Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

তারা আশায় বসে থাকে মার্শাল ল হলে ক্ষমতায় আসবে

জাতীয় সংসদে সিপিডি ও সুশীল সমাজের সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়লেও ধনী-গরিবের বৈষম্য না কমে বেড়েছে বলে সিপিডির পর্যবেক্ষণের সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতে বধির তাদের তো হাজার বলেও দেখানো যাবে না, শোনানোও যাবে না। দেশের সুশীল সমাজকে ক্ষমতালোভী আখ্যায়িত করে তাদের রাস্তার পাশের ডাস্টবিনের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, কিছু মানুষ সব সময় থাকে যারা নিজেদের অশুভ শক্তির কাছে বিক্রি করতে প্রস্তুত। যেমনটি রাস্তার পাশে ডাস্টবিনে লেখা থাকে ‘ইউজ মি’। তারাও রাজনীতি ও ক্ষমতার ক্ষেত্রে বুকে সাইনবোর্ড লিখে বসে থাকে ‘ইউজ মি’। মানে আমাকে ব্যবহার করুন। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে শেখ হাসিনা আরও বলেন, তারা সব সময় আশায় বসে থাকে অসাংবিধানিক পথে ইমার্জেন্সি বা মার্শাল ল’ দিয়ে যদি কেউ ক্ষমতায় দখল করে তাহলে তাদের গুরুত্ব বাড়বে। তারা একটি পতাকা পাবে। ক্ষমতায় যেতে পারবে।
‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৭-২০১৮ : প্রথম অর্ন্তবর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শিরোনামে স¤প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে গবেষণা সংস্থা সিপিডি বলেছে, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে চললেও ধনী-গরিব বৈষম্য না কমে বরং বেড়েছে। প্রতিবেদনে ২০১৭ সালকে ব্যাংক খাতের কেলেঙ্কারির বছর আখ্যায়িত করে সিপিডি। ওই প্রতিবেদন উল্লেখ করে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি প্রধানমন্ত্রীকে সম্পূরক প্রশ্ন করে এই বিষয়ে তার অভিমত জানতে চান। জবাবে সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্য যে, এদেশের কিছু মানুষ উন্নয়নটা চোখে দেখে না। যারা চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতে বধির তাদের তো হাজার বলেও দেখানো যাবে না, শোনানোও যাবে না। যারা দেখতেই পায় না, শুনতেই পায় না, বুঝতেই পায় না তাদের বোঝানোর কিছু নেই। তাদের এই না দেখাটা ওই ধরনের অসুস্থতা।
সুশীল সমাজের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না, এই সুশীলের অর্থটা কী, ব্যাখ্যাটা কী। কোন তত্তে¡র ভিত্তিতে তারা সুশীল। সেটাই প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয় যখন তারা কোনো কিছু দেখেনও না, শোনেনও না, বোঝেনও না। তিনি বলেন, তারা সুশীল না অসুশীল তা আমি জানি না। তবে আমাদের দেশে একটা শ্রেণী আছে যাদের আকাক্সক্ষা ক্ষমতায় যাওয়ার, তাদের আকাক্সক্ষা একটি পতাকা পাওয়ার। কিন্তু তারা জনগণের কাছে যেতে পারেন না। ভোটের রাজনীতিতে তারা অচল। ভোটের রাজনীতি করতে গেলে জনগণের ভোট পেতে হয়। জনগণের কাছে দাঁড়াতে হয়, ভোট ভিক্ষা চাইতে হয়। ভোট পেয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে এই সংসদে বসতে হয় এবং সরকার গঠন করতে হয়। তারা জনগণের কাছে না গিয়ে ক্ষমতায় যেতে বাঁকা পথ খোঁজে মন্তব্য করে ‘সার্কাসের গাধার’ গল্প শোনান সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তাদের চিন্তা থাকে কখন দড়ি ছিঁড়বে। আমি কাউকে গাধা বলছি না। তারা জ্ঞানী-গুণী, শিক্ষিত; বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রীপ্রাপ্ত, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। তবে তাদের আচরণগুলি যখন দেখি খুব স্বাভাবিকভাবেই গাধার কথা মনে পড়ে। সার্কাসের গাধা সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করতে দড়ি ছেঁড়ার আশায় বসে থাকে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সবাইকে নিয়েই চলতে চান। আমি বিশ্বাস করি, যে কোনো অর্জনের জন্য সকলেরই প্রচেষ্টা থাকে। তবে একজনকে হাল ধরতে হয়। যেমনটি গাড়ি চালালে চালকের আসনে একজনই বসেন। তিনি যদি সঠিকভাবে চালিয়ে নিতে পারেন তাহলে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন। আর সঠিকভাবে না চালাতে পারলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। খুব স্বাভাবিকভাবে দেশ পরিচালনা তো কেউ এককভাবে করতে পারে না। তবে একজনকে উদ্যোগ নিয়ে দায়িত্ব নিয়ে ভালো-মন্দ সব কিছুর দায়িত্ব নিয়ে চলতে হয়।
‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে’ রবীন্দ্র নাথের গানের এই লাইন উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি একা চলতে চাই না। সবাইকে নিয়েই চলতে চাই। জাতীয় সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদ নেত্রী বলেন, তারা গঠনমূলক বক্তব্য রেখেছেন। গঠনমূলক আচরণ করেছেন। অন্তত এইটুকু বলতে পারি, বিএনপি থাকতে তখন যে খিস্তিখেউড় হত, যে সমস্ত আলাপ-আলোচনা হত তা কান পেতে শোনা যেত না। এখন সেসব নেই। অত্যন্ত গণতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে বিরোধীদল গঠনমূলক আলোচনা করছে এবং সর্বক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে।
আমি আর পাঁচটা প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধানের মতো না
দেশের মঙ্গলের জন্য সব সময় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে থাকেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার রাজনীতি কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের রাজনীতি। তিনি বলেন, আমি এতটুকু আশ্বাস দিতে পারি; আমি শুধু প্রধানমন্ত্রী না, আমি জাতির পিতার কন্যা, আমি আপনাদের প্রতিনিধি। আপনাদের কোনো সমস্যা থাকলে সেটা আমরা নিশ্চয় দেখব। আমি আর পাঁচটা প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধানের মতো না। আমি কাজ করি। আমি কাজ করি আমার দেশের কল্যাণে, আমার দেশের মঙ্গলের জন্য আন্তরিকতার সাথে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বেপজা ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টরস সামিট-২০১৮’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এই অনুষ্ঠান থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এক হাজার ১৫০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করেন তিনি।
উদ্বোধনীতে দেশের রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোয় (ইপিজেড) স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্বারোপ করে সেখানে শ্রমিকদের কোনো সমস্যা থাকলে তা সমাধানেরও আশ্বাস দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় সর্বদা সচেষ্ট। ইপিজেডের বাইরের পোশাকখাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা বৃদ্ধির জন্য আমরা নিম্নতম মজুরি কমিশন গঠন করেছি। কোনো উসকানিতে শ্রমিকদের প্রলুব্ধ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, কল-কারখানা আছে বলে এবং সেখানে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন বলেই আপনারা অর্থ উপার্জন করতে পারছেন। পরিবার-পরিজনকে দেখাশোনা করতে পারছেন এবং নিজেরাও সাবলম্বী হতে পারছেন। কাজেই একটি অনুরোধ আমার থাকবে, যে কলকারখানা আপনাদের মুখের অন্ন যোগায়, আপনাদের জীবনমান উন্নত করে তার যেন কোনো ক্ষতি না হয় বা বাইরের কারো উসকানিতে আপনারা যেন কোনোমতেই আপনাদের কর্মক্ষেত্রের কোনো ক্ষতি না করেন, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। তিনি বলেন, যারা কাজ করে না, শ্রম দেয় না- তারা সংগঠন করার নামে অনেক সময় নানা ধরনের কর্মকান্ড করে। যার ফলে একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। কারো উসকানিতে যেন আপনারা প্রলুব্ধ হবেন না বা এমন কিছু করবেন না, যাতে আপনাদের এই শিল্প কলকারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তুলনামূলকভাবে সস্তায় দক্ষ জনবলের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত সমস্যা আমরা কাটিয়ে উঠেছি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু এবং ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু সারা দেশের আর্থ-সামজিক উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পের সঙ্গে পরিবেশ রক্ষা করা একান্তভাবে জরুরি।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, বাংলাদেশ ইপিজেড অ্যাডভাইজার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এম নাসির উদ্দিন, উত্তরা ইপিজেডের এভারগ্রীন প্রোডাক্টস ফ্যাক্টরি লিমিটেডের চেয়ারম্যান চাং উয়ো চং এবং কর্ণফুলি ইপিজেডের একটি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ম্যানেজার (উৎপাদন) পান্না ইয়াসমিন বক্তব্য রাখেন। বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. হাবিবুর রহমান খান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। শুরুতে বেপজার কার্যক্রমের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।



 

Show all comments
  • তুষার ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ৫:১৬ এএম says : 1
    কে কী আশায় বসে থাকে সেটা আমরা ভালো করে জানি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ