েছে। সেই মানুষের ওপর আমরা বেশি আস্থা রাখি। সেই মানুষই তার প্রয়োজনে তার অধিকার আদায়ে কাজ করবে।

সহায়ক সরকারের রূপরেখার বিষয়ে তিনি বলেন, যথাসময়ে প্রস্তাব দেওয়া হবে। তবে এর আগে সরকারকে বসতে হবে। সরকার যখনই বসতে চাইবে, তখনই আমরা প্রস্তাব প্রকাশ করবো। এটা আমাদের কাছে তৈরি আছে।

সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, গণতন্ত্রের রাজনীতি হচ্ছে আর্ট অব কম্প্রোমাইজ। সেই জায়গায় সকলের চিন্তা করা উচিত। যেটা হয়ে গেছে হয়ে গেছে। যেটা চলে গেছে সেটা চলে গেছে। আগামী দিন সম্পর্কে চিন্তা করি। বাংলাদেশ স্বাধীনতার মূল বিষয়ই ছিল গণতন্ত্র। ৭০ সালের নির্বাচনের পর পাকিস্তান আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা দিতে টালবাহানা করেছে তখন মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। আজও যদি আমরা সেই চিন্তা করি তাহলে কিভাবে হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ নিজের দলকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পুরো ব্যবস্থাটাকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে চায়। এটাই সমস্যা। এজন্য আমরা বারবার বলছি, ওই পথে না গিয়ে-প্রতিহিংসা, সংঘাত এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা উচিত। এটা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। এদেশের যা কিছু অর্জন গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে, সাধারণ মানুষের রক্ত পানি করা, শ্রম, চিন্তা, সৃজনশীলতা থেকে আসা। এটাকে ধরেই আমাদের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য একটা রাজনৈতিক সিস্টেম তৈরি করা উচিত। যেটার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে।

তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য ৪৭ হয়ে গেছে, এতো দীর্ঘ সময়েও আমরা একটা সিস্টেম দাঁড় করাতে পারিনি। যেটার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পালাবদল হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তিনটি নির্বাচন ছাড়া বাকি সব সময়ই সমস্যা হয়েছে। যদিও এই পদ্ধতি আওয়ামী লীগই এনেছিল। এখনো সময় আছে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে একটা পথ বের করা উচিত। এটা কারো ব্যক্তিগত, দলগত সমস্যা নয়, জাতিগত সমস্যা।

এজন্য আসুন একসাথে বসি, আলোচনা করি একটা পথ বের করি। অতীতকে ভুলে যায়। কিভাবে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারি। একটা দেশে অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কোন সমস্যার সমাধান হবে না। নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের জন্য বিএনপির প্রস্তুতি সব সময় আছে। আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলাম। আমরা যেনো সেটা করতে না পারি জন্যই তো সরকার নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। আমাদের নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে প্রেরণ করেছে। নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।

বিএনপির নেত্রীর মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায় সরকারের সময়ে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৪টা মামলা করে। একই সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫টা মামলা ছিল সেগুলো তুলে নিয়েছে। আর বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও নতুন করে ২৫টি মামলা দিয়েছে। মামলাগুলো খুবই হাস্যকর। তিনি বোমা মেরেছেন, গাড়ি পুড়িয়েছেন ইত্যাদি

 

ক্ষমতা আকড়ে ধরে রাখতে না চাইলে আলোচনায় কোন সমস্যা মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন, তার সাথে আলোচনা করুন, অন্যান্য দলের নেতাদের সাথে বসুন। সবাই পথ দেখাবেন, ভাল কথা বলবেন। অসুবিধা কোথায়, আমার যদি অন্য কোন উদ্দেশ্য না থাকে তাহলে সমস্যা হওয়ার কথা না। আর যদি মনে করি ক্ষমতা থেকে সরবোনা, ধরে রাখবো তখন এ ধরণের চিন্তা আসতে পারে।

নির্বাচনে যাওয়ার জন্য কয়েকটি শর্তের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। সকলকে সমান সুযোগ দিতে হবে। আওয়ামী লীগ এখনি সারাদেশে নৌকার জন্য ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছে। আর আমরা সভা করার অনুমতিও পাচ্ছি না।

 

বিএনপির সঙ্কটের বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি এখন সঙ্কটে আছে এটা সত্য কথা। কিন্তু সেই সঙ্কটটা আভ্যন্তরীণ না। বহিঃআক্রমনের সঙ্কট। গোটা দেশ, জাতি, গণতন্ত্রের সঙ্কটের মধ্যে। রাজনীতির পরিবেশ নাই। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও করতে দিচ্ছে না। ৪টা পর্যন্ত অনশন করতে চেয়েছি। কিন্তু ১২টার সময় এসে বলছে ১ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করতে হবে। অনুমতি নিয়ে বসেছি সেটাও করতে দিচ্ছে না। শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার অধিকার আমার আছে। সেই জায়গাও দিচ্ছে না। স্মারকলিপি প্রদান করা, স্বাক্ষর গ্রহণ করার মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আর কি হতে পারে।সেগুলোতেও বাধা দেয়া হচ্ছে। গোটা পৃথিবী বলছে বাংলাদেশে ডেমোক্রেসির স্পেস কমে যাচ্ছে। সরকার এমন একটা জায়গায় গেছে যেখানে সহনশীলতা বলতে কিছু থাকছে না। বিরোধী পক্ষ, মতকে সহ্য করতে পারছে না। ভয় পাচ্ছে বিরোধী দল যদি থাকে, বেগম খালেদা জিয়া যদি থাকে তাহলে আগামী নির্বাচনে তাদের পক্ষে বিজয়ী হয়ে আসা সম্ভব নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ