পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ঢাকায় হয়ে গেল আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন। সম্মেলনের সমাপনী বক্তৃতায় উপমহাদেশের খ্যাতিমান রাজনীতিক ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি যে সব কথাবার্তা বললেন; তা কি আমাদের কবি সাহিত্যিক শিল্পীরা উপলব্ধি করতে পেরেছেন? বিদেশী মেহমানের বার্তার মাজেজা কি? কবি-সাহিত্যিকদের সম্পর্কে তার ধারণা ও প্রত্যাশা কোন পর্যায়ে আমাদের কবিরা কি সেটা বুঝতে পেরেছেন? প্রণব মুখার্জি বলেছেন, ‘পরিবেশ দূষণের চেয়েও বর্তমানে মানুষের চিন্তা-ভাবনা-মননের দূষণের ভয়াবহতা আরও বেশি। ---। শুধু পরিবেশ দূষণ নয়, বড় দূষণ মানুষের চিন্তায়, মানুষের ভাবনায়, কাজে-মনে। এ হিংস্রতা প্রতিহত করতে জাতিসংঘ বা আন্তঃরাষ্ট্রীয় কোনো সম্মেলন থেকে সমাধান আসবে না। ভয়াবহ এ দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব ‘স্রষ্টাদের’। সেই স্রষ্টা সাহিত্যিক, কবি, লেখকরাই নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে মানব সভ্যতার ইতিহাস এসব কথা বলে গেছে যে হিটলার, মুসোলিনিরা নয়; সভ্যতার ইতিহাস নির্মাণ করে গেছেন প্রফেট, ক্রাইস্ট, বুদ্ধ। দিগি¦জয়ী বীরেরা নয়, সভ্যতার ইতিহাসের দিক নির্মাণ করেছেন লেখক-কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীরা। পরীক্ষা পাসের জন্য দিগি¦জয়ী বীরদের নিয়ে পড়াশোনা করা যায়, পাসের পর তা বেমালুম ভুলে যাই। কিন্তু শিল্পীর ছবি, কবির কবিতা-উপন্যাস কখনও ভোলা যায় না। যে গান, সানাই-সরোদের সুর আমাদের প্রিয়, তা কখনও ভুলতে পারি আমরা?’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল বক্তৃতায় প্রণব মুখার্জি বলেছেন, ‘মানুষ ভোট দিয়ে নিজের পছন্দমত নেতৃত্ব বেছে নেবে, এই অধিকার আজ সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত। কিন্তু এই অধিকারের ওপর বারবার কেন আঘাতে আসছে? কেন সাংবিধানিক গণতন্ত্র বারবার বিঘিœত হচ্ছে?’ বাংলা একাডেমীর সাহিত্য সম্মেলন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বারক বক্তৃতায় প্রতিবেশি রাষ্ট্রের প্রবীণ এই রাজনীতিক যে কথাগুলো উচ্চরণ করলেন তা এ দেশের আমজনতার অন্তরের কথা; হৃদয়ের প্রত্যাশা। কিন্তু যারা তাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এনেছেন; তাকে ঘিরে আনন্দ-উৎসব করছেন তারা কি অতিথির ‘মনন-চিন্তা-চেতনা’ অনুধাবন করতে পারছেন না?
‘কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি/ পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’ পংক্তির লেখক সুকান্ত ভট্টাচার্য মাত্র ২১ বছর বেঁচেছিলেন। তিনি মানুষকে নিয়ে শত শত কবিতা লিখেছেন। সেগুলো মধ্যে ‘হে সূর্য! শীতের সূর্য! --/ -- তুমি তো জানো, আমাদের গরম কাপড়ের কত অভাব! সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে/ এক-টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে/ কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই!/ সকালের এক-টুকরো রোদ্দুর/--/ --তুমি আমাদের স্যাঁতস্যাঁতে ভিজে ঘরে উত্তাপ আর আলো দিও/ আর উত্তাপ দিও, রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে’ মানুষকে নিয়ে কবির কি মর্মবেদনা!! আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সমসাময়িকদের অনেকেই মানুষের জীবনচিত্র নিয়ে অসংখ্য লেখা লিখে গেছেন। কিন্তু এখন যে কবি সাহিত্যিক-শিল্পীরা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমীর সাহিত্যাঙ্গন ঘিরে রেখেছেন; সাহিত্য চর্চার নামে পৌঁষ পার্বণে পিঁঠাপুলি গলধকরণ করছেন তাদের কত জনের কলমের ডগা থেকে ‘মানুষের জন্য’ রচনা বের হচ্ছে? সমসাময়িক সময়কে নিয়ে কতজন রচনা লিখে মানুষের দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণার চিত্র ফুঁটিয়ে তুলেছেন? নাকি তাদের দায়িত্ব শুধু ফুল-পাখি-পিঠেপুলি নিয়ে কাগজ নষ্ট করা? প্রতি বছর দেশে একাধিক সাহিত্য সম্মেলন হয়, কবিতা পাঠের আসর বসে। বিভিন্ন নামের সাহিত্যাঙ্গনে উল্লাস-উচ্ছাস হয়। ফেব্রæয়ারী মাস এলেই কবিতা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু কোন সম্মেলনে দেশের আমজনতার জীবনচিন্তা যায়গা পায়? অথচ কয়েক বছর আগেও আমরা কি দেখেছি? ১৯৮৮ সাল। গণমানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠা হয় জাতীয় কবিতা পরিষদ। ওই কবিতা পরিষদকে মোকাবিলা করতে ওই সময়ের সরকার এশিয়া কবিতা কেন্দ্র নামে পাল্টা প্রতিষ্ঠা করেন কবি সংগঠন। হালুয়া-রুটির দিকে না ছুটে তখনো কবিরা মানুষের কণ্ঠস্বরের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে জাতীয় কবিতা পরিষদের ’৮৮ সম্মেলনে মঞ্চে বসে স্বরচিত কবিতা পাঠ শুনতে শুনতে ইন্তেকাল করেছিলেন পটুয়া কামরুল হাসান। তিনি সে সময়ের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যে ‘ক্যানভাস’ এঁকেছিলেন তা গণবিরোধী স্বৈরশাসকের মসনদ কাঁপিয়ে তুলেছিল। অথচ এখন কবিরা যেন সবাই সভাকবি। পৌঁষের শীতে দরবারে গিয়ে শীতের পিঠা খান, উল্লাস-উচ্ছাস করেন; অথচ শীতের গরম কাপড়ের অভাবে আগুন পোহাতে গিয়ে প্রাণ হারায় মানুষ। যে দেশে ৪ থেকে ৫ ডিগ্রী তাপমাত্রায় শীত থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে গিয়ে মানুষকে প্রাণ হারাতে হয় সে দেশ মধ্যবৃত্ত দূরের কথা নিম্নমধ্যবৃত্ত হওয়ার অবস্থায় কি থাকে? কি বলেন কবিমহল? আপনারা কি শুধু দরবারে কবিতা পাঠের জন্য সাহিত্য চর্চায় রত!
বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র মরহুম হুমায়ূন আহমেদের লেখার ‘সাহিত্য মান’ নিয়ে যতই প্রশ্ন উঠুক, তিনি পাঠক সৃষ্টি করে গেছেন। শরৎচন্দ্র, রোমেনা আফাজের পর তিনিই স্বার্থক লেখক। কিন্তু এখনকার কবি সাহিত্যিকরা? সাহিত্য সম্মেলনে প্রণব মুখার্জি যাদের ‘উচ্চ আসনে’ বসালেন তারা কি সেটা করছেন না করার চেষ্টা করছেন? দেশে জনগণের ভোটের অধিকার দীর্ঘদিন নির্বাসিত। প্রচন্ড শীতে কাঁপছে কোটি মানুষ। নতুন প্রজম্মের তরুণরা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা-জাহাঙ্গীরনগর-রাজশাহী-নর্থসাউথ-ব্রাক বিশ্ববিদ্যলয়ে ছাত্রছাত্রীদের ওপর জরীপ করে তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া তরুণ-তরুণীরা ভোগের বিষন্নতায়। লেখা পড়া শেষ করে চাকরি পাবেন কি না সে হতাশা থেকে এ বিষন্নতা। এ চিত্র কি আমাদের কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীরা চোখে দেখেন না? লুটপাটের কারণে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর প্রায় পঙ্গু হওয়ার উপক্রম। হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে অথচ কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীরা নীরব! উপরন্ত যারা নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থাকাবস্থায় বিপুল পরিমান রিজার্ভ খোয়া যায়; তথ্য গোপন রেখে হিল্লী-দিল্লী সফর করে সেমিনারে অংশ নিয়ে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধার করেন; সে ব্যাক্তিকে সঙ্গে নিয়েই কবিরা কবিত্ব চর্চা করছেন। হায় কবিগণ!
অপ্রিয় হলেও সত্য যে, পাখিদের কিচিরমিচির ও কলকাকলী বোঝার কর্ম যেমন সাধারণ মানুষের নয়; তেমনি বাংলাদেশের বর্তমান কবিগণের লেখনি বোঝার মেধা-মগজ সাধারণ মানুষের নেই। ওরা যেন বসন্তের কোকিলের মতো মনের আনন্দের লিখেই যাচ্ছেন; সেমিনার সিম্পোজিয়াম করছেন; সাহিত্য সম্মেলনে বেসুমার অর্থ খরচ করে ধন্য ধন্য ফেলে দিচ্ছেন; কিন্তু সেখানে সাধারণ মানুষ কোথায়? কবিদের লেখায় না আছে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, না আছে সমসাময়িক রাজনীতির-না আছে সমাজনীতির চিত্র; না আছে আগামীর স্বপ্ন। যেন পাখি-নদী-ফুল-কাশবন নিয়ে লেখো আর খাও-দাও-ফূর্তিকর। প্রবণ মুখার্জি কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের যে আসনে বসালেন; সাহিত্য চর্চার নামে শুধু ‘বাজাও তালিয়া বাজাও’ চর্চায় সেটা রক্ষা হবে তো?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।