Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামে মানব সম্পদ উন্নয়নের গুরুত্ব

| প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
\ পাঁচ \
সে উত্তর দেবে- আমি তোমার পথে যুদ্ধ করেছি; এমনকি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। বরং তুমি এ জন্যে যুদ্ধ করেছো যেনো তোমাকে বীরপুরুষ বলা হয়। আর তা তোমাকে বলা হয়েছে। এরপর তার ব্যাপারে ফেরেশতাগণকে আদেশ করা হবে। তারা তাকে উপুড় করে টেনে টেনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।
দ্বিতীয়ত যার বিচার হবে সে হবে একজন আলিম। সে নিজে শিক্ষা লাভ করেছে, অপরকে তা শিখিয়েছে এবং কুরআন পড়েছে। তাকে আল্লাহর দরবারে নিয়ে আসা হবে। আল্লাহ তাকে তাঁর নিআমতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও তা স্মরণ করবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি দুনিয়াতে এর বিনিময় কী কাজ করেছো? সে উত্তর দেবে, দুনিয়াতে আমি শিক্ষা লাভ করেছি, অন্যকে শিখিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করছি। আল্লাহ বলবেন- তুমি মিথ্যা বলছো। বরং তুমি এ জন্যে জ্ঞান অর্জন করেছিলে যেনো তোমাকে জ্ঞানী বলা হয়। কুরআন মাজীদ এ জন্যে তিলাওয়াত করেছি যেনো তোমাকে কারী বলা হয়। আর তোমাকে তা বলা হয়েছে। এরপর তার ব্যাপারে ফেরেশতাগণকে আদেশ করা হবে। তারা তাকে উপুড় করে টেনে টেনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।
তৃতীয়ত যার বিচার হবে সে হবে একজন সম্পদশালী ব্যক্তি। আল্লাহ তাকে স্বচ্ছল করেছেন এবং বিপুল সম্পদ দিয়েছেন। তাকে আল্লাহর দরবারে নিয়ে আসা হবে। আল্লাহ তাকে তাঁর নিআমতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও তা স্মরণ করবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি দুনিয়াতে এর বিনিময়ে কী কাজ করেছো? সে উত্তর দেবে, যে পথে খরচ করলে তুমি খুশি হও, সে জাতীয় সব পথেই তোমার সন্তুষ্টির জন্য আশি খরচ করেছি। আল্লাহ বলবেনÑ তুমি মিথ্যা বলছো। বরং তুমিতো এগুলো এ জন্যে করেছো যেনো তোমাকে দানবীর বলা হয়। আর তোমাকে তা বলা হয়েছে। এরপর তার ব্যাপারে ফেরেশতাকে আদেশ করা হবে। তারা তাকে উপুর করে টেনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত সংক্ষেপে কিন্তু স্পষ্টভাষায় ঘোষণা করেছেন, কাজেই ধ্বংস সেই সকল সালাত আদায়কারীর জন্য, যারা তাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন, যারা লোক দেখানোর জন্য সালাত আদায় করে। বস্তুত আখিরাতে সফলতা লাভই মুমিনের মূল লক্ষ্য। এ কারণে ইসলামে বিশ্বাসী একজন লোক দুনিয়ার সকল কাজই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করেন। যে কারণে তার মধ্যে লোক দেখানোর বিষয়টি একেবারেই থাকে না। ফলে মানসিক দিক থেকে তিনি পরম উৎকর্ষ লাভ করতে সক্ষম হন। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষ বা প্রেম তাকে কোনক্রমেই মন্দ কাজে নিয়োজিত করতে পারে না।
নৈতিক উন্নয়ন ঃ নৈতিক উন্নয়ন ছাড়া যে কোন উন্নয়নই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। তাই রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, আমি প্রেরিত হয়েছি সুমহান নৈতিক গুণাবলির পূর্ণতা সাধনের জন্য। আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন কাজ অধিকাংশ লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তিনি উত্তরে বলেছেন, কিয়ামাতের দিন যে জিনিসটি মুমিনের পাল্লায় সবচেয়ে ভারি হবে তা হল ‘তাকওয়া ও উত্তম চরিত্র। রাসূলুল্লাহ স. আরও বলেছেন, কিয়ামতের দিন যে জিনিসটি মুমিনের পাল্লায় সবচেয়ে ভারি হবে তা হল উত্তম চরিত্র। নাওয়াস ইবনে সামআন আল-আনসারী বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বির সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বলেছেন, ‘সুন্দর ব্যবহারই পুণ্য। তিনি সত্যিকার ও পূর্ণ মুমিন হিসেবে সে ব্যক্তিকেই অভিহিত করেছেন যার চরিত্র সুন্দর। তিনি বলেছেন, চরিত্রের বিচারে যে উত্তম মুমিনদের মধ্যে সেই পূর্ণ ঈমানের অধিকারী। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে ছিলাম। এমন সময় জনৈক আনসারী ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ রাস. কে সালাম করলেন, তারপর জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ মুমিনদের মধ্যে সর্বোত্তম কে? তিনি জবাব দিলেন, তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি হলো সেই ব্যক্তি যার চরিত্র সর্বোত্তম। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা মুমিনের অসংখ্য নৈতিক গুণের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন : নিশ্চয় মুমিনগণ সফল, যারা তাদের সালাতে ভীত ও বিনয়ী, যারা নিজেদেরকে অর্থহীন কাজ থেকে বিরত রাখে, যারা যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে কর্মতৎপর হয় এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গ হিফাযত করে। বস্তুত ইসলাম যে বিষয়গুলোকে চরিত্রের সুন্দর দিক এবং অবশ্য অর্জনীয় গুণ হিসেবে ঘোষণা করে সেগুলোকে আত্মার গুণ হিসেবে আত্মস্থ করা, নৈতিক বৈশিষ্ট্যের পরিণত করা এবং জীবনাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা গেলে স্বভাবতই মানুষ সম্পদে পরিণত হবে। যে সম্পদ দুনিয়ায় ব্যক্তির নিজের এবং অপরাপর সকলের কল্যাণ ও মুক্তি নিশ্চিত করবে। প্রসঙ্গত নৈতিক উন্নয়নে ইসলামের কিছু নির্দেশনা উল্লেখ করা যায়। যেমন,
১. কুরআন অধ্যয়ন ঃ কুরআন হচ্ছে মুমিনের গাইড লাইন, জীবন বিধান। এর মধ্যে আল্লাহ তাআলা মানুষের করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছেন। সুন্দর চরিত্র গড়ে তোলার জন্য সবার আগে তাই কুরআন অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। কুরআন অধ্যয়ন বলতে শুধু দেখে তিলাওয়াত বুঝায় না। বরং কুরআন অধ্যয়ন হলো এর মমার্থ, তাৎপর্য, তাৎপর্য ও গুরুত্ব অনুধাবন করে পড়া। শুধু দেখে দেখে কুরআন তিলাওয়াত করলে চরিত্রের উপর তার সর্বব্যাপক প্রভাব পড়বে না।



 

Show all comments
  • Md Waiz hossain bhuiyan ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:৪৭ পিএম says : 0
    আল্লাহ মহান
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ