পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ‘ছবি যেন শুধু ছবি নয়/ আজ কেন তাই মনে হয়/ এ যেন ওগো দুটি প্রাণের কথা বিনিময়/ এতো দিন কেন আড়ালে ছিলে/ রঙের ছোয়ায় যদি ধরাই দিলে----’ (মানুষের মন)। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা এবং সত্য সাহার সুরে কন্ঠশিল্পী মোঃ খুরশিদ আলমের এই গানটি বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় গানগুলোর অন্যতম। পুরনো দিনের সিনেমার এই গানের চরণের মধ্যে যে ‘একটি অন্তর্নিহিত তাৎপর্য’ ফুঁটে উঠেছে তা বোঝা গেল সম্পতি একটি ছবি নিয়ে তোলপাড়ের ঘটনায়। একটি ছবি যেন হাজার বাক্যের চেয়েও অধিক মূল্যবান বেশি প্রাণবন্ত। কাউকে কিছু বোঝানোর জন্য দিস্তায় দিস্তায় কাগজ খরচ করে গল্প-প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখার প্রয়োজন পড়ে না; ছবিই বলে দেয় পুরো গল্প। তেমনি একটি ছবি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মিডিয়াগুলোতে বিস্তর লেখালেখি-আলোচনা-সমালোচনা-বিতর্ক হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তুমুল বিতর্ক।
ছবিটি কোনো ঐতিহাসিক ছবি নয়; নয় কোনো ভয়ঙ্কর ঘটনা বা স্মরণযোগ্য ঘটনার চিত্রধারণ। কিন্তু ছবিটিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার সম্পর্ক চিত্রই যেন ফুটে উঠেছে। বিতর্ক সেখানেই। দিন কয়েক আগে ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি একটি সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশ সফরে আসেন। ছবিটি সে সময় তোলা।
প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশের মানুষের কাছে অত্যান্ত সম্মানিত ব্যাক্তি। ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তিনি যে ভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছেন; ভারতের অন্যান্য জাঁদরেল নেতাদের বাংলাদেশের পক্ষ্যে দাঁড়ানোর দুতিয়ালী করেছেন তা মনে রাখার মতোই। সে জন্য বাংলাদেশের মানুষের তিনি পরমাত্মীয়। ৫ দিনের বাংলাদেশ সফরে তাকে বিরল সম্মান দেয়া হয়েছে; এটা তাঁর প্রাপ্য। কিন্তু তার একটি ছবিতে দু’দেশের বন্ধুত্বের বদলে দাদাগিরির সম্পর্কে যেন ফুঠে উঠেছে। ছবিতে দেখা যায় প্রণব মুখার্জি চেয়ারে বসে আছেন। তার পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ ছাড়াও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। এমন ভাবে ছবিটি তোলা হয়েছে যেন ‘মুনিব’ বসে রয়েছেন আর তাকে ঘিরে দাঁড়িয়েছেন ‘অনুগত সাগরেদরা’। গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি নিয়ে মন্তব্যের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ মন্তব্যে প্রশ্ন তুলে বলা হয় কিভাবে বাংলাদেশের আইনপ্রণেতারা ভারতের ঔপনিবেশিক প্রবৃত্তির মুখে নিজেদের অধঃপতিত করে প্রণব মুখার্জির পেছনে দাঁড়িয়ে ফটো সেশন করলেন? ছবিটি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বাংলাদেশের লজ্জিত সাধারণ মানুষ। তাদের অভিযোগ ছবিতে ভারতের বড় ভাইসুলভ আচরণের চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রণব মুখার্জি ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট। এরশাদও বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট। জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, বয়সে প্রবীণ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিতকে না হয় চেয়ারের অভাবে পাশে দাঁড়িয়ে রাখা যায়; কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদকে কি আরেকটি চেয়ারে বসানো যেত না? দুই দেশের দুই সাবেক প্রেসিডেন্টকে চেয়ারে বসিয়ে অন্যান্যদের দাঁড়ানো ছবি তোলা হলে এতো বিতর্ক হতো না। ছবিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও দুই দেশের মিডিয়ায় বিস্তর লেখালেখি হয়। এই বিতর্কের মধ্যে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক ও টুইটার পাতা থেকে আলোচিত ছবিটি সরিয়ে নেয়। তবে বাংলাদেশের বিশিষ্টজনদের মধ্যে যারা দিল্লীর তাবেদার হিসেবে পরিচিত তারা অবশ্য ছবিটি নিয়ে বিতর্ককারীদের ভারত বিরোধী তকমা দিয়ে বলেছেন, এরা যে কোনো সুযোগ পেলেই ভারত বিরোধিতার নামে সা¤প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তবে ড. পিনাকি ভট্টাচার্য নমের একজন লিখেছেন, এখানে ভারত বিরোধিতার কিছু নেই। প্রণবের সঙ্গে বাংলাদেশি প্রখ্যাত নাগরিকদের তোলা এ ছবি গত দশ বছর ধরে বাংলাদেশের ওপর ভারত যে আধিপত্য বিস্তার করছে তারই বহিঃপ্রকাশ; বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃস্থানীয়রা ভারতের কাছে যে ক্রমবর্ধমান বশ্যতা স্বীকারের নজির স্থাপন করছেন তারই প্রতীক। এ জন্যই ছবিটি বাংলাদেশের মানুষকে পীড়িত করছে। এ প্রসঙ্গে ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা দি টেলিগ্রাফ লিখেছে, ‘গত ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনে সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির সন্মানে আয়োজিত নৈশভোজ শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের কয়েকজন অনুষ্ঠান শেষে প্রণব মুখার্জির সাথে হাসিমুখে ছবি তুলতে একে অপরকে সহযোগিতা করেন। অন্তত ১৭ থেকে ১৮টি গ্রæপ ছবি তোলেন যাদের সঙ্গে প্রণব মুখার্জি ধৈয্যের সঙ্গে সময় দেন। এক একটি ফটোসেশন দুই থেকে তিন মিনিট স্থায়ী হয়। এক পর্যায়ে একটি চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয় যাতে ৮২ বছর বয়স্ক সাবেক এই প্রেসিডেন্ট সবার সঙ্গে ক্লান্তিহীনভাবে ছবি তুলতে পারেন’। টেলিগ্রাফের পত্রিকার এই রিপোর্টেও কি আধিপত্যবাদের গন্ধ নেই? ‘ধৈয্যের সঙ্গে সময় দেন’ ‘৮২ বছর বয়সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্লান্তিহীন’ শব্দগুলো কি অর্থে ব্যবহৃত হয়? ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট ৮২ বছর বয়সে ক্লান্ত হলে ৮৯ বছর বয়সের বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ বা ৮৬ বছর বয়সের অর্থমন্ত্রী মুহিত কি তারুণ্য নিয়ে ফটো সেশনে ছিলেন? অপ্রিয় হলেও সত্য যে এই একটি মাত্র ছবিই দুই দেশের সম্পর্ক এবং আমাদের নেতানেত্রীদের মানসিকতার মুখোশ খুলে দিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।