Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০২৪, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

লজ্জার রেকর্ডে ম্লান মুস্তাফিজুর কীর্তি

প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী, কোলকাতা (ভারত) থেকে : শুরুটা ছিল মুস্তাফিজুর বীরত্বগাঁথায়। টি-২০ বিশ্বকাপে প্রথম বোলার হিসেবে ৫ উইকেটে বিস্ময়ের ঝাঁপিটা খুলেছিলেন এই বাঁ হাতি কাটার মাস্টার। মুস্তাফিজুর কৃতির ম্যাচে টি-২০ বিশ্বকাপে এক ইনিংসে ছয় ছয়টি বোল্ড আউটে তৃতীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনের রেকর্ডটিও হয়েছে এই ম্যাচে বাংলাদেশের। তবে মুস্তাফিজুরের এমন বোলিং বীরত্ব মøান করেছে ব্যাটসম্যানরা। গৌরবের রেকর্ড ধাক্কা খেয়েছে অগৌরবের রেকর্ডে ! অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেক্কা দিতে দিতে হেরে যাওয়ায় ছিল না কোন কষ্ট, ভারতকে বাগে পেয়ে শেষ তিন বলের ট্রাজেডীতে ১ রানে হারÑটি-২০ তে বাংলাদেশের ক্রিকেটের আগমনী বার্তাই দিয়েছিল জোরেশোরে। সব হারিয়ে ভালয় ভালয় শেষটা করে সান্ত¦নার উপলক্ষ যে পেলো না বাংলাদেশ দল। সুপার টেন-এ পাকিস্তানের কাছে ৫৫ রানে হার দিয়ে ২৫ বছর পর খেলতে এসে যে ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ডের কাছে ৭৫ রানে হেরে শেষটা হলো আরো লজ্জার। টি-২০ বিশ্বকাপে এর আগে রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ হারটি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, ২০১৪ বিশ্বকাপে।
১৭২ চেজ করতে যেয়ে ৭৩ রানে হারের সেই লজ্জার রেকর্ডকে টপকে ৭৫ রানে বাংলাদেশের হার দেখল বিশ্ব ! টি-২০ বিশ্বকাপে ইতোপূর্বে সর্বনিম্ন স্কোর ছিল ৮৩। ২০০৭ বিশ্বকাপে জোহানেসবার্গে শ্রীলংকার কাছে পাওয়া সেই লজ্জা ও যে মানল হার। টি-২০ বিশ্বকাপে ৬২ তম ম্যাচে এসে আরো বড় অপবাদ পেতে হলো বাংলাদেশকে। ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে ৭৮ রানে অল আউটের সেই হতাশাকেও ছাড়িয়ে ৭০ এ অল আউটে নুতন হতাশা কাব্য রচিত হলো ইডেনে !!
১০ দিন আগে ইডেনের ফ্লাট উইকেট হয়ে গেলো গতকাল শ্লো উইকেট। এমন পীচেই তুলনামূলক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়ার কথা বাংলাদেশ দলের। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তানকে হারিয়ে হাওয়ায় উড়তে থাকা কিউদের শুরু থেকেই চেপে ধরার কাজটি কিন্তু করতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। ফিল্ড রেস্ট্রিকশনের প্রথম ৬ ওভারে ৩৯/১ এ আটকে রাখা, কিংবা ১০ ওভার শেষে ওভারপ্রতি ৬’র নীচে বেঁধে ফেলা (৫৯/২) কম কৃতিত্বের নয়। সেখান থেকে শেষ ১০ ওভারে ৮৬ রান যোগ করে কিভাবে? এটাই প্রশ্ন। এ প্রশ্নের উত্তরে প্রথমে অভিযুক্ত হবেন দ.আফ্রিকা আম্পায়ার জোহান ক্লোয়েটে। সাকিবকে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে যেয়ে পরিষ্কার এলবিডাব্লু মুনরো, ওই প্রোটিয়া আম্পায়ারের কৃপায় সেই মুনরো ইনিংস টেনে নিয়ে গেলেন ৩৫-এ ! এর পর ক্যাচ ড্রপে ফুলে ফেঁপে উঠল কিউই ইনিংস। মাশরাফির বলে ডিপ স্কোয়ার লেগে ৯ রানের মাথায় রস টেলরের দেয়া ক্যাচ আল আমিনের ফেলে দেয়া অমার্জনীয় অপরাধ, ২৮ পর্যন্ত নিজের ইনিংস টেনে নিয়ে প্রকারান্তরে সেটাই জানিয়ে দিলেন এই টি-২০ স্পেশালিস্ট। ইনিংসের শেষ দিকে এসে আল আমিনের বলে মিড অফে রনচির দেয়া সহজ ক্যাচটি ফেলে দিলেন তামীম ! মিড অনে শুন্যে ভাসা বলের পেছন পেছন দৌড়ে ইলিয়টের ক্যাচটি অসাধারণ তৎপরতায় নিয়ে শুভাগতহোম কিংবা ডিপ মিড উইকেটে দারুণ ডাইভিং ক্যাচে রস টেলরকে মিঠুনের ফিরিয়ে দেয়ার ছবিটা যে মøান করে দিয়েছে আল আমিন এবং তামীমের ২টি ক্যাচ ড্রপ। প্রথম স্পেলে সাকিবের বাজে বোলিং (২-০-১৮-০), এই বাঁ হাতি স্পিনারের শেষ ওভারে ১৩ রান খরচাÑটি-২০ স্পেশালিস্ট অল রাউন্ডারের পরিচয় যে বহন করেনি ! যে দলটি’র স্কোর ১২০ টেনে নেয়া দায়, তৃতীয় জুটির ৪২ এবং কেন উইলিয়ামসের ৪২ এ সেই দলটিই স্কোর টেনে নিয়েছে ১৪৫/৮ পর্যন্ত। নিজের ক্যারিয়ার সেরা তো বটেই,টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা ব্যক্তিগত বোলিংয়ের রেকর্ডটা এদিন করেছেন মুস্তাফিজুর ( ৪-০-২২-৫)। অস্ট্রেলিয়ার মুনরোকে ( ৫/২৭) টপকে তিনটি স্পেলে ( ১-০-২-১,১-০-৫-১ এবং ২-০-১৫-৩) চলমান আসরে সেরা বোলিংটা যে এই বাঁ হাতি কাটার মাস্টরের।
যে পীচে রানের জন্য ধুঁকেছে নিউজিল্যান্ডÑ সেই উইকেটে যে অজস্র কাঁটা বিছানো, তা আন্দাজ করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। ফিল্ড রেস্ট্রিকশনের প্রথম ৬ ওভারে ম্যাচে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ (৩০/২)। রান আউটে কাটা পড়ে হিরো হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেছেন তামীম (৩), ম্যাকক্লিনগানের লেগ স্ট্যাম্পে পিচিং ডেলিভারীতে বোল্ড হয়ে মিঠুন (১১) নিজের ব্যাটিং দৈন্যতা জানিয়ে দিয়েছেন। দায়িত্বটা নিতে পারেননি সাকিব (২), সাব্বির (১২), সৌম্য (৬) ! ১০ ওভারেই শেষ বাংলাদেশ (৪৩/৫)। সর্বশেষ ম্যাচে দলকে জয় বঞ্চিত করা মুশফিকুর (০) অপরাধবোধের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাননি, মাহামুদুল্লাহ’ও করেছেন তাকে অনুসরণ (৫)। পুরো ইনিংসে ৪টি চারের ২টি মেরে শুভাগতহোম দায়মুক্তির চেষ্টা করেছেন মাত্র (১৬), কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর ইলিয়টকে ছক্কা মেরে ব্যাটসম্যানদের দিয়েছেন শিক্ষা। তবে এমন শিক্ষার পরও টি-২০ বিশ্বকাপে সুপার টেন পর্বটা বাংলাদেশের জন্য অভিশপ্তই হয়ে রইল। টি-২০ বিশ্বকাপের অভিষেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের পর লম্বা সময়ে বাংলাদেশ যে দ্বিতীয় কোন আইসিসি’র পূর্ণ সদস্য দেশকে পারেনি হারাতে ! কষ্টটা হচ্ছে আরো, ২৫ বছর আগে ইডেনে ৭১ রানে বাংলাদেশ হেরে যাওয়ার পরও আতাহার আলীর ৭৮ রানের ইনিংসের স্বীকৃতি দিতে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারে বিবেচ্য হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গতকাল বিস্ময়ের ঝাঁপি খুলে আসর সেরা বোলিং করেও ম্যাচ সেরার পুরস্কারে যে বিবেচ্য করা হলো না মুস্তাফিজুরকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লজ্জার রেকর্ডে ম্লান মুস্তাফিজুর কীর্তি
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ