পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো ও চবি সংবাদদাতা : চট্টগ্রামে গতকাল (মঙ্গলবার) ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি। সকালে চট্টগ্রাম এসেই দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ডি-লিট ডিগ্রি গ্রহণ করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ আব্দুর রব হলের মাঠে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন প্রণব মুখার্জি। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মাধ্যমেই উন্নয়ন এগিয়ে নেয়া যায়। তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র মজবুত না হওয়ায় উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। ভারতের মত বাংলাদেশও সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছে। প্রণব মুখার্জি আরও বলেন, দেশের শাসক জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হবেন। তবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর কেন বারবার বিপর্যয় আসছে। ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছে। অথচ এদেশগুলোতে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে হিংসাত্মক দশা বেশী কেন? বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের গবেষণার মাধ্যমে এই দিকগুলো বের করার আহ্বান জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়কে মনন-বিচার ও বিশ্লেষণ কেন্দ্র উল্লেখ করে তিনি বরেন, গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে উচ্চ মান সম্পন্ন গবেষক ও দেশপ্রেমিক-সুনাগরিক মানবসম্পদ উৎপাদন করাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য। বিশ^বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শেষে বেশি বেতনের চাকরির জন্য ছুটবেন কেন। তারা তাদের গবেষণার মাধ্যমে বিশে^ কল্যাণ বয়ে আনবে এমন জিনিস উদ্ভাবন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি। তিনি তার বক্তব্যে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন-মুক্তিযুদ্ধ, চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ও বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংসদীয় গণতন্ত্র গ্রহন করে। বাংলাদেশ মানুষের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছিল ভারত বর্ষের মতো। যেখানে শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারসহ কয়েকটি দেশও এই ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু তারা তা ধরে রাখতে পারেনি। বাংলাদেশের উপরও বিভিন্ন বাধা সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন সামরিক শাসনও চলছে। কোন আর্থ-সামাজিক কারণে সৈন্যরা ব্যারাক থেকে বের হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। এসব কারণে সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিত্তিটা মজবুত হতে পারেনি। যা দেশের উন্নয়নের জন্য একটা বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই শাসন অবস্থা থেকে বেড়িয়ে গণতন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে উন্নত আয়ের দেশ হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে। এই থেকে বুঝা যায় গণতন্ত্রের মধ্যদিয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়া যায়। বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চবি ভিসি প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন চবি প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ মাস্টারদা সূর্য সেনের জন্মভিটা ঘুরে দেখেন প্রণব মুখার্জি। বিকেলে নোয়াপাড়ায় সূর্য সেন পল্লীতে পৌঁছান তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি, বাংলাদেশে ভারতের হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাসহ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। সূর্য সেনের বসতভিটা প্রাঙ্গণে থাকা স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং সেখানে একটি গাছের চারাও রোপণ করেন তিনি। পরে সূর্য সেন মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশু কল্যাণ কমপ্লেক্সে রাখা স্মারক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। সূর্য সেনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাড়ার একটি বাড়িতে যান শর্মিষ্ঠা। সেখানে বেবী দাশ নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে গেলে তারা শর্মিষ্ঠাকে বসতে দেন। শর্মিষ্ঠার মা শুভ্রা মুখার্জির জন্মভূমি বাংলাদেশের নড়াইলে। রাউজান কলেজের পাশে মাস্টারদা সূর্য সেন স্মৃতি ভবনেও যান প্রণব মুখার্জি। সেখানে মাস্টারদার আবক্ষ ভাস্কর্যে ফুলের মালা পরিয়ে দেন তিনি। ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নত করে প্রণতি জানান তিনি। সেখান থেকে সন্ধ্যায় নগরীর তারকা হোটেল রেডিসন বøুতে ফিরে আসেন প্রণব মুখার্জি। সেখানে এক সুধি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তিনি। বেলা ১১টায় বিমানে চট্টগ্রাম আসেন প্রণব মুখার্জি। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান ও জেলা প্রশাসক মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।