পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : দেশের ঐতিহ্যবাহী কৃষিজ বৃহত্তম শিল্প হচ্ছে চা। চায়ের উৎপাদন বার্ষিক ৭ কোটি কেজিতে ওঠানামা করছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ছে না উৎপাদন। বাড়ছে না গুণগত মান বা উৎকর্ষতা। রফতানি বাজারও গেছে হারিয়ে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, শুধুই শূণ্য দশমিক ৪১ শতাংশ চা বিদেশে রফতানি হচ্ছে। তাও ‘রফতানি’র কোটায় যৎসামান্য বিক্রিত চা অভ্যন্তরীণ প্যাকেটিয়াররা কিনছে। দেশে চায়ের ভোক্তা চাহিদা ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৯৯.৫৯ শতাংশই দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিকিকিনি হয়। আবাদ, ফলন, উৎপাদন, ব্যাংক ঋণনীতি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও মূল্য, শিল্প বা কারখানাসহ চা শিল্পের সমগ্র প্রক্রিয়াকে যুগোপযোগী আধুনিকায়নের সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেই। চা উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশের তুলনায় প্রযুক্তিগত উন্নয়নেও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের চা শিল্পখাত। ফলে চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। সংশ্লিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা ও বিপণনকারীদের সাথে আলাপকালে তারা অভিমত ব্যক্ত করেছেন, ‘দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি’ খ্যাতি নিয়ে বিপুল অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থান সম্ভাবনার ধারক চা শিল্পের আধুনিকায়নের জন্য এখনই উপযুক্ত সময়। শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত সকলকে নিয়ে সমন্বয় ও মাস্টার প্ল্যানের মধ্যদিয়ে অগ্রসর না হলে অদূর ভবিষ্যতে এ খাত অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে।
এদিকে মান্ধাতা আমলের কৃষিজ শিল্পখাত ও গতানুগতিকতা কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না চা শিল্প। সদ্যবিদায়ী ২০১৭ পঞ্জিকা সালে দেশে চা উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৭ কোটি ৪০ লাখ কেজি। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ লাখ কেজি কম। তবে চলতি চা নিলাম মওসুমে এ যাবত গত প্রায় ১০ মাসে ৪১টি ট্রেডে চা পাতা বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দামও বেড়ে চলেছে। চট্টগ্রামস্থ দেশের একমাত্র ও প্রাচীন আন্তর্জাতিক চা নিলামবাজারে এ পর্যন্ত চা পাতা বিক্রির পরিমাণ ৭ কোটি ৮ লাখ ৫ হাজার ৭১৬ কেজি। অথচ গত বছর একই সময়ে বিক্রি হয় ৬ কোটি ৯৪ লাখ এক হাজার ১৫৮ কেজি। এ বছর বিক্রিত চা পাতার গড় মূল্য হচ্ছে প্রতিকেজি ২১৬ টাকা ৫৮ পয়সা। আর গত বছরে তা ছিল ১৯৭.৯৮ টাকা। এবার চায়ের গড় মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে কেজিপ্রতি ১৮ টাকা ৬০ পয়সা। চলমান চা বিপণন তথা নিলাম মওসুমে এ যাবত (২০১৭-১৮সাল) বিক্রিত চায়ের মোট মূল্য এক হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা।
সর্বশেষ ৪১তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক চা নিলাম অনুষ্ঠিত হয় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। এতে ৩৩ হাজার ৫৭০ ব্যাগ পাতা চা এবং ৭ হাজার ৭৮৫ ব্যাগ গুঁড়ো চা (ডাস্ট) বিক্রির জন্য আনীত হয়। এতে উভয়ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৭৬ শতাংশ এবং ৬৮ শতাংশ চা বিক্রি হয়েছে। অবশিষ্ট চা অবিক্রিত থাকে। বিক্রিত চায়ের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরি বা প্রকারভেদে চা বিকিকিনি হয়েছে- প্রতিকেজি ব্রোকেন বেস্ট ২০২ টাকা থেকে ২১৯ টাকা, গুড ১৮০ থেকে ২০১ টাকা, মিডিয়াম ১৬০ টাকা থেকে ১৭৯ টাকা, সাধারণ মানের ১৪০ থেকে ১৫৯ টাকা। তাছাড়া ফ্যানিংস বেস্ট বিক্রি হয় কেজি ২০৫ থেকে ২২২ টাকা, গুড ১৮০ থেকে ২০৪ টাকা, মিডিয়াম ১৬২ থেকে ১৭৯ টাকা, সাধারণ ১৪০ থেকে ১৬২ টাকা।
সীমিত ও বিশেষভাবে চয়নকৃত উন্নততর চায়ের বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার কেজি, যার মূল্যস্তর ছিল বেশ চড়া। এরমধ্যে- সর্বশীর্ষ স্থানে ছিল ইউনিটি ব্রোকার্স লিমিটেডের মাধ্যমে নিলামে বিপণনকৃত ব্রোকেন মধুপুর জিবিওপি ক্লোন জিপি-ওয়ান প্রতিকেজি ২৯১ টাকা দরে। এছাড়া বিক্রি হয় ফ্যানিংস মধুপুর পিএফ ক্লোন ২৬০ টাকা, ডিএমপি-বিটিআরআই ২৪৪ টাকা, কিল্পডন সিডি ক্লোন কেজি ২৪৪ টাকা, আমতলী ২৫৩ টাকা। এ যাবত বিক্রিত চায়ের মধ্যে মাত্র ৭ হাজার ৬৮৫ কেজি চা পাতা রফতানিকারকদের কোটা হিসেবে বিক্রি হয়েছে। যার পরিমাণ মোট বিক্রিত চায়ের মাত্র শূণ্য দশমিক ৪১ শতাংশ।
এদিকে চা শিল্পখাতে আরও ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। তবে কালের বিবর্তনে চা শিল্পখাত তার ঐতিহ্য, খ্যাতি অনেকটা হারাতে বসেছে। এই খাত দীর্ঘদিন চরম উপেক্ষিত। আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি তেমন। বিদেশে চায়ের চাহিদা তথা রফতানির সুযোগ যতই বাড়ছে বাংলাদেশে চায়ের উৎপাদন ততই থমকে আছে। আর রফতানি বাজার হারিয়ে গেছে। এর প্রধান কারণ রফতানি ও অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদার তুলনায় আবাদ, উৎপাদন মোটেই বাড়ছে না। বরং সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের চা দু’দশক আগেও প্রায় ২০টি দেশে ভোক্তাদের তৃপ্ত করতো। তখনকার অন্যতম প্রধান ক্রেতাদেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তান, যুক্তরাজ্য, সোভিয়েট ইউনিয়ন বা সিআইএসভূক্ত দেশগুলো, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব ইউরোপের দেশসমূহ, মিসর, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ড অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তারা বিকল্প চা উৎপাদক দেশের দিকেই ঝুঁকেছে।
সমগ্র চা শিল্পখাতের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের তাগিদ দিয়ে কয়েকজন চা বাগান মালিক, শিল্পোদ্যোক্তা ইনকিলাবকে জানান, চায়ের উৎকর্ষতা বা গুণগত মান বৃদ্ধি এবং উৎপাদন বৃদ্ধি প্রয়োজন। তবে এরজন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ঊর্ধ্বে উঠে সরকারকে একটি সমন্বিত নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে সবার উদ্যমকে কাজে লাগানো যাবে। এটি দেশের প্রধান কৃষিজ শিল্প হলেও কৃষি ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়ে সুদ গুণতে হয় ১৩ ভাগ হারে। অথচ কৃষিখাতে ঋণের হার ৯ শতাংশ। চা খাতে সুদের হার একক সংখ্যায় (সিঙ্গেল ডিজিটে) নামিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় ঋণের বোঝায়, চক্রবৃদ্ধি সুদের চাপে জর্জরিত হয়ে চা শিল্পখাতকে এগিয়ে নেয়া বাস্তবে সম্ভব নয়। ঋণসহ এই খাতে বিরাজমান অসম প্রতিযোগিতা দূর করা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, চা শিল্পে বিদ্যুৎ বিলের বাড়তি বোঝা ও ভূতুরে বিল একটি বড় সমস্যা। আবার বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে নিয়মিত জেনারেটর চালিয়ে কারখানা সচল রাখতে হচ্ছে। এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ। চা শিল্প মালিকদের বৈরী আবহাওয়া, চা বাগানে পানি সেচের সঙ্কট মোকাবিলা করেই উৎপাদন সচল রাখতে গিয়ে বেগ পেতে হচ্ছে। সার্বিকভাবে এ শিল্পের জন্য সহায়ক নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করাই হবে সময়োপযোগী। এরজন্য সরকারের নীতি-নির্ধারকদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
দেশের মোট ১৬৩টি চা বাগান কম-বেশি সচল। এরমধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় ৯০টি, হবিগঞ্জে ২৩টি, চট্টগ্রামে ২২টি, সিলেটে ১৯টি, পঞ্চগড়ে ৭টি, রাঙ্গামাটিতে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি চা বাগান আছে। চা একটি অভ্যন্তরীণ স্থায়ী চাহিদার, রফতানিমুখী, শ্রমনিবিড় এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প। এ খাতে এক লাখ ৪ হাজার ৪৯৭ জন স্থায়ী শ্রমিক, ২৮ হাজার ৩১৩ জন অস্থায়ী শ্রমিক এবং ৫ হাজার ৭২৬ জন কর্মচারী রয়েছেন। তাদের পোষ্য সংখ্যা ২ লাখ ৬৯ হাজার ১৩৩ জন। দেশে চা পানের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বৃহৎ চা বাগানের পাশাপাশি ২০০২ সাল থেকে ক্ষুদ্রায়তন চা চাষ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে পঞ্চগড় ও এর আশপাশ এলাকা, ঠাকুরগাঁও, বান্দরবান জেলায় ক্ষুদ্র পরিসরে সফল চা আবাদ হচ্ছে। এর পেছনে আছেন অর্ধ লাখ ক্ষুদ্র চাষী। ছোট ছোট চা বাগান চট্টগ্রাম, পার্বত্যাঞ্চল ও উত্তর জনপদে আরও প্রসারের সুযোগ রয়েছে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কথিত আছে সুদূর অতীতকালে ওলি-বুজুর্গ, সাধক-দরবেশ কিংবা মুনি-ঋষির সাথে বসে গভীর সাধনায় মগ্ন থাকাকালে কোন এক সাগরেদ বা শীষ্যের সাধন ভেঙ্গে যায়। হঠাৎ দু’চোখের পাতা মুদিত হয়ে আসা ঘুমই এরজন্য ছিল দায়ী। শিষ্যটি তখন খুবই মনক্ষুণœ ও হতাশ হন। শুধু তাই নয়- নিজেই নিজের চোখের পাপড়িগুলো কেটে ফেলে দেন। মাটিতে পড়ে থাকা সেই চোখের পাতা বা পাপড়ি থেকে কিছুদিন পর চারা গজায়। ধীরে ধীরে সেই চারাগাছ বেড়ে ওঠে। তারপর কোন একদিন কেউ হয়তো কৌতূহলের বশে অজানা ছোট গাছটির কুঁড়ি-পাতা ছিঁড়ে হাতে কচলিয়ে জিহ্বায় স্বাদ পরখ করার চেষ্টা করেন। আর তখনই দেখা গেল সেই পাতার রস চিবিয়ে খেলে চোখে যেন সহজে আর ঘুমই আসতে চায় না! এই সেই ‘দু’টি পাতা- একটি কুঁড়ি’ অর্থাৎ চা পাতার দূর অতীতে জন্মের কাহিনী। হয়তোবা চা শিল্পের এটি রূপকল্প-গাঁথা!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।