Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৩০ নয়, এনবিআর ভবন হবে ১২ তলা

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ষ সরকারি চাকরিজীবিদের জন্য ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে
ষ একনেকে ৭৪২৩ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন
দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় স্থবির হয়ে পড়ে থাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নিজস্ব ভবনটি ১২তলা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এনবিআর থেকে ভবনটি ৩০তলা ভিত্তির ওপর ৩০ তলা নির্মাণের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে উল্টো এই প্রস্তাব যারা নিয়ে এসেছে তাদেরকে ভৎসনা করেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক বছর আগে একই প্রস্তাব আমার কাছে নিয়ে আসা হয়েছিল। তখনো আমি নিষেধ করেছি ৩০ তলা করা যাবে না। একই প্রস্তাব আবারও নিয়ে আসা হলো। শেরেবাংলা নগর এলাকায় যেখানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিজস্ব ভবনের কাজ চলছে, সে এলাকায় ১৫০ ফুটের বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ৩০ তলা নয়; এনবিআর ভবন হবে ১২ তলাবিশিষ্ট’। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন। এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত সাত তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, রাজস্ব আদায়ে গতি আনার পাশাপাশি এনবিআরের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবন’ নির্মাণ শিরোনামের প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ২০ তলাভিত্তির ওপর ১২ তলা ভবন নির্মাণে ওই সময়ে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৪১ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ২০১৪ ও ২০১৬ সালে ব্যয় বাড়ানো ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ মোট দুইবার বাড়ানো হয়। পরের বছর প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন করে ২০ তলা ভিত্তির পরিবর্তে ৩০ তলাভিত্তির ওপর ৩০ তলা ভবন নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে একনেক সভায় উত্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী তা অনুমোদন না দিয়ে ফেরত পাঠান। তখন প্রকল্পের মেয়াদ তৃতীয় দফায় ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। অভিযোগ আছে, পরিকল্পনা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট কারো কাছ থেকে অনুমোদন না নিয়ে নকশা পরিবর্তন করে ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০তলা ভিত্তি করা হয়েছে। এবং ভিত্তি তৈরিতে শত কোটি টাকা খরচ করে ফেলা হয়েছে কারো অনুমোদন ছাড়াই। যদিও এনবিআর থেকে দাবি করা হয়েছে, অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মতি নিয়ে তারা ৩০তলা ভিত্তি করেছে। গতকালের একনেক সভায় খরচ হওয়া ওই টাকাকে ‘অপচয়’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ এই পথ চলায় প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারলেও ব্যয় বেড়েছে ২৫০ শতাংশ। এদিন একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৪৯৫ কোটি টাকায়। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এই টাকা যোগান দেওয়া হবে। চতুর্থবারের মতো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী বছর জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকার কারণে ১২তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ ৯ বছরেও শেষ হয়নি। উল্টো খরচ বেড়েছে ২৫০ শতাংশ।
এদিকে রাজধানীতে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থাপনা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের তথ্যমতে, ঢাকা মহানগরীতে পদায়িত ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯১৫ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাত্র ৮শতাংশ আবাসন সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাই অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নিম্নমানের বেসরকারি বাসভবনে জীবযাপন করতে হয়। যা প্রকারান্তরে তাদের কর্মদক্ষতায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিষয়টি অনুধাবনপূর্বক একনেক সভায় রাজধানীর মিরপুরে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ‘ঢাকাস্থ মিরপুর ৬নং সেকশনে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ২৯০ কোটি টাকা। ২০২০ সাল নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। রাজধানীর উত্তরায় র‌্যাবের জন্য একটি স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণে আলাদা একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৪৯৫ কোটি টাকা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, একনেক সভায় সাত হাজার ৪২৩ কোটি টাকার মোট ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার পুরোটাই যোগান দেওয়া হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। ১১টি প্রকল্পের মধ্যে আটটি সংশোধিত। এবং তিনটি নতুন প্রকল্প। সরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও মান বাড়াতেই ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, হাওর অঞ্চলের জন্য আলাদা আলাদা প্রকল্প নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া মাছ বাজারজাতকরণে ভ্যান কেনাসহ বিকল্প ফসল উৎপাদন ও বিকল্প আয়ের পথ খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন। এজন্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, হাওর উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
একনেক সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দুই হাজার ২৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে দীর্ঘ সেতু নির্মাণ, ২১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামে বিমান সেনা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন, বৃহত্তর ফরিদপুর গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় পর্যায়), ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ইন্দ্রপুল হতে চক্রশালা পর্যন্ত বাঁক সরলীকরণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ