পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোলায় আবিস্কৃত বিপুল গ্যাসের ব্যবহার নিশ্চিতে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনসহ তা জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তির ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন বলে জানা গেছে। ভোলার ভেদুরিয়ার কাছে ‘ভোলা নর্থ-১’ নামে খনন চলমান কুপেও গ্যাসের মজুদ লাভের খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেন গত রোববার। ভোলায় আরো একটি কুপে গ্যাসের সন্ধান পাবার আশাব্যঞ্জক খবরের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এ মনোভাব ব্যক্ত করেন। ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাবে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দক্ষিনাঞ্চলের শিল্প উদ্যোক্তাসহ সাধারন মানুষ। ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে ভোলায় প্রথম গ্যাস আবিস্কারের পরে ২০০৯ সালে স্থানীয়ভাবে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বানিজ্যিক সরবরাহ শুরু হলেও অদ্যাবধি তা দেশের অন্য কোথাও সরবরাহ করা হয়নি। অথচ ভোলায় বিপুল গ্যাসের মজুদ বিদ্যমান। ফলে ভোলার গ্যাসের বানিজ্যিক ব্যবহার এখনো নিশ্চিত হয়নি। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল হয়ে বাগেরহাট পর্যন্ত গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপন কাজ বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন থাকলেও মাত্র ৩০ কিলোমিটার দুরে ভোলার গ্যাস বরিশাল হয়ে জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তির গনদাবী এতদিন উপেক্ষিত ছিল। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে অনুযায়ী ভোলার গ্যাস বরিশাল-গোপালগঞ্জ হয়ে বাগেরহাটে জাতীয় গ্রীডে সংযূক্ত করা হলে তা দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ সারাদেশে শিল্প বিপ্লব ঘটাতে পারে। পাশাপাশি মোংলা ইপিজেড’কেও যথেষ্ঠ শক্তিশালী করতে সহ্য়াক হতে পারে।
এদিকে দেশের বৃহত্তম ব-দ্বীপ জেলা ভোলাতে আরো একটি কুপে গ্যাসের সন্ধান পাবার ব্যপারে আশাবাদী রাষ্ট্রীয় খনিজ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ‘বাপেক্স’। ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়ার কাছে ‘ভোলা নর্থ-১ নামের ঐ কুপে গত ডিসেম্বরে খনন কাজ শুরু করে বাপেক্স। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী কুপে গাসের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলে আভাস মিলেছে। কুপটি পরিপূর্ণভাবে খনন কাজশেষে গ্যাসের উপস্থিতি ও মজুদ সম্পর্কে নিশ্চিত ধারনা লাভ করা যাবে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাপেক্স-এর দায়িত্বশীল মহল।
গত অক্টোবরেও ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসকুপের অদুরে মুলাইপতন গ্রামের ‘শাহবাজপুর ইষ্ট-১’ নামে খননকৃত একটি কুপে গ্যাসের মজুদ মেলে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-উপত্ত অনুযায়ী ঐ কুপটিতে গ্যাসের মজুদ প্রায় ৭২০ বিলিয়ন ঘনফুট বলে জানা গেছে। এর ফলে এ পর্যন্ত ভোলায় আবিস্কৃত গ্যাসের মজুদ ১.৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট বলে ধারনা করা হচ্ছে। খনন কাজ চলমান ‘ভোলা নর্থ-১’ কুপেও ‘শাহবাজপুর ইষ্ট-১’ কুপ-এর অনুরূপ গ্যাসের মজুদ থাকতে পারে বলে একাধিক কর্মকর্তা ধারনা করছেন। এর ফলে ভোলায় গ্যাসের মজুদ ২ ট্রিলিয়নে উন্নীত হলেও অবাক করার মত কিছু থাকবে না। দায়িত্বশীল মহলের মতে ‘পুরো দ্বীপ জেলাই গ্যাসের ওপরে ভাসছে’।
বাপেক্স-এর হিসাব অনুযায়ী, দেশের পুরনো ২৬টি গ্যাস ক্ষেত্রে ২০১৬ সালে পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত প্রমানিত গ্যাসের মজুদ ছিল ১৩ দশমিক ৬০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।
গ্যাস সঙ্কটের মধ্যে গত কয়েকবছরে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে উত্তোলন বাড়িয়ে দৈনিক ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নিতে পেরেছে সরকার । কিন্তু সারাদেশে দৈনিক চাহিদা রয়েছে তিন হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের।
উল্লেখ্য, সরকারী নিজস্ব তহবিলে বাপেক্সে খনন শেষে ১৯৯৫ সালের ৮ নভেম্বর ভোলার শাহবাজপুরের ১ নম্বর পরিক্ষামূলক কুপে গ্যসের সন্ধান পায়। পরবর্তিতে দেশীয় অর্থেই মুল কূপের কাছেই ভোলায় আরো একটি পরিক্ষামূলক কুপ ও ২টি বানিজ্যিক কুপ খনন করা হয়। প্রতিটি কুপেই গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। বর্তমানে ভোলার দুটি বানিজ্যিক কুপ থেকে প্রতিদিন ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সম্ভব হলেও এ পর্যন্ত দৈনিক গড়ে ৩৫ মিলিয়ন-এর বেশী গ্যাস ব্যবহার হচ্ছেনা। ২০০৯-এর ১১ মে সর্ব প্রথম ভোলার শাহবাজপুর কুপ থেকে বানিজ্যিক ভিত্তিতে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। পরবর্তিতে সেখানে ৩৫ মেগাওয়াটের একটি রেন্টাল পাওয়ার এবং ২০১৬ সালে পিডিবি’র ২২৫ মেগাওয়াটের একটি কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার স্টেশন চালু হয়। এ ছাড়াও কিছু আবাসিক সংযোগ প্রদান করা হলেও দীর্ঘদিনেও ভোলায় মজুদ গ্যাসের কোন পরিপূর্ণ বানিজ্যিক ব্যবহার না থাকায় বিপনন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান- ‘সুন্দরবন গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী’র পরিচালন ব্যয়ও উঠছেনা। এর সাথে গত অক্টোবরে নতুন কুপে আরো ৭শ বিলিয়ন বা ৭০ হাজার কোটি ঘনফুট গ্যাস আবিস্কারের ফলে ভোলায় গ্যাস মজুদ আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। গত অক্টোবরে আবিস্কৃত গ্যাস ক্ষেত্র থেকে ৩২ কিলোমিটার উত্তরে ভোলা সদর উপজেলার ‘ভোলা নর্থ-১’এ গত ডিসেম্বর থেকে কুপ খনন কাজ শুরু করে বাপেক্স ।
১৯৯৫ সালের নভেম্বরে ১ নম্বর পরিক্ষামূলক কুপ খননের আগে ভোলার ২৬৬ লাইন কিলোমিটার এলাকায় দ্বি-মাত্রিক এবং ২০১৬ সালে দ্বীপ জেলার ৬শ’ লাইন কিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক জরিপ পরিচালনা করা হয়। এসব জরিপের ধারাবাহিকতায়ই গত বছর টবগী ইউনিয়নের মুলাইপতন গ্রামে শাহবাজপুর ইষ্ট-১ নামে ৫ নম্বর কুপ খননে সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
মুলাইপতনের ‘শাহবাজপুর ইষ্ট-১’ কুপে আবিস্কৃত নতুন প্রায় ৭ বিলিয়ন ঘনফুটসহ চলমান ‘ভোলা নর্থ-১’ এর মজুদ সমুদয় গ্যাসের বানিজ্যিক ব্যবহার নিশ্চিত করার উদ্যোগ এখন সবচেয়ে জরুরী। নচেত ভূগর্ভের গ্যাস মাটির নিচেই থেকে যাবে। তা দেশের আর্থ-সামিজক উন্নয়নে কোনো কাজে আসবে না।
এ লক্ষ্যে সবচেয়ে জরুরী ভোলা থেকে বরিশাল-গোপালগঞ্জ হয়ে বাগেরহাট পর্যন্ত পাইপ লাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রীডে গ্যাস সঞ্চালন করা। যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে আসা গ্যাস ট্রান্সমিশন লাইন কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা হয়ে বাগেরহাট পর্যন্ত আসছে। এর ফলে বরিশাল, গোপালগঞ্জ ও খুলনাঞ্চলে পিডিবি ও সামিট পাওয়ারের একাধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসহ বিপুল শিল্প প্রতিষ্ঠান গ্যাস সংযোগ লাভ করবে। ফলে ঐসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যয়ও বহুলাংশে হ্রাস পাবে। ভোলাকে গ্যাস গ্রীড লাইনে সংযুক্ত করলে দেশের পশ্চিম জোনের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ব্যয়ও অর্ধেক হৃাস পাবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রকৌশলীগন। বর্তমানে সারাদেশের মধ্যে পশ্চিম জোনে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় সর্বাধিক ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।