Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউপি তথ্য সেবাকেন্দ্রের প্রকল্পে দুর্নীতি

ব্যবস্থা নিতে সচিবকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠি

প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ১১:৫৮ পিএম | আপডেট : ১:৪০ পিএম, ২১ জানুয়ারি, ২০১৮

পঞ্চায়েত হাবিব : ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রে সোলার সিস্টেম স্থাপন এবং সৌরশক্তি উন্নয়ন কর্মসূচি, পুকুর পুন:খনন ও পাট পচানো-পরবর্তী মাছ চাষের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) ক্ষমতাধর কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ সচিবকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মাফরূহা সুলতানা ইনকিলাবকে বলেন, এ ধরনের চিঠি আসলে আগে আসতে পারে। তার পর কোথাও অনিয়ম দুর্নীতি হলে তদন্ত করে দেখা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত বছরের ১০ অক্টোবর পরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত চিঠি দেয়া হয় হয়। চিঠিতে বলা হয়, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) ক্ষমতাধর কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতিষ্ঠানের একাধিক পদে দায়িত্ব পালনের সুযোগে পিডিবিএফের অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। লাগামহীন দুর্নীতি করতেই প্রতিষ্ঠানের বিধি উপেক্ষা করে কর্মকর্তা আমিনুল ও মনারুল ইসলামকে অল্পসময়ের মধ্যেই পদোন্নতি এবং একাধিক পদে থাকার সুযোগ করে দেয়া হয়। দুর্নীতির কারণে গত ডিসেম্বরে চাকরিচ্যুত হন সাবেক এমডি মাহবুব। দুর্নীতির একই ধারা ধরে রেখেছেন আমিনুল ও মনারুল। সাবেক এমডি মাহবুব থাকার সময় থেকে এ পর্যন্ত গত সাত বছরে ঋণ ও প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎসহ নানাভাবে অর্ধশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। দুর্নীতির অভিযোগে মামলাসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা হিসেবে তারা বরখাস্তও হয়েছিলেন। পরে ওদুই কর্মকর্তার দুর্নীতি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগও যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরে আমিনুল ও মনারুলসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করে দুদক।
ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের পদটি ছাড়াও আমিনুল ইসলাম চারটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর একটি হাজামাজা বা পতিত পুকুর পুনঃখননের মাধ্যমে সংগঠিত জনগোষ্ঠীর পাট পচানো-পরবর্তী মাছ চাষের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প। ৫৯ কোটি ৭১ লাখ ২১ হাজার টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান। প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের শস্য সংগ্রহ-পরবর্তী সহযোগিতার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ, এই প্রকল্পের ব্যয় ৬১ কোটি টাকা। এ ছাড়া ১৯ কোটি ৫০ লাখ ২৯ হাজার টাকা ব্যয়ের জলবায়ু দুর্গত এলাকায় সৌরশক্তি উন্নয়ন কর্মসূচি, ২৪ কোটি ৯৫ লাখ দুই হাজার টাকা ব্যয়ের ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রে সোলার সিস্টেম স্থাপন কর্মসূচি এবং আট কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনে সৌরচালিত সড়ক বাতি স্থাপন কর্মসূচিতে। আর মনারুল ইসলাম যুগ্ম পরিচালক (নীতি ও পরিকল্পনা), যুগ্ম পরিচালক (মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) এবং পিডিবিএফ স¤প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আইসিটি প্রকল্প নামে আরেকটি প্রকল্পের দায়িত্ব পালন করলেও গত ৩১ মার্চ এর মেয়াদ শেষ হয়। এর পরের চাপে যুগ্ম পরিচালক (মানবসম্পদ বিভাগ) পদটিও ছেড়ে দেন মনারুল। প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯০ সালে পিডিবিএফে যোগ দেন আমিনুল ইসলাম। দিনাজপুরে আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপক থাকাকালে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৪ সালের ২৮ জুলাই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়। তদন্তে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। পরে তার বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) তিন বছর বন্ধ ছিল। সেই আমিনুল গত ছয় বছরে পাঁচটি পদোন্নতিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, আইনবহির্ভূতভাবে তিনি একাই প্রতিষ্ঠানের তিনটি পদ আঁকড়ে রেখেছেন। ছয় বছরে পাঁচ পদোন্নতি আমিনুলের : আমিনুল ইসলাম ২০০৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক (সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর) থেকে পদোন্নতি পেয়ে মাঠ পরিচালনা বিভাগের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব নেন। দুই বছর তিন মাস ১৬ দিন পর ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) থেকে পদোন্নতি পেয়ে উপ-পরিচালক হন। এর এক বছর ছয় মাস ৯ দিন পর ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই উপ-পরিচালক থেকে পদোন্নতি পেয়ে হয়ে যান যুগ্ম-পরিচালক। যুগ্ম-পরিচালক হিসেবে এক বছর আট মাস সাত দিন কাজ করার পর ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ তিনি পদোন্নতি পেয়ে হন অতিরিক্ত পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত)। সেই পদে ৯ মাস ৫ দিন কাজ করার পর ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর পদোন্নতি পেয়ে হন অতিরিক্ত পরিচালক। এর সাত মাস ২৪ দিনের মাথায় ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট অতিরিক্ত পরিচালক থেকে পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে পদোন্নতি পান আমিনুল ইসলাম। অথচ পিডিবিএফের নীতিমালায় সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে কোনো পদে বা গ্রেডে ন্যূনতম তিন বছর পূর্ণ না হলে প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী পরবর্তী পদোন্নতির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। পিডিবিএফের এই বিধানকে উপেক্ষা করে অন্যায়ভাবে আমিনুল ইসলাম পর পর পদোন্নতি পেয়ে এখন প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা। পিডিবিএফের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমিনুল ইসলাম ও মনারুল সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিষ্ঠানটি পুরো জিম্মি। তাদের দুর্নীতি দুদক অনুসন্ধান করছে। এর পরে পিডিবিএফের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলার মতো ঘটনা ঘটেছে।
পিডিবিএফের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মদন মোহন সাহা ইনকিলাবকে বলেন, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সচিবকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এখনে আমার করার কিছু নাই। সচিব স্যার বিষয়টি দেখবেন। এদিকে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আমিনুল ইসলাম মোবাইল ফোনে ইনকিলাবকে বলেন আমি এ ধরনের অনিয়ম করি নাই। আগের ডিজি করেছেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ