পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অসহায় পরিবারটি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দেশের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন মুফতি মাওলানা বখতিয়ার উদ্দিন আল কাদেরীর অবস্থা এখনও শঙ্কটাপন্ন। রাজধানী ঢাকার এপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিশিষ্ট এ সুন্নী আলেম। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেয়ার কথা বলা হলেও আর্থিক সঙ্কটের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তার স্বজনেরা। তরুণ এই ইসলামি ব্যক্তিত্ব গবেষক ও সুবক্তার চিকিৎসায় সরকারসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন তার শুভাকাক্সক্ষীরা।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে গতকাল (শনিবার) বখতিয়ার উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা জানান, তার অবস্থা এখনও স্থিতিশীল। তিনি হাত-পা কিছুটা নাড়াচাড়া করলেও ১৪ দিনেও তার জ্ঞান ফিরেনি। চিকিৎসকেরা বলছেন, তার মস্তিষ্ক এখনও পুরোপুরি কাজ করছে না। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য ধরতে বলেছেন চিকিৎসকেরা। তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটছে অসহায় পরিবারটির সদস্য ও স্বজনদের। তার আরোগ্য কামনায় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ দোয়া ও মাহফিল হচ্ছে।
এশিয়াখ্যাত চট্টগ্রামের অন্যতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার তাফসির বিভাগের সহকারী অধ্যাপক (মোফাচ্ছির) মুফতি বখতিয়ার উদ্দিন গত ২৮ জানুয়ারি ভোরে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। কুমিল্লা থেকে একটি মাহফিল শেষ করে প্রাইভেট কারে চট্টগ্রাম ফিরছিলেন তিনি। সীতাকুÐ এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় তাকে বহনকারী প্রাইভেট কারটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। প্রথমে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নগরীর একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে তার চিকিৎসা চলে, দুই দফা মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারও হয়। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে গত পহেলা ফেব্রæয়ারি ঢাকার এপোলো হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
মুফতি বখতিয়ার উদ্দিনের ভাই ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল আজিম ইনকিলাবকে বলেন, দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর হাসপাতাল নেয়া পর্যন্ত ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়েছে। আর এ কারণে তার অবস্থার আরও অবনতি হয়। ঢাকা এবং চট্টগ্রামে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ তাকে সুস্থ করে তুলতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, এ চিকিৎসা যেমন ব্যয়বহুল তেমন সময়সাপেক্ষ। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার কথা বলা হলেও এ মুহূর্তে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া তাকে নেয়াও সম্ভব নয়। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এবং বিদেশে চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ ব্যাপারে তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
বখতিয়ার উদ্দিনের কর্মস্থল জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুফতি অছিয়র রহমান ইনকিলাবকে বলেন, কমবয়সে বখতিয়ার উদ্দিন ইসলামি জ্ঞান-গবেষণায় যে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তা বিরল। তিনি ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাল ওয়ায়েজীন হিসেবে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। তিনি আমার ছাত্র ছিলেন, এখন সহকর্মী। দেশের বিভিন্ন এলাকায় মিলাদুন্নবী, কনফারেন্স, মাহফিল, সেমিনারসহ বিভিন্ন ফোরামে তিনি জ্ঞানগর্ব আলোচনা পেশ করতেন। তার মতো একজন সুবক্তা ও জ্ঞানী সুন্নী আলেম বর্তমানে বিরল। আমরা এদেশের সুন্নী আলেমদের পক্ষ থেকে তার সুস্থতা কামনা করছি এবং তার উন্নত চিকিৎসায় সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
এক পুত্র ও কন্যা সন্তানের জনক বখতিয়ার উদ্দিন ছাত্রজীবনেও ছিলেন মেধাবী। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ঢাকার একটি মসজিদে খতিব, ঢাকার কাদেরিয়া তৈয়বিয়া মাদরাসার আরবী প্রভাষক ছিলেন। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা বরুমচড়া গ্রামে তার জন্ম। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মাওলানা বখতিয়ারের এ সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ভেঙে পড়েছেন তার গৃহিনী স্ত্রী। দুই সন্তান নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় স্বামীর পাশে দিন কাটছে তার। এদিকে একই দিন ভাইয়ের দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির খবর পেয়ে তাকে দেখতে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তার বড় বোন স্কুল শিক্ষিকা তাহমিনা বেগম। ভাই দুর্ঘটনায় পড়ে আহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর দুর্ঘটনায় মারা যান বোন তাহমিনা। তিনি বাঁশখালী রায়ছটা প্রেমাশিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন। বাঁশখালী থেকে অটোরিকশায় চট্টগ্রাম নগরীতে আসার পথে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি। বোনের মৃত্যু এবং ভাইয়ের শঙ্কটাপন্ন অবস্থায় মাওলানা বখতিয়ারের পরিবারের সদস্যরা ভেঙে পড়েছেন। মাওলানা বখতিয়ারের সুস্থতা কামনায় মহান আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করছেন পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।