পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ইসলামী সমাজ, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্র খুব কাছাকাছি বলে মন্তব্য করেছেন মাদরাসা শিক্ষকদের একক ও সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এবং দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন। তিনি বলেন, আমার আব্বা (মরহুম হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহঃ) সব সময় চাইতেন আলেমরা জাতির নেতৃত্ব দেবে। কারণ তারা রাষ্ট্র ও সমাজের সবচেয়ে ভাল মানুষ, সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি। সেই সমাজ ও রাষ্ট্রের আভাস এখন আমরা পাচ্ছি। ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, আমি ২৫ বছর আগে বলেছিলাম এদেশে ইসলামী সমাজ, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৮ বছর চলে গেছে। বেশি দিন বাকি নাই। বিশ্বব্যাপী ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার উত্থান আমরা দেখতে পাচ্ছি। গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে রাজধানীর মহাখালিস্থ গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে আয়োজিত আলোচনা সভা, ইছালে ছওয়াব ও বিশেষ দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাবেক সভাপতি, সাবেক ধর্ম এবং ত্রাণ ও পূনর্বাসন মন্ত্রী, মসজিদে গাউছুল আজম ও দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহঃ) এর ১২তম ওফাত বার্ষিকী উপলক্ষে এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ঢাকা মহানগরী শাখা।
জমিয়াত সভাপতি বলেন, নতুন কিছু গড়ে ওঠার আগে ভাঙচুর হয়। আমরা যদি মধ্যপ্রাচ্যে ধ্বংস ও যুদ্ধ দেখি এটা কিন্তু নতুন একটি ভবন করার আগে যে ভাঙাচুরের কাজ হয়, এটা তারই অংশ। এই ভাঙাচুরের মাধ্যমে নতুন একটি সমাজ বিনির্মাণ হবে আর সেই সমাজ হবে ইসলামী সমাজ। যার নেতৃত্ব দেবে এদেশের আলেম-ওলামারা। শুধু এই দেশের নয়, যদি এদেশের আলেম-ওলামারা নিজেদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারে তাহলে এই উপমহাদেশের মুসলমানদের নেতৃত্বও আসবে তাদের হাতে।
ইসলামী সমাজের সাথে সারা দুনিয়ার নেতৃত্ব আসার একটা পূর্ব লক্ষণ দেখা যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একটা ইসলামী সমাজ আসার আগে এই সমাজের নেতৃত্ব প্রদানের জন্য এখন যোগ্য মানুষের দরকার। বাংলাদেশ সেক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকতে পারে না। মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দ পিছিয়ে থাকতে পারে না। জমিয়াতুল মোদার্রেছীন বিশেষ করে আলিয়া মাদরাসার শিক্ষকরা সেই ডিসিপ্লিন ইসলামী সমাজ এবং সৈনিক তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন। যে স্বপ্ন আমার পিতা দেখে গেছেন।
জমিয়াতের নেতৃত্বে দেশের আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ আছে মন্তব্য করে সংগঠনটির সভাপতি বলেন, জমিয়াতের ডাকে গত ২৭ জানুয়ারি ২ লাখ আলেম-ওলামা. পীর-মাশায়েখ, মাদরাসা শিক্ষক রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুটে এসেছেন। আমরা যদি এভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে আগামীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জায়গা হবে না। ঢাকা শহরে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ডাকলেই ২৫-৩০ লাখ মানুষ ছুটে আসবে।
মরহুম হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহঃ) এর কথা স্মরণ করতে গিয়ে এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, আমার আব্বা ছোটবেলা থেকে সব সময় শিখিয়েছেন, সবচেয়ে সেরা মানুষ হচ্ছেন আলেমগণ। তার কাছে কওমী কিংবা আলিয়া বলতে কোন পার্থক্য ছিল না। সকলের সাথেই তার সুসম্পর্ক ছিল। আমাদের বাড়িতে যখন বড় বড় ও বিজ্ঞ আলেমরা আসতেন তিনি আমাদেরকে দিয়ে তাদের সেবা যতœ করাতেন। আমরা তার কাছ থেকেই শিক্ষা পেয়েছি আলেম-ওলামা, ওস্তাদ, পিতা-মাতার সেবা করার। আর যখনই সুযোগ পেয়েছি আমরা সেই শিক্ষা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।
জমিয়াতের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও গাউসুল আজম মসজিদের খতিব মাওলানা কবি রুহুল আমিন খান বলেন, মাওলানা এম এ মান্নান (রহঃ) যে বাংলাদেশ দেখতে চাইতেন আগামী দিনে তার সৈনিকেরাই তা নির্মাণ করবে। এজন্য মাদরাসা ছাত্রদের তৈরি হতে হবে, সাংস্কৃতিক বিপ্লব আনতে হবে। সকল রাজনীতি বিদদের একই প্লাটফর্মে এম এ মান্নান এনেছিলেন উল্লেখ করে রুহুল আমিন খান বলেন, রাজনীতিবিদদের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু পরস্পরের প্রতি আন্তরিকতা ও সৌহার্দ্য না থাকলে দেশ এগুতে পারে না। মরহুম মাওলানা এম এ মান্ননের সময় সকল রাজনীতিবিদদের তিনি একই প্লাটফর্মে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। যা আজ রাজনীতিতে বিরল দৃশ্য হিসেবে মনে হয়। এটা সম্ভব হয়েছিল তারা রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দক্ষতা, মেধা ও যোগ্যতার বলেই। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটে দেশ ও জাতি মাওলানা এম এ মান্নান (রহঃ) এর অভাব সবচেয়ে বেশি অনুভব করেছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা ব্যর্থ হয়েছে কিন্তু আজ যদি প্রখ্যাত ওই আলেম বেঁচে থাকতেন তাহলে তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে এই সমস্যার সমাধান করতেন। যেমনটা তিনি করেছিলেন ১৯৮৮ সালের বন্যার সময়। সে সময় ত্রাণের জন্য মানুষের হাহাকার অবস্থা সৃষ্টি হতে চলেছিল কিন্তু মাওলানা এম এ মান্নান তার দক্ষ নেতৃত্বে ও মধ্যপ্রাচ্যের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে সেই সমস্যা থেকে উত্তোরণ করেন।
জমিয়াত মহাসচিব শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, এক সময় ছিল মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন ছিল না, মাদরাসা শিক্ষার মান ছিল না। সে সময় শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, মর্যাদা ও মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য হাল ধরেন মরহুম হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহঃ)। মাদরাসা শিক্ষকসহ বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের দুঃসময়ে তাকে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি নির্বাচন করা হয়। সে সময় শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বলতে কিছুই ছিল না। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর স্কুল-কলেজ-মাদরাসা শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ করেন। সকল দরবারের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনেন। তার নিরলস পরিশ্রমেই শিক্ষকরা বেতন স্কেল পেয়েছেন। মসজিদের বিদ্যুত-গ্যাসের বিল মওকুফ হয়েছে, সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার করার জন্য তিনিই প্রথম দাবি তোলেন এবং সরকারকে এর যৌক্তিকতা বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন বলেই রোববারের পরিবর্তে শুক্রবার ছুটি নির্ধারণ করা হয়। শুধু তাই নয়, ইসলামী মিশন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, কারিকুলাম সবকিছুই তার অবদান। এসময় উপস্থিত মাদরাসা ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জমিয়াত সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন নাস্তিকতা, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত যে সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন তার নেতৃত্ব দিতে হবে মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকেই।
দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী বলেন, শিক্ষকদের জীবনের মান উন্নয়ন ও সমাজের দৃষ্টিতে সুদৃঢ় করার জন্য “মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান (রহঃ) জমিয়াতুল মোদার্রেছীন রেখে যান। এই সংগঠনটিকে আজ এই পর্যায়ে আনা সম্ভব হয়েছে তার রেখে যাওয়া সুদৃঢ় ভিত্তির কারণে। দেশে অনেক শিক্ষক সংগঠন আছে কিন্তু জমিয়াতের মতো একটিও পেশাজীবী সংগঠন পাওয়া যাবে না। মাওলানা এম এ মান্নান (রহঃ) ছিলেন একজন দুরদর্শি স্বাপ্নিক। একাধারে আধ্যাত্মিক নেতা, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক ও জাতির নীতিনির্ধারক। তিনি বলেন, এম এ মান্নান (রহঃ) যেসব প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন তার সবকটিই প্রকৃত দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির কাজ করে যাচ্ছে। তবে দেশ ও সমাজকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি আলিয়া ধারায় শিক্ষিকতদের চরিত্রবান, আধুনিক শিক্ষা, বিজ্ঞান, গণিত, ইংরেজিসহ ধর্মীয় বিষয়ে যোগ্য হিসেবে গড়ে ওঠার আহŸান জানান। এই শিক্ষিত মানুষরাই আগামী দিনে এই অঞ্চলের ১০০ কোটি মুসলমানের নেতৃত্ব দিবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ ড. মাওলানা এ কে এম মাহাবুবুর রহমান, মাওলানা আব্দুল মান্নান জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধক ছিলেন। বোখারি, মুসলিম, তিরমিজি, কাশশাফ ইত্যাদি পড়াতেন। আমরা কিতাব খুলে ধরতাম তিনি ব্যাখ্যা করতেন। জীবনের মূল্যবান অনেক দর্শন তার কাছ থেকে শিখেছি।
জমিয়াতের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বড় রাজনীতিবিদ ছিলেন তিনি। ভিন্নমতের নেতাদের সাথেও সামাজিক সম্পর্ক রাখতেন। বঙ্গবন্ধু তার চেয়ে বয়সে ১৫ বছর বড় হওয়া সত্তে¡ও তাকে মওলানা বলে সম্বোধন করতেন। দেখা হলে জানতে চাইতেন গভর্নর সাহেবের খবর কি? ক্ষমতাসীন দলের অনেক অভিজাত ও পোড় খাওয়া নেতা যে কোন সুযোগে এসে মাওলানা এম এ মান্নান সাহেবের সাক্ষাৎ ও দোয়া নিতেন। বর্তমান ও সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রীরই ছিল তার সাথে সুন্দর মানবিক সম্পর্ক। তারা মাওলানার যে কোন সৌজন্য ও সহায়তা চেয়ে কোনদিন বিমুখ হননি।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ঢাকা মহানগরীর সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা ড. নজরুল ইসলাম আল মারুফের সভাপতিত্বে ও অধ্যক্ষ মাওলানা জাফর সাদেকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা এ কে এম মনোয়ার আলী (সিলেট), ইসলামি আন্দোলনের যুগ্ম মাহসচিব মাওলানা এ টি এম হেমায়েত উদ্দীন, , অধ্যক্ষ মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম মজুমদার, মাওলানা আব্দুল আলিম রেজভী, আ ন ম মাহবুবুর রহমান, মাওলানা এম এ কাইয়ুম আল-আজহারী, মুহাদ্দীস ও মুফতি মাহবুবুর রহমান, মাওলানা অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইসমাইল, অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তাহের (সিরাজগঞ্জ), অধ্যক্ষ মাওলানা আবু সাঈদ (টাঙ্গাইল), অধ্যক্ষ মাওলানা আবু রায়হান ভূইঁয়া (নরসিংদী), অধ্যক্ষ মাওলানা শহীদুল ইসলাম (বগুড়া), অধ্যক্ষ মাওলানা ইজহার (ঢাকা), মাওলানা কুতবউদ্দীন, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা আবু জাফর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, মাওলানা মোশাররফ হোসেন, অধ্যক্ষ মাওলানা তাজুল আলম প্রমুখ। এছাড়াও মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ঢাকা মহানগরীর নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ, ওলামায়ে কেরাম, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও মনোনীত ছাত্র প্রতিনিধি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।