পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের সমৃদ্ধির পথ যাত্রায় উন্নত দেশগুলোকে পাশে দাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিবেশের পরিবর্তন ও জলবায়ু সংক্রান্ত হুমকির মোকাবেলা করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বড় চ্যালেঞ্জ অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এজন্য উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বান্তবায়নে উন্নত দেশসমূহকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য বাংলাদেশের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রয়োজন এবং আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে আসন্ন সমস্যার প্রতি আরো মনোযোগ দিতে হবে। তিনি বলেন, চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আমরা আর্ন্তজাতিক সহযোগী দেশ ও সংস্থাসমূহসহ ব্যক্তিখাতের অংশীদারিত্বকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমবারের মতো ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ইউএনসিডিপির ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ এলডিসি হতে উত্তরণের যোগ্যতা লাভ করবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে উন্নয়নশীল দেশসমূহের সমকক্ষ হবে। তিনি বলেন, তবে এলডিসি হিসাবে বাংলাদেশ বর্তমানে বেশ কিছু সুবিধা ভোগ করে যা গ্রাজুয়েশনের পর বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থনৈতিক গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং কার্যক্ষেত্রে প্রস্তুতির মাধ্যমে তা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব। বাংলাদেশ এর প্রভাব মোকাবেলায় কৌশলগত প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
বাংলাদেশকে অমিত সম্ভাবনার দেশ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বুকে একটি গতিশীল অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার প্রত্যয় ও উপকরণ আমাদের রয়েছে। তিনি আশা করেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের এই বৈঠক দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত, সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য যৌথ কর্মপন্থা নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উৎপাদনশীলতাকে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি করে বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতাগুলো আংশিকভাবে পুষিয়ে নেয়া যেতে পারে। শিক্ষা ও দক্ষতার সঠিক ব্যবহারের ফলে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নসহ রেমিটেন্স বৃদ্ধি পাবে এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগকে উৎসাহিত করবে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। সারাদেশে ১৮ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। জনগণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি মাধ্যম হিসেবে এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের নিকট প্রশংসিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতার অন্যতম দুটি প্রধান কারণ হচ্ছে- দারিদ্র্য এবং জেন্ডার-বৈষম্য। আমাদের সপ্তম পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার কেন্দ্রবিন্দুতে নারীর ক্ষমতায়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি বলেন, শহরে টেকসই পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে বড় বাসের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ র্যাপিড মাস ট্রানজিট, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং রেলভিত্তিক মাস ট্রানজিট সিস্টেম চালু করা হয়েছে। প্রাইভেট সেক্টর এবং এনজিওগুলিকেও হাউজিং এবং অন্যান্য সার্ভিস ডেলিভারি যেমন স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদির ক্ষেত্রে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগ ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য কৃষিতে পরিবর্তন প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষিতে জলবায়ু ও দুর্যোগ সংক্রান্ত ঝুঁকি প্রতিরোধ ও হ্রাস করার জন্য আমরা টেকসই ও উৎপাদনমুখী কৃষি পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছি। গবাদিপশু উৎপাদনের পদ্ধতি ও পরিবর্তিত গ্রেইজিং পদ্ধতি প্রবর্তন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। একইসাথে আমরা জলবায়ু সহনীয় খাদ্য উৎপাদন পদ্ধতি, লবণাক্ত পানি এবং বন্যা সহনীয় শস্যাদি উৎপাদনের চেষ্টা করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত এক দশকে আমাদের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.২৬ শতাংশ। গত অর্থবছরে এই হার ৭.২৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে আমাদের রপ্তানী আয় ও বিদেশ থেকে প্রেরিত রেমিট্যান্সের পরিমাণ তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় নয় গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে যেখানে আমাদের দারিদ্র্যে হার ছিল ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ, আমরা সেই দারিদ্র্যের হার ২২ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। অতি দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৯ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দারিদ্র্র্যের হার ১৪ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেই সরকার কাজ করছে।
জিডিপির ভিত্তিতে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ আর ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩২তম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক আর্থিক বিশ্লেষকদের মতে ২০৩০ ও ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ জিডিপি ও ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে বিশ্বের যথাক্রমে ২৮ ও ২৩ তম অর্থনীতির দেশে হিসেবে স্থান করে নিতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রেমিটেন্স এসেছে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিদ্যুৎ উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট। শতকরা ৮৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছর হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যে আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, রূপকল্প-২০২১ এবং জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ অর্জন করতে হবে। আমরা রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে কাজ করছি। রূপকল্প-২০২১ লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর করা। তিনি বলেন, আমরা এই ফোরামে এজেন্ডা বাস্তবায়নে আমাদের লক্ষ্য ও কৌশল আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। এ বিষয়ে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত জানতে চাই। এ উন্নয়ন পরিকল্পনার লক্ষ্য ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগী, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী ও বেসরকারি খাতসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে টেকসই প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, মহাপরিচারক এবং সিইও অব ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) সুলেমান জাসির আল হার্বিশ, বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডিক্সন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েনচাই জ্যাং, জাপানের মিনিষ্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সের উপ মহাপরিচালক মিনরু মসুজিমা এবং রেনজি তেরিঙ্ক, রাষ্ট্রদূতগণ এবং ইইউ প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বৈদেশিক সম্পদ বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আজম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। মন্ত্রীপরিষদ সদস্য, জাতীয় সংসদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনিতিক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের আর্থসমাজিক উন্নয়নের ওপর একটি ভিডিও তথ্যচিত্র পরিবেশিত হয়।
সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত আগামী বাজেটেই
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী বাজেটের সময় বেসরকারি স্কুলের এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পড়ালেখার মান সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে নীতিমালার আলোকে এমপিওভুক্তি ও সরকারিকরণ করা হবে।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারি সম্পূরক প্রশ্নে এমপিওভুক্তির বিষয়ে জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কোন কোন স্কুল এমপিওভুক্ত, কোন কোন স্কুল সরকারিকরণ সেটা একটা নীতিমালার ভিত্তিতে করছি। আমরা যখন বলেছি, নিশ্চয়ই সবকিছু বিবেচনা করে, একটা তালিকা করে এগুলোর অবস্থান দেখে পরবর্তী বাজেট যখন আসবে তখন সিদ্ধান্ত নেব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে দাবি নিয়ে আসছেন। তাদের আশ্বস্ত করা হচ্ছে। তবে এটা করতে বাজেটে কত টাকা আছে, তা দেখতে হবে। কোন স্কুল এটা পাওয়ার যোগ্য, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কত, দেখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতাই সর্বপ্রথম প্রায় ৩৬ হাজার স্কুলকে সরকারিকরণ করেছিলেন। এরপর আবার আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠণ করলো তখন আমরা ২৬ হাজার স্কুল সরকারি করে দিয়েছি। তখন কিন্ত একটা কথা ছিল যে, আর কোন স্কুলকে সরকারিকরণের দাবি করা যাবে না, এমপিওভুক্ত করলেই হবে। এরপর অনেক স্কুলকে এমপিওভুক্ত করে দিয়েছি। এরপর দেখলাম আবার শিক্ষকরা আন্দোলন শুরু করলেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক এলাকায় কোথায় কত স্কুল হবে, কয়টা স্কুল প্রয়োজন- সেগুলো কিন্তু একটা হিসাব করে সেভাবে তৈরি করার নীতিমালা আমরা করে দিয়েছি। সেভাবেই করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে একজন এল, মাত্র দেড় শ ছাত্রছাত্রী। সেটা সরকারিকরণ করার প্রস্তাব নিয়ে আসছে। আমার আত্মীয়। আমি বলে দিয়েছি, যেখানে মাত্র দেড় শ ছাত্র-ছাত্রী এটাকে কী করে সরকারিকরণ করব। আত্মীয় হলেই বা আমি ওখানে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলাম বলেই, করতে পারব না। যৌক্তিকতা তো থাকতে হবে। আমার আত্মীয় বলেই আমার কাছে একটা প্রস্তাব নিয়ে এল, আর আমি তা দেখেই সরকারি করে দেবো! এত বড় অন্যায় তো আমি করব না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর যে আত্মীয় এসেছিলেন তাঁর বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেই সেই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কারণ এ সময় পীরগঞ্জ থেকে নির্বাচিত সাংসদ স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনার এলাকার মাননীয় স্পিকার। এ সময় স্পিকার পাল্টা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার শ্বশুর বাড়ি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষার মান, শিক্ষকদের মানএগুলো বিবেচনায় নিয়ে নীতিমালার ভিত্তিতে সরকারিকরণ বা এমপিওভুক্তি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, বাজেটের টাকা জনগণের টাকা। এই জনগণের টাকা হেলাফেলা করে ফেলে দেওয়ার নয়। এটা দিয়ে যাতে যথাযথ ভাবে জনগণের কল্যাণে কাজ হয় সেটাই তাঁরা চান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, নির্বাচন এলেই দেশের একটি শ্রেণী আছে তারা মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। দেশে অসাংবিধানিক শাসন বা জরুরি অবস্থা আসলে তাদের গুরুত্ব বাড়ে। এদের মাথায় একটাই জিনিস থাকে যদি অস্বাভাবিক, অসাংবিধানিক, মার্শাল ল’ বা জরুরি অবস্থা কখন আসবে, তাদের গুরুত্ব পাবে। এই শ্রেণীর মানুষরা আঁকাবাঁকা বা অবৈধপথে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। জনগণের ভোট পাবে না বলে তাদের নির্বাচনে আসার সাহস নেই। জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমামের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময়ও তারা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। আর ২০১৩ সালেও বিএনপি নেত্রী (খালেদা জিয়া) নির্বাচন বানচাল করে আঁকা-বাঁকা পথে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিলেন। তাদের স্বপ্ন পুরণ হয়নি। এই শ্রেণীর মানুষরা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য যন্ত্রণাদায়ক বলে উল্লেখ করেন তিনি। একই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আমি সাহস নিয়ে দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এজন্যই আমাকে হত্যার জন্য বুলেট-গুলি, গ্রেনেড হামলা, বড় বড় বোমা পুঁতে রাখা হয়। তবুও আমি মরি না। আল্লাহ আমাকে কীভাবে যেন বাঁচিয়ে রাখেন। হয়তো দেশের মানুষের জন্য কোন ভাল করাবেন। আর মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না। কী পেলাম আর কী পেলাম না- সেই হিসাব আমি মেলাই না। বরং দেশের জন্য কী করতে পারলাম, দেশের মানুষকে কতটুকু শান্তি, স্বস্তি ও উন্নতি দিতে পারলাম, সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় কথা।
ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন বিশেষণ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কী পেলাম বা কী পেলাম না তার হিসাব আমি করি না। কাজ করি দেশের মানুষের জন্য, এদেশের প্রয়োজনে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর কেন দেশের উন্নয়ন হয়নি? একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই দেশের মানুষ উন্নয়নের ছোঁয়া পায়। আমি উচ্চবিত্তদের কথা চিন্তা করি না, দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং তারা দু’বেলা পেটভরে খেয়ে স্বস্তি, শান্তি ও মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে চলছে কি না, সেটিই আমার কাছে সবচেয়ে বড়কথা এবং আমার প্রধান লক্ষ্য। জাসদ দলীয় এমপি নাজমুল হক প্রধানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও জনগণকে ন্যায় বিচার দেওয়ার লক্ষ্যে বিশেষ ভ‚মিকা রাখছে। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর খুনি মোশতাক ও জিয়ারা খুনীদের বিচার বন্ধ করে পুরস্কৃত করে। আত্মস্বীকৃত খুনীদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা করা হয়।
সরকারি দলের এমপি মো. ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলের সাথে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ডুয়েলগেজ রেললাইনসহ পৃথক রেল সেতু নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এতে সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এলাকার জনগণের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। এজন্য যমুনা নদীর ওপর বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইনের সংস্থানসহ পৃথক রেলসেতু নির্মাণের জন্য সরকার ইতোমধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বরে একনেকে অনুমোদিত হয় এবং ২০১৬ সালের ২৯ জুনে জাইকার সাথে ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসের জন্য (পরামর্শক নিয়োগ) ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তিনি আরো বলেন, প্রকল্পটির বিশদ ডিজাইন প্রণয়নের জন্য গত বছরের ২ মার্চে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গত বছরের ১৫ মার্চ থেকে কাজ শুরু করে। বর্তমানে জিওটেকনিক্যাল ও টপোগ্রাফিক সার্ভেসহ ডিটেইল ডিজাইন প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। অচিরেই রেল সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হবে। আওয়ামী লীগের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান প্রতিবন্ধী বান্ধব সরকার কোমলমতি প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার প্রতি অত্যন্ত যত্মশীল। কোমলমতি প্রতিবন্ধী শিশুরা যাতে সাধারণ স্কুলেই শিক্ষা লাভের সুযোগ পায় সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। কারণ সরকার প্রতিবন্ধীদেরকে মূল ধারার জনগণের সাথে সম্পৃক্ত করতে চায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।