পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে ঘুষের ‘প্রস্তাব’ দেওয়ায় চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করায় বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ নিয়ে শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে রেলখাতে চীনের বিনিয়োগ আসবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কালো তালিকাভুক্ত করার কারনে বাংলাদেশে আর কোনো প্রকল্পে ভবিষ্যতে অংশ নিতে পারবে না চায়না হারবার। এছাড়া বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে, সেগুলোর নিয়েও জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে চীনের ঋণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (বিডিএফ) বৈঠক উপলক্ষে গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির বাস্তবায়নাধীন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পে কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, চীন এ প্রকল্পে আর অর্থায়ন করবে না। তাই এ প্রকল্প এখন আমরা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করব। পরদিন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, কোম্পানিটি ঘুষ দিতে চেয়েছিল। সচিব বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। এজন্য কোম্পানিটিকে বø্যাক লিস্টেড করা হয়েছে। কোনো কাজ করতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, চীনের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণে ২০১৬ সালের অক্টোবরে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে। গত বছর চায়না হারবার চূড়ান্ত প্রস্তাব জমা দেয়। তবে কোম্পানিটি ৪২ শতাংশ বেশি দরে কাজটি চেয়েছিল। পরে কিছুটা ছাড় দিয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) নির্ধারিত দরেই কাজ করতে রাজি হয়েছিল চায়না হারবার। শেষ পর্যন্ত তারা এ কাজের জন্যই ঘুষ প্রস্তাব করেছিল সচিবকে।
চায়না হারবার কত টাকা ঘুষ প্রস্তাব করেছিল জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কত বলল, আমি ভুলে গেছি। ৫০ লাখ টাকা বা এমন কিছু হবে।’ কোম্পানিটি নতুন করে কোনো কাজ পাওয়ার জন্য ঘুষ সেধেছিল কি নাÑএ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘না না, কাজ তো হয়ে গেছে। কাজ পেয়ে গেছে তারা। আমার মনে হয়, খুশি রাখার জন্য ঘুষ দিতে চেয়েছিল, কাজে চুরি করবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানীকে কালো তালিকাভুক্ত করার পর পুরো চীনের বিনিয়াগ নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে রেলওয়ের বড় বড় কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নে অনশ্চিয়তা উঁকি দিচ্ছে। এরই মধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে চীনের ঋণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ স্থাপনে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এজন্য ২০১৬ সালের আগস্টে চায়না রেলওয়ে গ্রæপের সঙ্গে চুক্তি সই করা হয়। জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর পর প্রায় দেড় বছর হয়ে গেলেও এখনও ঋণের নিশ্চয়তা মেলেনি। এজন্য চলতি অর্থবছর ৬ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ বাতিল করতে হচ্ছে। চলতি অর্থবছর প্রকল্পটিতে বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার ৬০৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। তবে চীনের ঋণ না পাওয়ায় তা কমিয়ে ৯৯৩ কোটি ৮ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রকল্পটির বরাদ্দ ৮৭ শতাংশ কমানো হচ্ছে।
সূত্র জানায়, রেলওয়ের মহাপরিচালককে স¤প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। এতে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঋণচুক্তি ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হবে বিবেচনায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৭ হাজার ৬০৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এর মধ্যে ঠিকাদারকে ২০ শতাংশ অগ্রিম প্রদান ছাড়াও মালামাল সরবরাহ ও নির্মাণ কাজের ব্যয় এবং সিডি-ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়া ডিজাইন রিভিউ ও নির্মাণ তত্ত¡াবধানের জন্য পরামর্শক খাতেও বরাদ্দ ছিল।
সূত্র জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রæপ লিমিটেডের (সিআরইসি) সঙ্গে ২৭ হাজার ৬৫২ কোটি টাকার বাণিজ্যিক চুক্তি সই হয় ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট। এর পর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম দফা ও ২০১৭ সালের ১৯ আগস্ট সংশোধিত ঋণ প্রস্তাব চীনা দূতাবাসে পাঠানো হয়। ঋণচুক্তি স্বাক্ষর ত্বরান্বিত করার জন্য কয়েক দফা চিঠি ও আধা-সরকারিপত্র (ডিও) দেওয়া হয়। দুটি প্রতিনিধিদল চীন সফর করে। উচ্চ পর্যায়ের আরেকটি দল চীন সফরে যাবে শিগগিরই। যদিও এখনও প্রকল্পের ঋণ মঞ্জুরি ও ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে চীন সরকারের কোনো কনফারমেশন পাওয়া যায়নি।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের পর ওই ঋণ কার্যকর হয়ে চীনা এক্সিম ব্যাংকের অর্থ ছাড় হওয়াটাও দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সেতু কর্তৃপক্ষের প্রকল্প কর্ণফুলী টানেলের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের এক বছরের বেশি সময় পর চীনা এক্সিম ব্যাংক অর্থ ছাড় করে। আর বেইজিংস্থ বাংলাদেশ ইকোনমিক কাউন্সিলরের পাঠানো ই-মেইল থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে, ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আরও অনেক প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে এবং ঋণচুক্তি সই কতটা দ্রæততার সঙ্গে সম্পন্ন হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় ইআরডি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ইআরডি থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, আলোচ্য প্রকল্পে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপি বরাদ্দের বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের পর তা কার্যকর ও চলতি অর্থবছর ছাড় হওয়ার সম্ভব নয়। এতে করে প্রস্তাবিত এডিপি বরাদ্দ ব্যয় করা সম্ভব হবে না। অন্যদিকে নির্মাণ শুরু না হওয়ায় ডিজাইন রিভিউ ও সুপারভিশনের জন্য অর্থ ব্যয় করা প্রয়োজন হবে না। আর নির্মাণকাজ শুরু না হওয়ায় প্রকল্পটির ব্যবস্থাপনা ইউনিটের জনবল নিয়োগের সম্ভাবনাও নেই। এই দুই খাতে অর্থ ব্যয় হবে না। এতে রেলওয়ের সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন ৪৫ শতাংশ কম হবে ও জাতীয় অগ্রগতিতে বড় প্রভাব ফেলবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী চায়না হারবারকে কালো তালিকাভুক্ত ঘোষণা করার পর এ প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কথা না বললেও তাদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। জানা গেছে, চায়না হারবার ইস্যুতে ইতোমধ্যে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে চায়না কোম্পানীগুলো। তারা চীন সরকার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।