পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সহায়ক সরকারের দাবি আবারো নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান। সংবিধান অনুযায়ী সহায়ক সরকার বলে কোনো সরকার গঠন করার বিধান নেই। আমাদের সরকার গণতন্ত্রকে সব সময় সমুন্নত রাখবে, সেজন্য সংবিধান পরিপন্থি কোনো সরকার আমরা গ্রহণ করবো না।
গতকাল বুধবার বিকেলে সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি তানভীর ইমামের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান। সংবিধান অনুযায়ী সহায়ক সরকার বলে কোনো সরকার গঠন করার বিধান নেই। আমাদের সরকার গণতন্ত্রকে সব সময় সমুন্নত রাখবে, সেজন্য সংবিধান পরিপন্থি কোনো সরকার আমরা গ্রহণ করবো না। তিনি বলেন, বিএনপির জন্ম হয়েছে মার্শাল ল জারি করে সংবিধান লঙ্ঘন করার মাধ্যমে অবৈধ পথে। তাই অবৈধ দাবি করা তাদের অভ্যাস। জিয়াউর রহমানের আমলে ভোটারবিহীন গণভোট (হ্যাঁ/না ভোট) করেছিল বিএনপি এবং সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে কোনো নিয়মনীতি অনুসরণ না করে তৎকালীন বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে সরিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে সরকার গঠন করেন। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পরবর্তীতে তার ওই কর্মকান্ড অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সরকার গঠন করার পর মাগুরা ও ঢাকার উপ-নির্বাচনে নজিরবিহীন কারচুপি করেছিল এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে অবৈধ সরকার গঠন করে বিএনপি। পরে গণআন্দোলনের সম্মুখীন হয়ে দেড় মাসের মধ্যে তাদের পতন ঘটে। ওই সময় বিএনপি নির্বাচনী ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল। ২০০৬ সালে সংবিধানে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের স্পষ্ট রূপরেখা থাকা সত্তে¡ও তাদের পছন্দসই ব্যক্তিকে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের প্রধান করার চেষ্টা করে নির্বাচনের নামে প্রহসন করার উদ্দেশ্য থাকায় দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং একটি তত্ত¡াবধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থাকে। এসব ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বিএনপি কোন দিনই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার পক্ষে ছিল না। জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এর আগে সরকারি চাকরির বয়স বাড়িয়েছি। কিন্তু বর্তমানে চাকরির বয়স বাড়ানো যাচ্ছে না। চাকরির বয়স বাড়ালে যারা চাকরি প্রার্থী তারা বঞ্চিত হবে। চাকরির বয়স বাড়ালে নতুন পদ কম খালি হবে। সেক্ষেত্রে পদ খালি না হলে আমরা নতুন লোক নেব কিভাবে? আপাতত সরকারি চাকরির বয়স বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই।
শেখ মো. নূরুল হকের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে বর্তমানে শীতকালে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে প্রায় ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট এবং এর বিপরীতে উৎপাদন ক্ষমতা ১৬ হাজার ৪৫ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভসহ)। ফলে বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। তবে গ্রীষ্মকালে সঞ্চালন ও বিতরণ নেটওয়ার্কের সীমাবদ্ধতা, গ্যাস সরবারাহের অপ্রতুলতা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে। শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সারের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বাস্তবে ২০১৮-১৯ সালের মধ্যেই দেশের শতভাগ এলাকায় নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানির কাছ থেকে প্রাপ্ত চাহিদার তথ্য অনুযায়ী আসন্ন সেচ মৌসুম ও গ্রীষ্মকালীন সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ১১ হাজার ৫০০-১৩ হাজার মেগাওয়াট হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিতকল্পে বিদ্যুৎ খাতে যুগোপযোগী বাস্তবসম্মত টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়নপূর্বক নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছে। এর ধারাবাহিতকায় ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সে গুলো হচ্ছে, বর্তমানে মোট ১৩ হাজার ৭৭১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৪৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিমার্ণাধীন রয়েছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ২০১৮ হতে ২০২৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে। মোট ৫ হাজার ৯২ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ২০১৮ হতে ২০২২ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে। মোট ২০ হাজার ৭৩২ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনাধীন রয়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ভারতে ৩টি স্থান হতে ২ হাজার ৩৩৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ আমদানি পর্যাক্রমে অব্যাহত রয়েছে, যা ২০১৮ হতে ২০২২ সালের মধ্যে শুরু হবে। বর্তমানে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারত হতে আমদানি করা হচ্ছে।
ডিজিটাইজেশনের সঙ্গে নিরাপত্তায়ও লক্ষ্য রাখতে হবে \ এর আগে সকালে কাকরাইলে বাংলাদেশের সুপ্রিম অডিট ইনস্টিটিউটের নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতি যখনই আমরা গ্রহণ করব, সাথে সাথে তার নিরাপত্তার দিকটা কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, যথাযথ নিরাপত্তা না থাকার কারণে রিজার্ভ চুরির মতো ঘটনাও ঘটেছে। ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রæয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে জালিয়াতি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে সরিয়ে নেওয়া হয়। দেশের অভ্যন্তরের কোনো একটি চক্রের সহায়তায় এই অর্থ পাচার হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এই পদ্ধতিগুলো যখনই আমরা গ্রহণ করব, তার সাথে সাথে তার ফায়ারওয়াল থাকতে হবে, নিরাপত্তা থাকতে হবে। সাইবার ক্রাইম একটা ক্রাইম, যা অনেক সময় আমাদের অনেক তথ্য ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে। সেখান থেকেও কিভাবে নিরাপত্তটা দিতে হবে, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। সেটা যদি আমরা না করি, তাহলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রধানমন্ত্র বলেন, সরকারি অর্থে অপচয়, আত্মসাৎ, জালিয়াতি, চুরি, বিধিবহির্ভূত পরিশোধ, আয়কর ও ভ্যাট আদায় না করা, আইন, বিধি, নির্বাহী আদেশ পালন না করা, সরকারি নিয়মনীতি ও আর্থিক বিধি-বিধান অনুসরণ না করা, আদায়কৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না করাসহ নানা অনিয়ম উদঘাটনে অডিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেবে। সুশাসন নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতি হ্রাসের লক্ষ্যে আধুনিক অডিট ব্যবস্থার উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমাদের সরকারের ধারাবাহিক দুই মেয়াদে দেশে দুর্নীতি অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনও এখন অনেক স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সরকারের এমপি-মন্ত্রীদেরও তারা যদি মনে করে জিজ্ঞাসাবাদ করবে আমরা কিন্তু বাধা দিই না। আমাদের সংসদ সদস্যরাও গিয়ে তথ্য দিয়ে আসছে। অনুষ্ঠানে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, অর্থ সচিব মোহাম্মাদ মুসলিম চৌধুরী এবং কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেলারেল মাসুদ আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।