Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন কিছু করতে গেলে অনেকে বলে- গেল গেল সব গেল

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকল্প মাতারবাড়ী উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৮, ১১:২৬ পিএম | আপডেট : ৩:৩০ পিএম, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টার : মাতারবাড়িতে ব্যয়ের দিক দিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর ফলে স্থানীয় মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতির পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে গত নয় বছরে বাংলাদেশে বিদ্যুত খাতের উন্নয়নের তথ্যও অনুষ্ঠানে তুলে ধরে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎসেবা পাচ্ছে। সরকারের বিদ্যুৎ নীতির সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশে নতুন কিছু করতে গেলেই বাধা আসে। নানা রকম ফর্মুলা এসে যায়। অনেক তাত্তি¡ক গজিয়ে যায়। কেউ কেউ আছে হতাশায় ভোগে। কিছু করতে গেলেই বলে, গেল গেল সব গেল। আমি হতাশার লোক না। আমি সবসময় আশাবাদী। বাংলাদেশের মানুষকে উন্নত জীবন দিতে চাই।
গতকাল রবিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ির ১২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। সরকারের অগ্রাধিকারের ১০ প্রকল্পের মধ্যে খরচের দিক দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরই রয়েছে মাতারবাড়ির প্রকল্পটি। বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় যে বন্দর নির্মাণ করা হবে, পরে তাকে গভীর সমুদ্র বন্দরে রূপান্তরিত করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বন্দরসহ এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে খরচ হবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ মহেশখালী দ্বীপে আমরা যে কাজগুলি করে যাচ্ছি, এর ফলে ওই এলাকার মানুষের যেমন আর্থ-সামাজিক উন্নতি হবে, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাবে, পাশাপাশি বাংলাদেশও লাভবান হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা আমরা করেছি, ভবিষ্যতে আরো করব এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেব। এ ব্যাপারে জাপান সরকার যথেষ্ঠ সহায়তা দিচ্ছে। ওই এলাকায় পর্যটন ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি টাউনশিপ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
২০১৬ সালে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় সাতজন জাপানি প্রকৌশলীর নিহত হওয়ার পর মাতারবাড়ি প্রকল্পও সংশয়ে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত গত বছর জুলাইয়ে জাপানের তিনটি প্রতিষ্ঠানের এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের জন্য চুক্তি করে বাংলাদেশ। জঙ্গি হামলায় জাপানি নাগরিকদের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ‘এত ঘটনার’ পরেও জাপানিরা যে বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে, সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানান। মাতারবাড়িতে কর্মরত বিদেশিদের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয়দেরও সজাগ থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশের পুনর্গঠনে জাপানের ভূমিকার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখনো আমাদের বন্ধুত্ব অটুট রয়েছে। উন্নয়নের জন্য জাপান বিরাটভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য জাপান সরকারকে, বিশেষ করে সেদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিকভাবে জানান শেখ হাসিনা
গণভবনে অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রকল্পে নিয়ে একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ সচিব আহমেদ কায়কাউস। জাইকার ভাইস প্রেসিডেন্ট, জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতসহ জাপানি প্রতিনিধিরা সেখানে উপস্থিতি ছিলেন। আর মহেশখালীতে ছিলেন জাপানের রাষ্ট্রদূতসহ আরেকটি প্রতিনিধি দল।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুর দ্রুত সমাধানের আহ্বান জাকার্তার
বাংলাদেশে সফররত ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো ইউদোদো রোহিঙ্গা ইস্যুর দ্রæত ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে তার সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের বরাত দিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান জরুরি।
মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্যই বাংলাদেশ ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সফর কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, নিঃসন্দেহে এটি মিয়ানমারের ওপর একটি চাপ। আমি মনে করি বাংলাদেশে আশিয়ান সদস্যভুক্ত কোন সরকার প্রধানের সফর ও রোহিঙ্গাদের দুরবস্থা সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করা একটি বড় ধরনের ইস্যু।
শহিদুল হক বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে কূটনৈতিক সমর্থন চাইছে। জাকার্তা ইতোমধ্যেই জাতিসংঘ ও জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে রোহিঙ্গাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি ইন্দোনেশিয়া এই ইস্যুতে আমাদের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যহত রাখবে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মিয়ানমার থেকে সহিংসতার কারণে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া ও তাদের থাকা-খাওয়ার সব ধরনের ব্যবস্থা করার জন্য ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত আলাপচারিতার মধ্যদিয়ে দুই নেতার আলোচনা শুরু হয়, পরে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দুই দেশের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এগিয়ে নিতে একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করতে বৈঠকে বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া সম্মত হয়েছে। দুই নেতা মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে বিপুল সম্ভাবনা থাকায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এগিয়ে নিতে উভয় পক্ষ ্একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয় আলোচনায় সম্মত হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব আশা প্রকাশ করেন, এক সময় চুক্তি স্বাক্ষর হলে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের ক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়ায় রেয়াতি সুবিধা দেবে এবং এটি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান কমাতে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, সম্ভাবনাময় খাত উন্মুক্ত করতে সমুদ্রসম্পদ আহরণে একত্রে কাজ করতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। অবৈধ, অসমর্থিত ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরার বিরুদ্ধে সহযোগিতার ব্যাপারে যৌথ ঘোষণা এবং টেকসই মৎস্য আহরণ ব্যবস্থা উন্নয়নে সমুদ্র সম্পদ খাতে সহযোগিতা জোরদারে দুই দেশের স্বাক্ষরিত চুক্তির কথা উল্লেখ করেন তিনি।
শহিদুল হক বলেন, সরকার দেশের বিভিন্ন এলাকায় একশ’টি অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা করছে, প্রধানমন্ত্রী এসব অর্থনৈতিক জোনে ইন্দোনেশিয়ার বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে আসিয়ানের (এএস ইএএন) সেক্টোরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন, এ ক্ষেত্রে জাকার্তা ঢাকাকে সহযোগিতা দেবে।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান এবং পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • বোরহান ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ২:৫৬ এএম says : 0
    নতুন কিছু করতে গেলে সব সময়ই সমালোচনা আসবে। এটা মেনে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • নাভিল ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ২:৫৭ এএম says : 0
    কতজনে তো কত কিছু বলবেই। সব কথা কানে নেয়া যাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • কামরুজ্জামান ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ২:৫৭ এএম says : 0
    সফল হলে সবার মুখ বন্ধ হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ