Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাগালের বাইরে সবজি অর্ধেক দামও পাচ্ছে না কৃষক বাজার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

| প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : দিনের কাজ শেষে রাজধানীর কাপ্তান বাজারে সবজি কিনতে আসলেন রিকশা চালক সাইফুল ইসলাম। একটু বড় ফুলকপির দাম জানতে চাইলে দোকানী হাকলেন এক দাম ৫০ টাকা। একই দোকানে মাঝারী আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। বাধ্য হয়ে ২৪ টাকায় সস্তার সবজি হিসেবে পরিচিত এক কেজি আলু ও ২০ টাকায় দুই আটি পালং শাক কিনে বাজার ত্যাগ করেন তিনি। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কথা বলেন একরাশ বিরক্তি নিয়ে। কাঁচা বাজারে নিয়মিত যাওয়া আসা করেন এমন সবাই সবজির দাম নিয়ে সাইফুল ইসলামের মতো বিরক্ত। আলু আর পেপে ছাড়া যে কোন সবজি কিনেত ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে কেজিপ্রতি কমপক্ষে ৪০ টাকা। অথচ সারা দেশে সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। পল্লী এলাকায় তুলনামূলক কম দামেই বিক্রি হচ্ছে সবজি। হরতাল, অবরোধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় রাজধানীর বাজারে সরবরাহের কোন ঘাটতি নেই। বিপুল সরবরাহ সত্তে¡ও রাজধানীর বাজারে সবজির উচ্চমূল্যের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারা দেশের পল্লী অঞ্চলে সবজির দাম ক্রেতাদের নাগালেই আছে। নায্য দাম না পাওয়ায় সবজি চাষীদের মধ্যে হতাশাও আছে। একই সবজি রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারে এসে বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে দুই গুন দামে। খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা দাম বাড়াচ্ছেন আরও অন্তত দুই গুণ। পল্লী অঞ্চলের পাইকার, রাজধানীর আড়ৎদার, ফড়িয়া আর মধ্যসত্ত¡ভোগী, পরিবহণ খরচ যোগ করে একই সবজি বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে ছয় গুন পর্যন্ত বেশি দামে। ফলে পল্লী অঞ্চলে সস্তায় বিক্রি হওয়া সবজি ঢাকায় কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২২ টাকা কেজি দরে। গ্যানেলা নামের এ আলু কারওয়ান বাজারের সবজি আড়তে ১২ থেকে ১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ২২ নং আড়তের পরিচালক মো. সবুজ মোল্লা জানান, বগুড়া থেকে প্রতি বস্তা (৪০) আলু ৪০০ টাকায় কিনে রাজধানীতে নিয়ে আসা হয়েছে। এ হিসেবে কেজিতে দাম পড়েছে ১০ টাকা। পরিবহণ, শ্রমিক ও আড়তের খরচের সঙ্গে লাভ যোগ করে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে এ আলু ১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বিক্রেতারা কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা লাভ করছেন। অথচ একই আলু বিক্রি করে কেজিতে আট টাকা পাচ্ছেন ঢাকার পাশ্ববর্তী নরসিংদির কৃষকরা। ৫০ কিলোমিটারের দুরত্বে এসে আলুর দাম বেড়েছে প্রায় তিন গুন।
পল্লী ও শহরে সবজির দামের পার্থক্য নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেকরাও কিছুটা উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, একদিকে কৃষক নায্য দাম পাচ্ছে না। অন্যদিকে ভোক্তারা বেশি দামে সবজি কিনছেন। উৎপাদক ও ভোক্তাদের অনুবিধায় ফেলে মুনাফা লুটছে মধ্যসত্ত¡রভাগীরা।
অথচ ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের কৃষকরা এককেজি ওজনের বাধাকপি বিক্রি করে পাচ্ছেন ১২ থেকে ১৪ টাকা। একই বাধাকপি যশোরে ৫ থেকে ১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কারওয়ান বাজারের আড়ৎদার আব্দুর রহমান। তিনি জানান, পরিবহণ ভাড়া ও শ্রমিকের মজুরি পরিশোধের পর পাইকারি বাজারে বাধাকপি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। একই কপি খুচরা বাজারে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান। আড়তে ১৬ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি হতে দেখা গেছে। ১২ থেকে ১৩ টাকা কেজি দরে কিনে এ সব টমেটো বগুড়া থেকে আনা হয়েছে। আর রাজধানীর নাখালপাড়া বাজারে একই টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে।
রাজধানীর বাজারে সবচেয়ে বেশি সবজি আসে যশোর থেকে। জেলার বাজারে প্রতিটি ফুলকপি ৩০ টাকা ও বাধাকপি ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া টমেটো ২৫ টাকা, আলু ১৫ টাকা দরে কেজি বিক্রি হচ্ছে। কুমিল্লাা বুড়িচং উপজেলার নিমসার, সৈয়দপুর ও কংশনগর এলাকায় প্রতিটি ফুলকপি ১০ থেকে ১২ টাকায়, বাঁধা কপি ৬ টাকায় ও লাউ ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া টমেটো ২০ থেকে ২২ টাকা, শসা ২০ থেকে ২২, গাজর ২৫ টাকা, সিম ২০ থেকে ২৫ ও বেগুন ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
রাজধানীর বাজারে প্রতিকেজি আলু ২২ থেকে ২৪ টাকা, টমেটো ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, বেগুন ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা, র্শিম ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতিটি ফুলকপি আকারভেদে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, বাধাকপি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ও লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর বাজারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ