চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
গাউসে যামান মুর্শিদে বরহক আল্লামা হাফেজ কারী সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ্্ রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহ ১৩৩৬ হিজরী মোতাবেক ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের হাজারী জেলার সিরিকোট শেতুলা শরীফে এক স¤্রান্ত মুসলিম পরিবারে সৈয়দ বংশে জন্ম গ্রহণ করেন। তিঁনি বংশ পরম্পরায় হুজুরে কায়েনাত সরকারে দোআলম প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চল্লিশতম অধ:স্তন পুরুষ ছিলেন। তাঁর বুযর্গ আব্বাজান ছিলেন তৎকালিন পেশওয়ায়ে আউলিয়া-কুতুবুল আক্বতাব আল্লামা হাফেজ আহ্মদ শাহ্ সিরিকোটি পেশওয়ারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহ। তার মাতা-সৈয়দা খাতুন এর প্রথম শাহজাদা হযরত তৈয়ব শাহ্ রাহমাতুল্লাহ আলাইহ। উনার জন্মের কিছু দিন পর আল্লামা সৈয়দ আহ্মদ শাহ্ সিরিকোটির ঘরে এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বের আগমন ঘটে। উহার ফলশ্রæতিতে এ ধরা ধামে তাঁর পবিত্র নাম করণ করা হয় সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ্্। শৈশবকাল থেকে ঘটতে থাকে অপূর্ব সব কারামাত।
কারণ তিঁনি জন্মগতভাবে মাদার জাত অলি ছিলেন। জন্মের কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর ফয়েজ ও বরকতের জন্য শিরনী খাওয়ার শুভ মুহূর্তের আগমন ঘটে। সিরিকোটি রহ্মতউল্লাহ্ আলাইহ খাজা আব্দুল রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহিকে দাওয়াত করেন। তৈয়ব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলাইহির বয়স যখন ৬ মতান্তরে ৭ মাস শিশু তৈয়ব শাহ্ কে সম্বোধন করে খাজা চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তৈয়ব তুমি শিরনী না খেলে আমিও শিরনী খাব না। এই কথা শ্রবণ করা মাত্রই শিশু অলি তৈয়ব শাহ্ তপ্ত শিরনীতে তার পবিত্র হাত মোবারক ঢুকিয়ে দিলেন। এই অবস্থা অবলোকন করে বুদ্ধিমত্তা ও অলৌকিকত্ব দেখে পাক আল্লাহ্্ পাকের শুকরিয়া আদায় করলেন। সময়ের শ্রোত ধারায় দুই বছর বয়সে তার স্বীয় আম্মাজান তাকে নিয়ে চৌহরভী শরীফে হযরত খাজা আব্দুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহ আলাইহির দরবারে গেলেন। শিশু তৈয়ব শাহ্ মাতৃ দুগ্ধ পান করার প্রয়াসে হাত মোবারক বাড়াতে চাইলে খাজা চৌহরভী বলে উঠলেন, তুমি বড় হয়ে গেছো দুগ্ধ পান করো না। মহান আল্লাহ্ পাকের অশেষ রহমতে শিশু তৈয়ব শাহ্্ দুগ্ধ পান করা হতে বিরত রইলেন। কখনো আম্মাজান দুগ্ধ খাওয়াতে চাইলে তিনি বলে উঠতেন, বাবাজান নিষেধ করেছেন আমি দুগ্ধ পান করবো না। ৫/৬ বছর বয়সে শিশু তৈয়ব শাহ্্ সৈয়দ আহমদ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহ আলাইহির নিকট বিনয়ের সাথে বলে ফেললেন, নামাজে আপনি আল্লাহ্কে দেখেন আমারও আল্লাহপাক কে দেখতে ইচ্ছে জাগে আমিও দেখবো। পিতা সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহ আলাইহি তখনই আল্লাহর নিকট তাঁর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার জন্য দোয়া করেন। হযরত তৈয়ব শাহ্ রাহমাতুল্লাহ আলাইহি এর বয়স যখন আট বছর তখন তিনি ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ আহ্ম্মেদ সিরিকোটির সাথে খাজায়ে খাজেগান হিন্দেল অলি স¤্রাটে আলা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ-এর দরগাহ্ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তিনি গরীবে নেওয়াজের মাজার চত্বরে হাস্যউজ্জল হয়ে ঘুরে ঘুরে জিকির করছিলেন এমন সময় হঠাৎ নূরানী তাজাল্লী পূর্ণ এক বুজুর্গ তৈয়ব শাহ্ রাহমাতুল্লাহ আলাইহিকে ফয়েজযাত পূর্ণ দোয়া করলেন, এবং পরক্ষণে গায়েব হয়ে গেলেন। উক্ত বিষয়টি তিঁনি তাঁর পিতা সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহ আলাইহিকে অবগত করলেন। তিঁনি তাঁর পবিত্র জবান মোবারকে উচ্চারণ করলেন, বাবা উনিতো খাজা গরীবে নেওয়াজ ছিলেন। তাঁর পর হতে তাঁর রুহানী শক্তি আধ্যাত্বিকতার দিকে দীপ্তিমান সূর্যেরমত প্রকাশিত হতে শুরু করলো। হযরত তৈয়ব শাহ্ রাহমাতুল্লাহ আলাইহি-এর শিক্ষা জীবনের গুরু ছিলেন তাঁর বুজুর্গ পিতা সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহ্ আলাইহি। মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি ১৯২৭ সালে শিক্ষা স্তরে তাজবীদ বা বিশুদ্ধ পঠন রীতি সহ পবিত্র কোরআন শরীফ হেফজ করেন। পিতার ফয়েজ ও খাজা চৌহরভী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি প্রতিষ্ঠিত হরিপুর রাহ্্মানিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায় ১৬ বছর যাবত শ্রম মেহনত করে শরীয়তের সকল উচ্চতর স্তর ক্বোরআন শরীফ, হাদিস শরীফ তাফসীর, ফিকাহ্্, নাহু মানতিক, আকাঈদ, দর্শন, বালাগাত ও আরবী সাহিত্যসহ জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার উচ্চতর জ্ঞান অর্জন করেন। অসাধারণ স্মৃতি ও বুজুর্গদের ফয়েজের মাধ্যমে ১৯৪৩ সালে শিক্ষার স্তর সমাপন করেন। হুজুর কেবলা হযরতুল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ্্-এর ঔরশজাত সন্তানদের মধ্যে সর্ব প্রথম ছিলেন তৈয়ব শাহ্ রাহমাতুল্লাহ আলাইহি। এক কথায় আল্লাহ্্র মনোনীত ইসলাম ধর্মের সঠিক রূপ রেখা সূন্নি মতাদর্শের একনিষ্ঠ মরদে মুজাহিদ ও সত্য ধর্ম প্রচারে তিঁনি মাজহাবের দিক দিয়ে হানাফী ও তরিকতের দিক দিয়ে হযরত বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি এর অনুসারী ছিলেন। প্রচলিত তরিকা কাদরিয়ার উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে ৪২ বছর বয়সে চট্টগ্রামে অবস্থান কালে পিতা কর্তৃক সিরিকোটি দরবার শরীফে সাজ্জাদা নশীন নিয়োজিত হন।
ঐ সময়ে আন্দর কিল্লা কোহিনূর লাইব্রেরিতে দোতালায় বেশীর ভাগ সময় অবস্থান করতেন। ১৯৫৮ সালে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হযরত সৈয়দ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহ্ আলাইহি খিলাফতের দ্বায়িত্ব ভার দেওয়ার জন্য আহŸান করেন। এমতাবস্থায় সবাই নিরব থাকায় গাউসিয়া চলাকালিন সময় সকল মুরিদের সম্মুখে হযরত আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ্ রাহমাতুল্লাহ আলাইহি খিলাফত দানের ঘোষণা করে তাকে খলিফায়ে আযম পদে ভূষিত করেন। সেই একই তাওহীদের পথ ধারায় ১৯৭৬ সালে পীরে তরিকত হযরত আল্লামা সৈয়দ তাহের শাহ্্ মুজাহিদে দীন ও মিল্লাত হযরত তৈয়ব শাহ্ রাহমাতুল্লাহ্ আলাইহিকে সিরিকোটি দরবার শরীফে তার খেলাফত দান করে তরিকতের সকল কিছু পথ ও মত অর্পণ করেন। সেই মহান বংশধরদের তথা আওলাদে রাসূল এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে আমরা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেয়েছি। এশিয়ার সর্ব বৃহৎ সুন্নি মতাদর্শে জশনে জুলুশ ঈদে মিলাদুন্নবী-এর খ্যাতি কাল কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে এবং প্রতিটি মুসলমান ভাই ও বোনদের মুখে নির্দ্বিধায় উচ্চারিত হবে ইয়া নবী সালামুআলাইকা ইয়া রাসূল সালামুআলাইকা ধ্বনী, ইনশাআল্লাহ্।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।