পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান খুঁজে বের করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহবান পুনর্ব্যক্ত করে এ বিষয়ে কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন এবং একই সঙ্গে মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করেছে।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সুইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে সুইস প্রেসিডেন্ট আঁলে বেরেসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছি আমরা এবং আমি সুইস প্রেসিডেন্টকে বলেছি এই সমস্যার গোড়া রয়েছে মিয়ানমারে। কাজেই এর সমাধানও সেখান থেকেই খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, তিনি এ ক্ষেত্রে কফি আনান কমিশনের রিপোর্টের পূর্ণ এবং অবিলম্বে বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। কারণ এটি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সফলভাবে নিজ দেশের বাড়িঘরে প্রত্যাবাসন এবং তাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তার জন্য জরুরি। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে এবং এর বাইরেও রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়ে সুইজারল্যান্ডের ভ‚মিকার প্রশংসা করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি নিশ্চিত যে, আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডও সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ দ্রæত সমাধানের জন্য মিয়ানমারের উপর চাপ অব্যাহত রাখবে। তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে পাঁচ দফা প্রস্তাবও তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে দারিদ্র্য বিমোচন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ সরকারের নেয়া উদ্যোগের প্রশংসা করেন সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় প্যারিস চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নের উপরও জোর দেন তিনি। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা ও বাণিজ্য নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন বেরসে। শেখ হাসিনা এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করার উপর জোর দেন।
পরে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে সব ধরনের সম্পর্ক উন্নয়নের আকাক্সক্ষা আমরা লক্ষ্য করেছি। সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে চায় বলেও জানান তিনি।
সুইস প্রেসিডেন্ট আঁলে বেরেস তার বিবৃতিতে রোহিঙ্গা সঙ্কটের টেকসই সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য ১২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাংক (প্রায় ১২ মিলিয়ন ডলার সমতুল্য) প্রদানের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এটি হবে গত অক্টোবরে রোহিঙ্গাদের জরুরি মানবিক সাহায্য হিসেবে সুইজারল্যান্ড প্রতিশ্রæত আট মিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত।
সুইস প্রেসিডেন্ট মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের প্রতি সংহতি, সহায়তা এবং সুরক্ষা প্রদানের জন্য জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের ভ‚য়সী প্রশংসা করেন। বেরেসে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গাদের সফল প্রত্যাবাসনের জন্য সম্পাদিত চুক্তিকে সমস্যা সমাধানের জন্য একটি কার্যকরি পদক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেন।
বঙ্গবন্ধু ও শহীদদের প্রতি সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের শ্রদ্ধা
সুইজারল্যান্ডের সফররত প্রেসিডেন্ট আঁলে বেরেস গতকাল ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সুইস প্রেসিডেন্ট যাদুঘরের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন। এ সময় সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত অন্যান্যের মধ্যে তার সঙ্গে ছিলেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম ও বঙ্গবন্ধুর নাতি রেজোয়ান সিদ্দিক ববি সুইস প্রেসিডেন্টকে বঙ্গবন্ধু ভবনে অভ্যর্থনা জানান।
বঙ্গবন্ধুর নাতি রেজোয়ান সিদ্দিক ববি প্রেসিডেন্টকে যাদুঘরের ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত করেন এবং তাকে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত জীবনীসহ বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক কিছু বই উপহার দেন। পরে বেরেস পরিদর্শক বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
এরআগে সুইস প্রেসিডেন্ট সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রেসিডেন্ট সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল সুইস প্রেসিডেন্টকে গার্ড-অব অনার প্রদান করে। তিনি পরিদর্শক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। বেরেস চার দিনের সরকারি সফরে গতকাল ঢাকা পৌঁছেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে সুইস প্রেসিডেন্টের শ্রদ্ধা
সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে : সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশ সফরত সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আঁলা বেরসে। কড়া নিরাপত্তায় মোটর শোভাযাত্রা সহকারে গতকাল সোমবার বেলা ১১টার সময় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সড়ক পথে তিনি স্মৃতিসৌধে পৌছেন। এসময় সেদেশের কয়েকজন মন্ত্রী তার সফরসঙ্গী ছিলেন। সেখানে তাকে স্বাগত জানান, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা:এনামুর রহমান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ঢাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান।
সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আঁলা বেরসে স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এসময় তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাকে গার্ড অব অনার সম্মান প্রদান করেন।
এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। তখন বিউগলে বেজে ওঠে করুন সুর। প্রায় ২০ মিনিট জাতীয় সৃতিসৌধে অবস্থান কালে সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আঁলা বেরসে স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন। পরে তিনি স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে একটি ‘নাগেশ্বর’ গাছের চারা রোপণ করেন।
উল্লেখ্য, চার দিনের সরকারি সফরে রোববার দুপুরে একটি বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসেন সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আঁলা বেরসে। তাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। সেখানে সুইস প্রেসিডেন্টকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা দেওয়া হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।