পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উবায়দুর রহমান খান নদভী : সম্প্রতি ভারতে এক মহিলা জুমার নামাযে ইমামতি করেছেন বলে ভারতীয় মিডিয়ায় এসেছে। ছবিতে দেখা গেছে একটি দালান ঘরে ৫/৭ জন পুরুষ কাতারে দাঁড়িয়ে, আর সামনে একটি তরুণী নামায পড়াচ্ছে। এ নিউজ ও ছবি দেখে মুসলমান মাত্রই বুঝে গেছেন যে, এটি একটি বাজে উদ্যোগ ছাড়া আর কিছু নয়। কিছুদিন আগেও মুসলমানদের তিন তালাক বিধানটি ভারতীয় উচ্চ আদালত বাতিল করে দিয়েছে। অথচ ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে রাষ্ট্রের কোনো বৈধতাই নেই কোনো ধর্মের পরিবর্তন আনার। এটি মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার চক্রান্তেরই একটি অংশ। কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রেও দেখা গেছে এক মহিলা জুমার নামাযে ইমামতি করছেন। এর কিছুদিন পর একই দৃশ্য ইন্দোনেশিয়ায়ও মঞ্চায়িত হয়েছে। বিষয়টি এতই স্পষ্ট ও সর্বজনবিদিত যে, এ নিয়ে আলোচনার কোনো প্রয়োজন ছিল না। তবে দুটি স্থানে দেখা গেছে কাদিয়ানীরা নওমুসলিমদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের নামাযে মহিলা ইমাম নিয়োগের এসব চিন্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইসলামে পুরুষদের জামাতে ইমামতি করা মহিলাদের জন্য জায়েজ নয়। কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা দিয়ে রেখেছে। মহানবী সা. এর যুগে একবার কিছু মহিলা একজন মহিলাকে ইমাম বানিয়ে জামাতে নামায পড়েছিলেন। তবে তাদের ইমাম অগ্রসর হয়ে নয় বরং মুসল্লিদের কাতারেই ছিলেন। নফল পর্যায়ে রীতি মেনে এর সুযোগ শরীয়তে থাকতেও পারে। তবে এ ঘটনার পূনরাবৃত্তি বা ব্যাপকতা ইসলামের ইতিহাসে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ উম্মাহ এ বিচ্ছিন্ন ঘটনাটি সুন্নাহ হিসাবে ধরে নেয়নি এবং এর ওপর আমল করেনি। মহিলাদের বিষয়ে মহানবী সা. এর হাদীসের মর্ম অনুযায়ী, ‘তারা নামায পড়বে গৃহকোণে। মসজিদ থেকে তাদের জন্য বাড়ি ভালো। বাড়ির চেয়ে অন্দর মহল ভালো। অন্দর মহলের মধ্যে কোনার ঘর ভালো। কোনার ঘরের মধ্যে নিরব ও গোপন কুঠুরি হলে আরও ভালো।’ ইসলামের প্রথম যুগে মহানবী সা. এর সময়ে মহিলারাও মসজিদে আসতেন। এ ব্যবস্থা ছিল নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে সবাই যেন সাহাবী হিসেবে হযরত সা. এর সান্নিধ্য পেতে পারেন। কোরআনি শিক্ষা অর্জন করতে পারে। কিন্তু মহানবী সা. এর ইন্তেকালের পর ইজমায়ে সাহাবা বিধানে নারীদের মসজিদে গমন রহিত করা হয়। হযরত আয়েশা রা. নিজ অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘সমাজের অবস্থা যা হয়েছে তাতে আমার মনে হয় যে, হযরত সা. বেঁচে থাকলে নারীদের আর মসজিদে আসতে দিতেন না।’ হযরত ওমর রা. আদেশ দিয়ে মহিলাদের মসজিদে আগমনকে নিরুৎসাহিত করেন। এর ওপর উম্মতের ইজমা হয়ে যায়। তখন থেকে গত সাড়ে ১৪০০ বছর নারীরা ঘরেই নামায পড়ছেন। কোনো মসজিদে শরীয়ত সম্মত পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে অন্য কারণে বাইরে বের হতেই হয়, এমন নারীরা সেখানে নামায পড়তে পারেন। যার নজির পশ্চিমা বিশ্ব, মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়াসহ কোনো কোনো দেশে দেখা যায়। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশেও পরিবেশ বুঝে মসজিদে এমন নিরাপদ মহিলা কর্ণার তৈরি করা হয়। তবে ৫ ওয়াক্ত নামাযে পুরুষের মতো ঘর ছেড়ে মহিলারাও মসজিদে ছুটে এসে জামাত ধরছেন এমন দৃশ্য পৃথিবীতে নেই। কেননা মহানবী সা. এর পর সকল সাহাবী একমত হয়ে ইজমার দ্বারা এই ঐতিহ্যটি প্রণয়ন করেন। যা ইসলামের পবিত্রতা পরিচ্ছন্নতা ও অলৌকিক ভাব গম্ভীরতা সুউচ্চে তুলে ধরে রেখেছে।
বর্তমানে কিছু উগ্র নারীবাদী মুসলিম নারীদের উসকানি দিতে কিছু সস্তা ¯েøাগান ব্যবহার করে। বলে, সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা চাই। অথচ ইসলাম নারীদের সমতাই শুধু নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের অধিক সুযোগ ও সীমাহীন মর্যাদা দিয়েছে। যেখানে দেখা যাবে নারীর সুযোগ কিছু কম সেখানে তার ছাড় অনেক বেশী। যেখানে দেখা যাবে তার অধিকার কিছুটা কম সেখানে দেখা যাবে তার দায়িত্ব আরও অনেক কম। পৃথিবীর সব নারীকে ইসলাম বিবাহ প্রথার মাধ্যমে পুরুষের ওপর নির্ভর করে নিজের ও নিজ সন্তানাদির জীবন ভার বহনের বিধান করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে কোরআন স্পষ্ট বলেছে, ‘পুরুষ নারী তথা পরিবারের ওপর কর্তৃত্বশীল।’ অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ঈমানদার নারী ও পুরুষের মধ্যে যারাই সৎকাজ করবে তারা সমানভাবে আল্লাহর নিকট পুরস্কৃত হবে।’ অপরদিকে মহানবী সা. তার একাধিক হাদীসে নারীর প্রতি সম্মান, তাদের সুরক্ষা, সুশিক্ষা, কন্যাশিশুর লালন ও সেবার বিনিময় জান্নাত, জননীর প্রতি পরম শ্রদ্ধা ও সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। যার সবগুলো পুরুষের চেয়ে বহুগুণ বেশী। ইচ্ছে করলে কেউ বলতে পারবে, ইসলাম অনেকাংশেই পুরুষের চেয়ে বেশী নারীবান্ধব। অন্যান্য ধর্ম ও মতবাদে নারী চিরদিন অবহেলিত ও লাঞ্ছিত বিধায় নারীবাদের জন্ম। নারীমুক্তির সংগ্রাম সেসব স্থানে শোভা পায়। কিন্তু ইসলামে কথিত নারীবাদের কোনো জায়গা নেই। তার ব্যক্তিগত, প্রকৃতিগত ও দায়িত্বগত বৈশিষ্ট্যের জন্যই কোনো নারী পুরুষের ঈদের জামাতে, জুমার জামাতে বা ৫ ওয়াক্ত নামাযের জামাতে ইমাম হতে পারেন না। যদি হন তাহলে এটি একটি হারাম কাজ বলে বিবেচিত হবে। তাদের নামায শুদ্ধ হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। বরং শরীয়তের বহুবিধ হুকুম তরক করা ও বিধান লঙ্ঘন করার পাপে তারা নিমজ্জিত হবেন। শুধু তাই নয় ইসলামে যেসব জায়গায় ভÐপীরেরা বেশরা পদ্ধতিতে নারী-পুরুষ সম্মিলিত জিকির, ওরশ, উৎসব ইত্যাদি করে সেসবের বিরুদ্ধেও ইসলাম যুদ্ধ ঘোষণা করে রেখেছে। সুতরাং তরুণীর ইমামতিতে একটি বদ্ধঘরে কয়েকটি লোক জুমা পড়ে ফেলা যে মস্তবড় একটি বেহায়াপনা তা একটি শিশুরও বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়।
পৃথিবীতে বহু ধর্ম আছে যেখানে পবিত্রতার কোনো বালাই নেই। জীবনে ফরজ গোসল বা জরুরী অযুর বিধান তাদের ধর্মে নেই। কুরিপু বা যৌন বিষয় থেকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থেকে, উত্তম মানবিক মনোবৃত্তি ও আধ্যত্মিকতা নিয়ে আল্লাহর ইবাদত করা ইসলামের মূল লক্ষ্য। কোনো ধর্মে দেখা যায় যৌনতা এর একটি অনুসঙ্গ। দেখা যায় কখনো বিয়েশাদী করবে না এমন বৈরাগ্য নিয়ে হাজার হাজার যুবক যুবতী এক ধরনের অঘোষিত অন্ধকার জীবনযাপন করছে। শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন কোনো কোনো ধর্মের জাতীয় লজ্জায় পরিণত হয়েছে। কোনো ধর্মে লাখো তরুণীকে শাস্ত্র মতই দেবদাসী আখ্যা দিয়ে চিরদিনের জন্য বারোয়ারি নারীতে পরিণত করা হয়েছে। যৌনদাসী নেই এমন ধর্ম প্রাচীন কালে দেখা যেত না। কোনো ধর্ম এমনও আছে যে, পতিতাগৃহ থেকে মাটি না আনলে সে ধর্মের পূজোই শুদ্ধ হয় না। মূলধারা বিচ্যুত নষ্ট বাউলদের বিষয়াদি আর না-ই বললাম। এসবই বিভিন্ন ধর্মের নিজস্ব বিধান। যা নিয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে ইসলাম যে পবিত্র, পরিচ্ছন্ন ও কলুষমুক্ত বিধান দিয়ে গত প্রায় দেড় হাজার বছর চলে এসেছে এবং যে শ্রেষ্ঠত্বের ফলে সে আজ বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বর্ধিঞ্চু ধর্ম, তার গোড়ায় আঘাত হানার জন্যই যে ইবলিসের চেলারা দেশে দেশে এসব নতুন কাহিনী সৃষ্টি করছে তা সবাইকে বুঝতে হবে। কোনো নতুন চক্রান্ত দেখে বা শুনেই বিচলিত হওয়া যাবে না। অপেক্ষা করতে হবে বিজ্ঞ আলেম, মুফতি ও প্রকৃত ধর্মতত্ত¡বিদদের ব্যাখ্যার। কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।