পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের চমকপ্রদ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী বলেছেন, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। গতকাল সোমবার দুপুরে সফররত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারী বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে একথা বলেন।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বৈঠকের শুরুতেই দুই নেতা নিজেদের মধ্যে কুশল বিনিময় করেন বলে জানান প্রেস সচিব।
প্রণব মুখার্জী তার অবসর সময় কাটানোর বৃত্তান্ত তুলে ধরে বলেন, বই পড়েই এখন তার সময় কাটছে। তিনি বলেন, আমি জীবনের দীর্ঘ সময় রাজনীতি করেছি। ভারতের সংসদে এবং রাষ্ট্রপতির পদের মত সাংবিধানিক পদে ছিলাম। অবসর গ্রহণের পরে আমার অফুরন্ত সময় পড়ার জন্য। তিনি ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশে তার প্রথম বিদেশ সফরের কথাও স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরে বলেন, সরকারের বিভিন্ন বাস্তবধর্মী পদক্ষেপের ফলে দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। গত বছরের বন্যার ফলে দেশের অর্থনীতি খানিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিককে আশ্রয় প্রদান করেছে।
প্রণব মুখার্জীর মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজে অংশগ্রহণ করেন। এরআগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনের প্রধান প্রবেশ মুখে ফুলের তোড়া হাতে প্রণব মুখার্জীকে স্বাগত জানান। প্রণব মুখার্জী চারদিনের ব্যক্তিগত সফরে গতকাল রবিবার ঢাকা এসে পৌঁছান।
ইতিহাস সৃষ্টি করেন সংবেদনশীল লেখক, রাজা-মহারাজারা নয়: প্রণব মুখার্জি
আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের সমাপ্তি অধিবেশনে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বলেছেন, ইতিহাস সৃষ্টি করেন সংবেদনশীল লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী, স্রষ্টা, রাজা-মহারাজারা নয়। অন্যদের পরীক্ষায় পাস করার জন্য মুখস্থ করতে হয়, পরীক্ষা হয়ে গেলে ভুলে যায়। কিন্তু শিল্পীর ছবি, একজনের লেখা, তার কবিতা, নিজের লেখা উপন্যাস কখনও ভুলে যায়? তিনি বলেন, আপনারা আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, সেই আমন্ত্রণ রাখতে পেরে গর্বিত ধন্য মনে করছি। হয়তো এরপরও আরও কিছু কাজকর্ম হবে, কিন্তু আমার দায়িত্ব অনুযায়ী মুখ্য অতিথি হিসেবে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করছি। সবার ভালো হোক।
নিজের বই পড়া এবং পড়ার আগ্রহের কথা উল্লেখ করে প্রণব মুখার্জি বলেন, যখন রাজধানী কলকাতা থেকে কার্যালয় দিল্লী স্থানান্তরিত হয়, সে সময়ের বহু কাগজ গভর্ণর জেনারেলের অফিসে নেয়া হয়। তার মধ্যে অনেক গোপন ও প্রাচীন উপাদানও রয়ে গেছে। সেগুলো পড়তে অন্তত তিনটি প্রেসিডেন্সিয়াল টার্ম লাগবে। তা তো হবার নয়, যতটা পারা যায়, পড়তে আরম্ভ করলাম। অনেক বই রাষ্ট্রপতি ভবনে।
পাঠক হিসেবে এই সম্মেলনে যোগ দিতে পেরে নিজেকে ধন্য উল্লেখ করে প্রণব বলেন, কিছুক্ষণ আগে সম্মেলনে গৃহীত ও আলোচিত বিষয়গুলোকে চয়ন করে দেখলাম, ঢাকা সংকল্প তৈরি হয়েছে। সঠিকভাবে বর্তমান বিশ্বের মূল্যায়ন হয়েছে সেখানে। শিল্পী, সাহিত্যিক, লেখক তারা অঙ্গীকার করেছেন-পৃথিবীর এই চেহারা পরিবর্তন করতে হবে। যে পৃথিবীতে মানুষ হিংস্রতার শিকার হচ্ছে কোনও কারণ ছাড়া।
তিনি বলেন, গত একদশকে যে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ হয়েছে, তার কারণ কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা কী চান বোঝা যায় না। নিরীহ মানুষ প্রিয়জনের কাছে যাচ্ছেন, সেটা হাইজ্যাক করে লিভিং বোম্ব হয়ে গেল, কত মানুষের প্রাণ গেল। এই যে হিংস্রতা সেখানে মানুষ কিভাবে বাঁচবে। শুধু পরিবেশ দূষণ নয়, এরচেয়েও বড় দূষণ মানুষের চিন্তায়, ভাবনায়, মনে, কাজে। সেই দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে হবে না। জাতিসংঘ করতে পারবে না। করতে পারবে যারা শিল্পী, সাহিত্য স্রস্ট্রা, লেখক। যারা গত তিন দিনের সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন, তারাই নতুন পৃথিবী তৈরি করবেন। আছি একসঙ্গে মজুর-চাষীতে, মোরা নবযুগ স্রস্ট্রা।
একুশে ফেব্রুয়ারিকে সারাক্ষণ স্মরণ করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভারতের এই সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে। আজকের বাংলা, তৎকালীণ পূর্ব বাংলা দীর্ঘ ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মাতৃভাষার অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের উদ্দেশে সালাম ও প্রণাম। আনুষ্ঠানিকভাবে শুধু ২১ ফেব্রুয়ারি নয়, প্রতি মুহুর্তে মনে রাখতে হবে, আমরা দায়বদ্ধ তাদের কাছে। আমাদের এই ঐতিহ্য, হাজার বছরের ভাষাকে তারা রক্ষা করেছেন। লুট হয়ে যেতে দেননি। আগ্রাসকদের হাতে ধ্বংস হয়ে যেতে দেননি। বাংলাদেশের সরকার, বাংলা একাডেমী ঢাকা, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন, ফেন্ড্রস অব ইন্ডিয়া সোসাইটি যাদের যৌথ উদ্যোগে সম্মেলন হলো, তাদের ধন্যবাদ। বাংলা সাহিত্য কেবল বাঙালি চিন্তা, তার ধ্যান-ধারণার প্রতিফলন নয়, সর্বজনীনতার প্রতিফলন। সে কারণেই এই মঞ্চ থেকে এই সংকল্প নেয়া সম্ভব, এই বিষাক্ত পৃথিবীকে রক্ষা করবো। আজকে এর প্রয়োজন আছে।
স্বাগত প্রণব মুখার্জি ঃ প্রস্তুত চবি
চবি সংবাদদাতা : ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আসছেন আজ। তাকে স্বাগত জানাতে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রণব মুখার্জিকে ডি লিট ডিগ্রি প্রদান করবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আব্দুর রব হলের মাঠে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আজ (মঙ্গলবার) সকালে প্রণব মুখার্জি চট্টগ্রাম নগরীর রেডিসন হোটেলে পৌঁছবেন। সেখান থেকে দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৌঁছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সম্মানসূচক ডি লিট ডিগ্রি গ্রহণ করবেন। বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত ইউরোপীয় ক্লাব ঘুরে দেখবেন তিনি। সন্ধ্যায় রেডিসন ব্লতে বিশিষ্ট নাগরিকদের সাথে মতবিনিময় করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।