Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে রেলের সম্পদ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অযত্মে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে রেলের কোটি কোটি টাকার সম্পদ। বছরের পর বছর ররলের শত শত বগি পরিত্যক্ত অবস্থায় বিভিন্ন স্টেশনের বাইরে ফেলে রাখা হয়েছে। পর্যপ্ত নিরাপত্তার অভাবে সেগুলো প্রায়ই চুরি হয়ে যাচ্ছে। পরিত্যক্ত বগিগুলো মাদকসেবী ও ভাসমান পতিতাদের নিরাপদ আশ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। এগুলোকে ঘিরে নানা অপরাধ কর্মকান্ডও চলছে। কোটি কোটি টাকার এই সম্পদ দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করে লোকসান কমানোর সুযোগ থাকলেও রহস্যজনক কারনে তা থেমে আছে। বরং দিন দিন নষ্ট ও চুরি হচ্ছে এসব পরিত্যক্ত বগি ও মূল্যবান যন্ত্রাংশ।
খোঁজ নিয়ে জান গেছে, রেলওয়ে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী পুরনো সেল ডিপোতে প্রায় এক যুগ ধরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে দামি যন্ত্রাংশ, বিপুলসংখ্যক পরিত্যক্ত যাত্রী-মালবাহী বগি। রেলওয়ে সূত্র জানায়, পরিত্যক্ত এসব সম্পদের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। জানা যায়, পূর্বাঞ্চল রেলের মিটার গেজের বগিগুলো পাহাড়তলী ওয়ার্কশপে মেরামত করা হয়ে থাকে। পশ্চিমাঞ্চলের বগিগুলো মেরামত করা হয় সৈয়দপুর ওয়ার্কশপে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিত্যক্ত বা বিভিন্ন কারনে বিকল হয়ে যাওয়া বগিগুলো মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ না থাকায় পাহাড়তলী ওয়ার্কশপের ভেতরে রাখা অন্তত ৬০টি যাত্রী-মালবাহী বগি এবং যন্ত্রাংশ পড়ে আছে। তাছাড়া ওয়ার্কশপে নেয়ার উপযোগী আরও শতাধিক বগি আশপাশের বিভিন্ন ইয়ার্ডে রাখা আছে। এছাড়া ওয়ার্কশপের ভেতরে মার্শলিং ইয়ার্ডে পড়ে আছে আরও শতাধিক বগি। অরক্ষিত এসব পরিত্যক্ত কোচ থেকে প্রতিনিয়তই সিটসহ নাটবল্টু, চাকা, লোহার পাতগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ চোরের দল। বগিগুলো বহুদিন ধরে রাখার কারনে লাইনগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগেও এখানে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটেছে।
পূর্বাঞ্চলীয় রেলের সরঞ্জাম বিভাগের একজন প্রকৌশলী জানান, পাহাড়তলী ওয়ার্কশপসহ পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশন ইয়ার্ডে থাকা পরিত্যক্ত বগির সংখ্যা প্রায় তিনশ’। খোলা আকাশের নিচে বছরের পর বছর ধরে এসব বগি পড়ে আছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ার ঝামেলার কারনে এগুলো বিক্রি করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। দিন দিন এগুলো রোদে পুড়ে, পানিতে ভিজে নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি চুরি হয়ে যাচ্ছে।
পাহাড়তলী ছাড়াও আখাউড়া, লাকসাম, ভৈরববাজার, লাকসাম, তেজগাঁও, টঙ্গী জংশনসহ পূর্বাঞ্চলের ১২টি জংশনে অসংখ্য পরিত্যক্ত বগি পরিত্যক্ত পড়ে আছে। এতে রেল লাইন নষ্ট হচ্ছে, ধ্বংস হচ্ছে বগিগুলোও। রেলের পশ্চিমাঞ্চলেও একই চিত্র। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাসহ পার্বতীপুর, সান্তাহার, বোনারপাড়া, খোলাহাটি, পাকশী, লালমনিরহাট, চাপাইনবাবগঞ্জ, পোড়াদহ, খুলনাসহ রেলস্টেশনগুলোতে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে শত শত বগি ও বিপুল পরিমাণ যন্ত্রাংশ।
পশ্চিমাঞ্চলের একজন প্রকৌশলী জানান, ওয়ার্কশপ তথা বিভিন্ন জংশন-স্টেশন ইয়ার্ডে পরিত্যক্ত বগি ও যন্ত্রাংশ এতটাই বেড়ে গেছে যার কারণে নতুন করে ক্রটি দেখা দেয়া বগি ও যন্ত্রাংশ মেরামতেও সমস্যায় পড়ছে হচ্ছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা এসব বগি কিংবা যন্ত্রাংশ যথাসময়ের বিক্রির উদ্যোগ নিলে রাজস্ব আহরণ বাড়ত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আখাউড়া রেলওয়ে জংশনেও প্রায় দুই যুগ ধরে অর্ধশতাধিক পরিত্যক্ত বগি পড়ে আছে। এসব বগি একদিকে যেমন মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে চুরি হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ। লাইনগুলো দেবে যাওয়ায় অনেক বগি হেলে পড়েছে। এসব পরিত্যক্ত বগি ঘিরে গড়ে উঠেছে মাদকাসক্ত ও ভাসমান যৌনকর্মীদের আড্ডাস্থলে। একই অবস্থা ভৈরববাজার, তেজগাঁওয়ের রেলওয়ে স্টেশনে। তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত বগি ঘিরে প্রকাশ্যে মাদক বেচাকেনা চলে।
অন্যদিকে, ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন স্টেশন ইয়ার্ডে প্রায় ৩শ’ যাত্রী ও মালবাহী বগি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ময়মনসিংহের কেওয়াটখালীতে বগি ও কনটেইনার মেরামতের নির্দিষ্ট ওয়ার্কশপ থাকলেও কয়েক দশক ধরে এটি বন্ধ রয়েছে। এটি এখন পরিত্যক্ত বগি ও যন্ত্রাংশের ‘ডাম্পিং স্টেশন’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেল ইয়ার্ডেও ৪০টির মতো যাত্রীবাহী বগি (বিজি-এমজি) অচল হয়ে পড়ে আছে বছরের পর বছর ধরে। মেরামত ও সংরক্ষণের অভাবে এগুলো নষ্ট হওয়ার পথে।
পশ্চিমাঞ্চলীয় সরঞ্জাম বিভাগের একজন প্রকৌশলী জানান, সান্তাহার, ঈশ্বরদী, পার্বতীপুর, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন স্টেশন-জংশনে প্রায় ৪ শতাধিক যাত্রীবাহী বগি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। যার বর্তমান মূল্য কোটি কোটি টাকা। ইতোমধ্যে টেন্ডারের মাধ্যমে যন্ত্রাংশগুলো বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন ইয়ার্ডে শতাধিক বগি বছরের পর বছর পড়ে আছে। রেলের প্রকৌশলীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে পরিত্যক্ত এক একটি বগি ১ লাখ থেকে দেড় লাখ পর্যন্ত সহজেই বিক্রি করা সম্ভব। সে হিসাবে ঈশ্বরদীতেই প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের বগি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে ঢাকা রেলওয়ে বিভাগের একজন প্রকৌশলী জানান, কমলাপুর ইয়ার্ড ছাড়াও তেজগাঁও, টঙ্গী ও ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন ইয়ার্ডে বহু বগি ও যন্ত্রাংশ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। অনায়াসে এগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করা যায়। কিন্তু কেনো করা হয় না-তা কেউ জানে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেল

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ