Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সমৃদ্ধ গবেষণার অভাবে পাহাড়ের অনেকগুলো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিীর ভাষা তত্তে¡র হদিস নেই

রাঙামাটি জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বর্ণময় সংস্কৃতি ও নানা জাতিগোষ্ঠি অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্তত ১৩টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্টির বসবাস রয়েছে। এইসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির মানুষের স্বকীয় সংস্কৃতিসহ নিজস্ব ভাষা ও রীতিনীতি রয়েছে। তবে এইসব জাতিগোষ্ঠির বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে তেমন কোনো গোছালো ও সম্মৃদ্ধ গবেষণা না হওয়ায় অনেক ভাষা বিলীন হয়ে যেতে বসেছে। হারিয়ে যাচ্ছে তাদের অতীত ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য।
উল্লেখ্য যে, প্রত্যন্ত পাহাড়ে বসবাসরত এই ১৩টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির মধ্যে অনেকগুলো জাতিস্বত্তাও ইতোমধ্যে বেশ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তাই এসব জাতি স্বত্তার সক্রিয় বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে এবং তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে সম্মৃদ্ধ গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন পাহাড়ের অভিজ্ঞ মহল।
প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠির অধিকাংশ শিশুই সাবলিলভাবে বাংলা বলতে ও বুঝতে না পারার কারনে তাদের মধ্যে স্কুল ভীতি তৈরি হচ্ছে এবং অকালেই প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে তারা বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়ছে।
এই বিষয়টি অনুধাবন করেই বর্তমান সরকার জাতীয় শিক্ষানীতিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিগুলোর নিজস্ব ভাষায় প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই প্রণয়নের বিষয়টি সংযোজন করলেও এখনো পর্যন্ত মাত্র চারটি ভাষায় বই প্রকাশ করতে পেরেছে। এরমধ্যে পাহাড়ের পাঁচটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির মধ্যে তিন ভাষার বই বিতরণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ১৩টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির মধ্যে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষার বর্ণ ও ব্যাকরণের হদিস পাওয়া গেলেও অন্যান্য ভাষাগুলোর তেমন কোনো বর্ণ পরিচয় বা ভাষারীতি এখনো আবিস্কার করা সম্ভব হয়নি।
এরমধ্যে তঞ্চঙ্গ্যা ভাষার বর্ণ নিয়ে একটি গবেষণা বেশ কিছুদূর অগ্রসর হলেও তা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মাঝপথেই থমকে আছে। তাই পাহাড়ের এই বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্যে ভাষার এই মাসে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মানুষজন।
এদিকে রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা জানিয়েছেন, বিগত ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ক্ষুদ্র তিনটি নৃগোষ্ঠির শিক্ষার্থীদের জন্যে সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত বই বিতরণ করা হয়েছে। রাঙামাটি জেলার ৬১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই বইগুলোর মাধ্যমে পাঠদান দিতে চাকমা-মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ৩৬৫ জনকে বাছাই করে আমরা জেলা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট এর মাধ্যমে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু করেছি। প্রত্যেক বিদ্যালয়ে আপাতত একজন করে প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগের ধারাবাহিকতায় এই ৩৬৫ জনের পরে আরো প্রায় ২৫০জন শিক্ষককে আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই এই প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হবে। নিজেদের সর্বোচ্চ সাধ্যের মধ্যে পর্যায়ক্রমে রাঙামাটির প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাতৃভাষায় প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির শিশুদের পাঠদান প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, পাহাড়ে এখনো অনেক ভাষারই নিজস্ব অক্ষর তথা রীতিনীতি লিপিবদ্ধ আকারে নেই। সেগুলো তৃণমুল পর্যায় থেকে খতিয়ে বের করে আনতে হলে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। এই ক্ষেত্রে সরকারিভাবে গবেষণার ব্যাপারে কিছু করা যায় কিনা রাঙামাটি জেলা পরিষদ সেবিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
এদিকে বিগত ২০১৫ সালে বেসরকারি উদ্যোগে রাঙামাটি শহরে গড়ে উঠেছে চাকমা ভাষার গবেষণা ও প্রশিক্ষণ সেন্টার। এই প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল শান্তি চাকমা জানালেন, বিলুপ্ত হতে যাওয়া পাহাড়ি ভাষাগুলোর মধ্যে চাকমা ভাষাটি নিয়ে আমি গবেষণা করে আমাদের নতুন প্রজন্মের এই ভাষা ছড়িয়ে দিতে এই গবেষণাধর্মী প্রশিক্ষন সেন্টারটি চালু করেছি। বিগত সময়ের মধ্যে আমি এই পর্যন্ত অন্তত দুই হাজার শিক্ষিত যুবককে আমি চাকমা ভাষায় প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলেছি। জেলায় গত বছর থেকে বিতরন করা মাতৃভাষার বইগুলো শিক্ষকের অভাবে পাঠদান করতে পারছেনা বিষয়টি পরিলক্ষিত করে রাঙামাটি জেলা পরিষদের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেসরকারিভাবে শিক্ষক নিয়োগের সময় যাতে করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই সমস্ত যুবকদের নিয়োগ দিতে পারে সেইলক্ষ্যে আমি এদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সরকারিভাবে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হলে পাহাড়ে বসবাসরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিদের ভাষাজ্ঞান, সংস্কৃতি ও রীতিনীতিকে লিপিবদ্ধ আকারে সংরক্ষণ সম্ভব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাহাড়

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ