Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রেলের আয় ও সেবার মান দুটোই কমছে নিয়ম ভেঙে আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কোনো জেলায় আন্ত:নগর ট্রেন দাঁড়াবে মাত্র একটি স্টেশনে। নিয়ম ভেঙ্গে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রতি বছরই আন্ত:নগর ট্রেনের স্টপেজের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। সর্বশেষ আখাউরা-কুমিল্লা সেকশনে কসবা এবং আশুগঞ্জ স্টেশনে মহানগর এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতি দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, রাজনৈতিক বিবেচনায় জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস নরসিংদী স্টেশনে এবং রংপুর এক্সপ্রেস বগুড়া-সান্তাহার সেকশনে সোনাতলা স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, অনাকাঙ্খিত স্টপেজের কারনে আন্ত:নগর ট্রেনের গতি কমছে। বাড়ছে ভ্রমণের সময়। যাত্রীদের আগ্রহও কমে যাচ্ছে। এতে করে যাত্রীখাতে রেলের আয় কমার পাশাপাশি জ্বালানী ব্যয়ও বাড়ছে।
রেল সূত্র জানায়, আন্ত:নগর ট্রেনের ক্ষেত্রে যেকোনো জেলায় একটি স্টেশনে যাত্রাবিরতি থাকার কথা। কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় সে নিয়ম মানা হচ্ছে না। নিজ নিজ এলাকার স্টেশনে বিভিন্ন আন্ত:নগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির জন্য সরকারদলীয় এমপিরা একটার পর একটা ডিও দিচ্ছেন। জাতীয় সংসদেরও বেশ কয়েকজন এমপি ট্রেনের যাত্রাবিরতি নিয়ে দাবি তুলেছেন।
জানা গেছে, গত বছর সান্তাহার-ঈশ্বরদী সেকশনে আহসানগঞ্জ স্টেশনে দিনাজপুর-ঢাকা আন্ত:নগর ট্রেন দ্রুতযানের যাত্রাবিরতির জন্য এলাকাবাসী আন্দোলন করে। তারা বেশ কয়েকদিন আহসানগঞ্জ স্টেশনে ব্যারিকেড দিয়ে দ্রুতযান ট্রেনকে আটকিয়ে রাখে। পরে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে এলাকাবাসী আন্দোলন তুলে নেয়। রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলন বা রাজনৈতিক বিবেচনায় এভাবে ট্রেনকে কোনো স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিলে আন্ত:নগর ট্রেনের গতি কমে যাবে। তাতে যাত্রীদেরই ক্ষতি হবে।
এদিকে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মহানগর এক্সপ্রেসকে কসবা ও আশুগঞ্জ স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়া হয়। যদিও বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে অক্টোবরের অপারেশনাল রিভিউ বৈঠকে (ওআরএম) আন্ত:নগর ট্রেনে আর কোনো স্টপেজ না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকার রেলভবন থেকে দেয়া সেই সিদ্ধান্ত অমান্য করে নতুন করে দুটি স্টেশনে মহানগর এক্সপ্রেসকে যাত্রাবিরতি দেয়ার সিদ্ধান্ত দেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। রেলওয়ে সূত্র জানায়, স্থানীয় একটি সংগঠনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা স্টেশনে ৭২১ ও ৭২২ নং মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতির অনুমোদন দেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। গত বছরের ৩০ নভেম্বর রেলের উপপরিচালক ( ট্রাফিক ট্রান্সপোর্টেশন) মো. ময়েনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপককে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ ডিসেম্বর থেকে কসবা স্টেশনে ট্রেনটির যাত্রাবিরতি কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে কন্ট্রোল অর্ডার পাঠায় রেলের পরিবহন বিভাগ।
সূত্র জানায়, স্থানীয় এক এমপির অনুরোধে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসকে নরসিংদী স্টেশনে এবং বগুড়ার এক এমপির অনুরোধে রংপুর এক্সপ্রেসকে সোনাতলা স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, একটি ট্রেনের নতুন একটি স্টপেজের জন্য রেলওয়ের ব্যয় বেড়ে যায়। এতে করে একদিক থেকে যেমন সেবার মান কমে যায়, অন্যদিকে রেলের পরিচালন ব্যয়েও এর প্রভাব পড়ে। স্টেশনে যাত্রাবিরতির জন্য একেকটি ৭০ কিলোমিটার গতিবেগের ট্রেনের সময় ব্যয় হয় সর্বনিম্ন ১৫ মিনিট। স্টেশনে যাত্রাবিরতির আগে নির্ধারিত দূরত্ব থেকে গতি কমিয়ে আনাসহ যাত্রাবিরতি ও আবারো সর্বোচ্চ গতিতে পৌঁছানো পর্যন্ত সময়ে একেকটি ট্রেনের এ পরিমাণ সময় ব্যয় হয়। কসবা স্টেশনে নতুন করে যাত্রাবিরতি দেয়ার কারণে মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি আগের তুলনায় কমপক্ষে ১৫ মিনিট বিলম্বে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে। এতে করে ট্রেনটির জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াও একই রুটের অন্যান্য ট্রেনের গতি ও নির্ধারিত স্থানে অবস্থানের সময়ের ওপরও বিরুপ প্রভাব পড়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রেলপথে মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি ছিল নয়টি স্টেশনে। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার ৭২২ নম্বর ট্রেনটি ঢাকা বিমানবন্দর, নরসিংদী, ভৈরববাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া, কুমিল্লা, লাকসাম, লাঙ্গলকোট ও ফেনী স্টেশনে যাত্রাবিরতি করতো। এর মধ্যে আখাউড়া স্টেশন থেকে কসবা স্টেশনের দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার। ট্রেন চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ট্রেনের গতিবেগই ওঠে না, তখনই আবার নতুন করে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হয়। এতে করে সময়ের অপচয় হয় বলে চালকরা জানান।
নাম প্রকাশ না করে রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, স্টপেজ দেয়ার ক্ষেত্রে রেলের পরিবহন ও বাণিজ্যিক বিভাগের মতামত নেয়ার নিয়ম থাকলেও আইন লঙ্ঘন করেই বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজ দেয়া হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক নেতা, সংসদ সদস্য কিংবা মন্ত্রীদের অনুরোধে এভাবে স্টপেজ দিতে থাকলে রেলের আয় ও সেবার মান দুটোই নেমে যাবে।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত স্টপেজ দেয়া হয়েছে ৩৬টি। এর মধ্যে শুধু ২০১৩ সালেই দেয়া হয় ১৩টি। গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি স্টপেজ দেয়া হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে। এ সময় এ রুটে নতুন যুক্ত হয়েছে ১৭টি স্টপেজ। এছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ৬টি, ঢাকা-সিলেট রুটে ৬টি, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে ৪টি, ঢাকা-নোয়াখালী রুটে দুটি ও চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে একটি করে স্টপেজ নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেল

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ