Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বেতন না পেয়ে কৃষিকাজ করেন মাদরাসা শিক্ষকরা

কনকনে শীতে অসুস্থ ২০০ জন

| প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : শৈত প্রবাহের কনকনে শীতের মধ্যে টানা অনশনে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রায় ২০০ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবি আদায়ে আমরণ অনশন করে যাচ্ছেন তারা। ৮ দিনের অবস্থান কর্মসূচি এবং টানা ৭দিনের অনশনেও সাড়া দিচ্ছেনা সরকার। একই ইস্যুতে নন-এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত মাদরাসা শিক্ষকদের জন্য সুষ্পষ্ট কোন ঘোষণা দেয়নি সরকারের কোন পক্ষই। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এর আগে গত রোববার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর সাথে তিন দফা বৈঠক সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়। এসব বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করলেও জাতীয়করণের বিষয়ে সুষ্পষ্ট কোন আশ্বাস দিতে পারেননি। এমনকি অনশন স্থলে এসে শিক্ষকদের মাঝে ঘোষণার জন্য শিক্ষক নেতারা অনুরোধ করলেও তিনি তাতে সম্মতি দেননি। ফলে বৈঠক শেষে বের হয়ে এসে অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা। গত ১ জানুয়ারি জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান শুরু করে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরারাসা শিক্ষক সমিতি; যা আটদিন পর আমরণ অনশনে রূপ নেয়। শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, গতকাল পর্যন্ত টানা অনশনে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে প্রায় ২০০ জনকে, দুইজন আছেন হাসপাতালে। নিজের আট বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে প্রথমদিন থেকে সেখানে আছেন ভোলার রহিমা বেগম, চরফ্যাশন উপজেলার উত্তর মাদরাজ ওলিউদ্দিন ইবতেদায়ী মাদরাসায় ১৪ বছর ধরে পড়ান তিনি। শীতের রাতে ছেলেকে নিয়ে কষ্টের কথা প্রকাশ করলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না বলে জানান তিনি। তার সঙ্গে আরো ১৩ জন নারী শিক্ষক আমরণ অনশনে আছেন। চরফ্যাশনের একটি কলেজ থেকে বিএ পাস করে শিক্ষকতায় আসা রহিমা বলেন, গত ১৪ বছর ধরে আমি ছেলে-মেয়েদের পড়াই, কিন্তু কোনো বেতন পাই না, ভাতা পাই না। আগে বই দেওয়ার পাশাপাশি উপবৃত্তি দিত। এখন উপবৃত্তি দেওয়াও বন্ধ। জাতীয়করণের আশ্বাস পেতে পেতে শিক্ষকরা এই পর্যায়ে ঠেকেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দাবি জাতীয়করণ। বেতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যাব না। ৩৩ বছর ধরে প্রায় সাত হাজার ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকরা ‘বেতন-ভাতা ছাড়াই’ শিক্ষার্থীদের পড়িয়ে যাচ্ছেন বলে জানান অনশনকারী শিক্ষকরা। বেতন না পাওয়ায় শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষিকাজ করে ছয়জনের সংসার চালান জয়পুরহাটের শিক্ষক আবদুল মোমিন। আন্দোলনের শুরু থেকেই স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বও পালন করতে দেখা যায় জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় মাত্রাই স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার এই শিক্ষককে। তিনি বলেন, আমাদের মাদরাসার চারজন শিক্ষকের সবাই অনশনে এসেছি। রাতে কনকনে শীতে এ সময়ে ঘরের ভেতরে অবস্থান করতেও কষ্ট হয়, অথচ সে অবস্থায় আমরা এখানে আছি। তবুও কেউ যেন আমাদের কথা শুনছে না। আগেরদিন বৈঠকের পর বৈঠক হয়েছে, সমাধানতো কিছু হয়নি। আমরা বেতনের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত এখান থেকে যাব না।
তিনি বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে তাকিয়ে অনেক কষ্ট হলেও মাদরাসা ছেড়ে যাইনি। প্রয়োজনে চাষাবাদ করেছি, আলু আবাদ করে সংসার চালিয়েছি। আমরা শিক্ষকরা ঢাকায় এলেও আমার স্ত্রী, সভাপতির স্ত্রী ও সভাপতির মেয়ে মিলে মাদরাসা খোলা রেখেছে। এক হাজারের বেশি শিক্ষক আমরণ অনশনে অংশ নিচ্ছেন বলে জানান স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি কাজী রুহুল আমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হলেও তিনি আমাদের আশ্বস্ত করতে পারলেন না। আমরা বলেছি, আপনারা জাতীয়করণের ঘোষণা দিন, প্রয়োজনে ক্রমান্বয়ে সেটা বাস্তবায়ন হোক। এক সাথে ১০ হাজার মাদরাসাকে জাতীয়করণ করে শিক্ষকদের বেতন দিতে বলি নাই আমরা। বলেছি, অর্থ সংকট থাকলে শর্তপূরণ সাপেক্ষে ক্রমান্বয়ে করতে পারেন সেটা। কিন্তু তারা ঘোষণা দিতে নারাজ। নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসাবে কাজ করে এবং প্রবাসী ছেলের আয়ে সংসার চলে জানিয়ে রুহুল আমিন বলেন, শীতের মধ্যে না খেয়ে, না ঘুমিয়ে আমরা অনশনে আছি। ওষুধ দরকার, ওষুধ নাই, টয়লেটের দরকার, টয়লেট নাই। এই তীব্র শীত নিয়ে আমরা আছি, কিন্তু জাতীয়করণের ঘোষণা না পেলে এখান থেকে যাব না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বেতন

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২
৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ