Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

স্বাধীনতা ও জনকল্যাণ

প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ
মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক
স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ কাছে আসলেই স্মৃতি টান টান হয়ে ওঠে। ওঠারই কথা। পৃথিবীতে বহু দেশ স্বাধীন হয়েছে। দাদা বাবা এবং শ্বশুরের কাছে শুনেছি ১৯৪০ সালের পরে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য মুসলিম লীগের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক সংগ্রামের কথা। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিলাম। মাধ্যমিক স্তরে নবম ও দশম শ্রেণীতে চতুর্থ পেপার বা বিষয় নিয়েছিলাম সিভিকস বা পৌরনীতি। উচ্চ মাধ্যমিকে এসে পুনরায় ঐ বিষয়ে পড়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি (সম্মান) বিভাগে ভর্তি হই; অন্যতম সাবসিডিয়ারী ছিল পলিটিক্যাল সাইন্স বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান। পাকিস্তান নামক দেশ সৃষ্টির কাহিনী এবং পাকিস্তান নামক দেশের অস্তিত্বের কাহিনী পাঠ্যপুস্তকে ছিল। যা কিছু পড়েছি সেই থেকে লব্ধ জ্ঞানের বিনিময়ে রাষ্ট্রটি সম্বন্ধে ধারণা মধুর হতে পারেনি। অনেক বইয়ের মধ্যে একটি বই এখনও মনে করি অতি প্রাসঙ্গিক; সে বইটি হল সেই আমলের তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক (বর্তমানের প্রবীণ অধ্যাপিকা) রওনক জাহান কর্তৃক লিখিত বই ‘পাকিস্তান : ফেইলিওর ইন ন্যাশনাল ইন্ট্রিগেশন’।
পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রে নৃ-তাত্ত্বিকভাবে ও ভাষাগতভাবে একাধিক জাতির অস্তিত্ব ছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠতম ছিল বাঙালি। অতঃপর ছিল পাঞ্জাবী, পাঠান, সিন্ধী ও বালুচি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চব্বিশ বছরের তো বটেই, আজকে পাকিস্তানের ঊনসত্তর বছর বয়সেও সকল পাঠান ও বালুচিকে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের আত্মার কাঠামোতে অলঙ্ঘনীয়ভাবে প্রথিত করা সম্ভব হয়নি। এর কারণ, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরেই যেই পাঠান ও বালুচিগণ স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করতো; রাষ্ট্র বিজ্ঞানের নিয়ম মোতাবেক কোনো রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সঙ্গে তাদের পরিচয় ছিল না। তাই তাদেরকে পাকিস্তানের আত্মার সঙ্গে একাত্ম করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বাঙালি?
একটি জনগোষ্ঠীকে জাতিতে রূপান্তরিত করার জন্য যেইরূপ দূরদর্শিতাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের নেতা প্রয়োজন, সেইরূপ নেতা পাকিস্তান নামক দেশে ছিল না। অধিকন্তু বিভিন্ন নৃ-তাত্ত্বিক ও ভাষাভিত্তিক জনগোষ্ঠী যারা ভৌগোলিকভাবে দূরত্বে অবস্থানকারী ছিল তাদেরকে একাত্ম করা অবশ্যই কঠিন কাজ ছিল। ঐ কঠিন কাজ সম্পাদনের জন্য কঠোর নেতৃত্ব অনুপস্থিত ছিল। যার কারণে পাকিস্তান ১৯৭১ সালে ভেঙে যায়। আজকে পঁয়তাল্লিশ বছর পর অনেক প্রকার প্রশ্ন করা যায়, উদাহরণস্বরূপ, (এক) ইয়াহইয়া খানের সামরিক সরকার ও ভুট্টোর পিপলস পার্টি যদি ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ গঠন করতো, তাহলে কি ২৬ মার্চ ১৯৭১ তারিখে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো? অথবা (দুই), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ যদি ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ইয়াহইয়া ও ভুট্টোর রাজনৈতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করতো তাহলে কি ২৬ মার্চ ১৯৭১ তারিখে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো? অথবা (তিন) ৭ মার্চ ১৯৭১ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি ঘোষণা করে দিতেন যে, আজ থেকে বাংলা স্বাধীন, তাহলে কি ঐ দিন রাতেই একটি গণহত্যা সংঘটিত হতো নাকি, দেশব্যাপী বাঙালি জাতি প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় পেতো? উদাহরণস্বরূপ যেই তিনটি প্রশ্ন উপস্থাপন করলাম সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গেলে একটি বা দু’টি বা তিনটি কলাম নয়, একটি পুস্তক রচিত হয়ে যাবে। স্বল্প পরিসরের কলামে বা নিবন্ধে এতবড় তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় আলোচনা কঠিন।
এই কলামের মাধ্যমে আমি পাক-ভারত উপমহাদেশের ১৯৪৬ সালের মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দের প্রতি অভিযোগ করছি, রাজনৈতিক ছলনার মাধ্যমে জনগণকে প্রতারণার। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব মোতাবেক তৎকালীন উপমহাদেশের পশ্চিম অংশে ও পূর্ব অংশে মুসলিম জনসংখ্যা প্রধান অঞ্চলগুলো আলাদা আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে উদ্ভূত হওয়ার কথা ছিল। ১৯৪৬ সালে হঠাৎ করেই মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ লাহোর প্রস্তাবকে সংশোধন করে পশ্চিমের ও পূর্বের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোকে একটিমাত্র স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রস্তাব করে। আমি দ্বিতীয় অভিযোগ আনছি ১৯৭১ সালের প্রথম তিন মাসের পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে যে, তারা জনগণের ভোটের রায়কে উপেক্ষা করে গায়ের জোরে ও বন্দুকের জোরে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রকে বাঁচাতে গিয়ে মানব ইতিহাসের একটি অন্যতম জঘন্য গণহত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে। স্বাধীনতা মানুষের জন্যই; স্বাধীনতাকে উপলব্ধি করার জন্যই রাজনৈতিক কাঠামো। অতএব, সেখানে বাধ্যতার বা জোর প্রদর্শনের কোনো অবকাশ নেই। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ২৬ তারিখ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক নেতৃবর্গের সামনে স্বাধীনতা ঘোষণা ব্যতীত আর কোনো বিকল্প রাস্তা খোলা ছিল না। মার্চ মাসের ঘটনাবহুল ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামো রক্ষা করার জন্য গণতান্ত্রিকভাবেই চেষ্টা করেছেন। অপরপক্ষে এটাও নিরেট সত্য যে, একাত্তরের পূর্বে বহু বছর ধরেই একাধিক গোষ্ঠী প্রকাশ্যে বা গোপনে বাঙালি জনগোষ্ঠীকে স্বাধীন করার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে, বাঙালি জনগোষ্ঠীকে সচেতন করার জন্য নিরলস সুকৌশল সংগ্রাম করেছেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এর আগের মাস ও বছরগুলোর কথা উল্লেখ না করলেও, ১৯৭০-এর ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১-এর মার্চ এই সময়ের ইতিহাস এই উজ্জ্বল সাক্ষ্য প্রদান করে যে, ধীরে ধীরে, তিলে তিলে, ক্রমে ক্রমে, বাঙালি জাতি স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। এই প্রস্তুতি সংগ্রামের নায়ক ছিলেন মওলানা ভাসানী এবং মহানায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগোষ্ঠীর ইতিহাসে ২৬ মার্চ দ্বিতীয়বার আর আসবে না। সেই দিন নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। অপরপক্ষে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তাত্ত্বিকভাবে বা থিওরিটিকালী বলতে গেলে এইরূপ দাঁড়ায় যে, ২৬ মার্চ ১৯৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ঐ তারিখে বাংলার মাটিতে উপস্থিত পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর মর্যাদা হয় অবাঞ্ছিত দখলদার হানাদার বাহিনীর। এই দখলদার বাহিনীর দখল থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য যেই যুদ্ধ শুরু হয়, তার নাম মুক্তিযুদ্ধ। নিদেনপক্ষে ১৯৫২ সাল থেকে শুরু করে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়ব্যাপী যে রাজনৈতিক সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছে তার যৌক্তিক চূড়ান্ত পরিণতি ছিল ১৯৭১ সালের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সময়সীমা হচ্ছে ২৬ মার্চ, ১৯৭১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত; দুইশত ছেষট্টি দিন। ২৬ মার্চ, ১৯৭১ আনুষ্ঠানিকভাবে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি একযোগে শুনতে পায়, এমনভাবে কোনো স্বাধীনতার ঘোষণা হয়নি। ঘোষণা হোক বা না হোক, স্বাধীনতার স্থপতি ও রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বটে। চট্টগ্রাম মহানগরের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের আহ্বানে সাড়া দিয়ে, তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম শহরের অদূরে অবস্থিত কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্রে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন বা স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। বাক্যকে সংক্ষিপ্ত করলে এটাও বলা যায় যে, তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। প্রথমে তিনি নিজের নামে ঘোষণা প্রদান করেন। চট্টগ্রাম মহানগরের রাজনৈতিক মুরুব্বীগণ ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এই ভুলটি দৃষ্টিতে আনার পর, দ্বিতীয়বার মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন বা প্রদান করেন। সেই সময় ঐ ঘোষণাটি অতি সময়োপযোগী ও কৌশলগতভাবে অতি প্রয়োজনীয় ছিল। কাজটি অত্যন্ত সম্মানজনক ছিল, অত্যন্ত সাহসের কাজ ছিল। অথচ কাজটিকে বিতর্কিত করে ফেলা হয়েছে। আমরা বিতর্কের বিরুদ্ধে।
আজ পঁয়তাল্লিশ বছর পর স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে গিয়ে আমরা পর্যালোচনা করতেই পারি যে, কী পেলাম আর কী পাইনি? স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি, সংবিধান পেয়েছি, পতাকা পেয়েছি, জাতীয় সংগীত পেয়েছি, আলাদা ভূখ- পেয়েছি, আলাদা সংসদ পেয়েছি এবং নিজেদের ভাগ্য নিজেরা গড়ার জন্য অসীম অবকাশ পেয়েছি। পঁয়তাল্লিশ বছরে আমরা উন্নতি বা অগ্রগতি করিনি এটা বলা ভুল; আমরা উন্নতি ও অগ্রগতি অবশ্যই করেছি, বিভিন্ন সেক্টরে বা আঙ্গিকে, কম বা বেশি। কিন্তু যতটুকু করা উচিত ততোটুকু অগ্রগতি ও উন্নতি হয়েছে কিনা সেটাই হল মিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গণভোটের প্রয়োজন নেই। সচেতন বাংলাদেশী মাত্রই একবাক্যে বলেন, আমাদের অগ্রগতি ও উন্নতি সমসাময়িক অনেক দেশের তুলনায় কম। এর জন্য দোষারোপের রাজনীতি নয় বরং আমাদের আত্মসমালোচনা প্রয়োজন। কেন আমরা পিছিয়ে পড়লাম বা কেন আমরা উপযুক্ত অগ্রগতি ও উন্নতি রচনা করতে পারলাম না?
এই কলামটি লেখা শেষ করছি ১৫ মার্চ, ২০১৬ তারিখ রাত আটটায়। নিখুঁত হিসাব না হলেও, নির্ভরযোগ্য হিসাব মোতাবেক আজকের তারিখের বাংলাদেশের জনসংখ্যার ষাট ভাগের বয়স পঁয়তাল্লিশ বছর বা তার থেকে কম। যার বয়স পঁয়তাল্লিশ বছর তার জন্ম ১৯৭১-এ। যার বয়স পঁয়ত্রিশ বছর তার জন্ম ১৯৮১-তে। যার বয়স পঁচিশ বছর তার জন্ম ১৯৯১ সালে। বাংলাদেশকে যদি একটি সংসার বা ঘরের মতো মনে করি তাহলে সেই সংসার বা ঘরে প্রবীণ মুরুব্বী হলাম আমরা যাদের বয়স ষাট বছরের বেশি এবং ঐ সংসার বা ঘরে তরুণ সন্তানরা হল চল্লিশ বছর বা তার থেকে কম বয়সী ব্যক্তিগণ। আমরা প্রবীণরা চলে গেলে এই ঘর ও সংসারের দায়িত্ব নিবে ঐ সন্তানেরা। কিন্তু সেই সন্তানেরা যদি বাংলাদেশের জন্ম মুহূর্তের তথা প্রসবকালীন কষ্টের ও বেদনার কথাগুলো না জানে; বাংলাদেশের শৈশব ও কৈশোরের কথাগুলো না জানে তাহলে সে এই সংসার ও ঘরকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারবে কি? অর্থাৎ আমি বলতে চাই যে, বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এই প্রজন্মকে জানতে হবে। জানানোর দায়িত্ব আমাদের। আমরা কেউ কেউ চেষ্টা করছি, কেউ কেউ করছি না। আহ্বান জানাই, সকলেই যেন চেষ্টা করি।
সংসারে কোনো সন্তান যদি জানে, তার শিশু বয়সে বা তার জন্মের আগে তার পিতামাতা কত কষ্ট করেছিল, তাহলে ঐ সন্তানের মনে পিতামাতার প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা গভীরতর হয়; পিতামাতার অর্জনকে ধরে রাখার জন্য তার সংকল্প গভীরতর হয়; সেই বিদ্যমান অর্জনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গভীর প্রচেষ্টা করে। স্বাধীন দেশের জন্যও এটা সত্য। স্বাধীনতা দিবসের একটি রচনায় সাময়িক বিষয় আলোচ্য নয়। কিন্তু বিগত চার-পাঁচ বছরের ইতিহাস আমাকে বাধ্য করছে প্রশ্ন করতে। প্রশ্নটা কী? আমাদের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি কি শুধুমাত্রই বিদেশী রাষ্ট্রের শারীরিক ও সামরিক আক্রমণ? স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রস্তুতি মানে কি শুধুমাত্রই শারীরিক ও সামরিক প্রতিহত করা? আমার মন উত্তর দিচ্ছে, না। গত চার-পাঁচ বছরের ঘটনাবলী আমাকে বলতে বাধ্য করছে, আমাদের স্বাধীনতা অরক্ষিত। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সংজ্ঞা মোতাবেক আমাদের ভৌগোলিক সীমানা চিহ্নিত। কিন্তু রাষ্ট্র বিজ্ঞান মনের স্বাধীনতা রক্ষার ফর্মুলা দেয়নি। আমাদের কিশোর ও তরুণদের একটি বড় অংশের মন, আক্রমণের শিকার। তারা সাংস্কৃতিক আক্রমণের শিকার। আক্রমণের বাহন হচ্ছে মিডিয়া তথা ইলেকট্রনিক মিডিয়া। ক্ষমতায় যারা আছেন তারা নীরবে এটাকে সমর্থন দিচ্ছেন। আমাদের অর্থনীতি সুরক্ষিত নয়। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য হুমকির মুখে। আমাদের ব্যাংকের সিন্দুকগুলো হুমকির মুখে। যার যেই কাজ, আমরা সেই কাজ করছি না। এই ভুলটা যদি ধরিয়ে দেওয়া হয়, তখন বলা হয় তুমি দেশবিরোধী! সরকারের থেকেও দেশকে ধ্বংস করা যায়, এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ ১৯৭৪ সালের সিকিম। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে, নির্বাচিত পার্লামেন্ট রেজুলিউশন পাস করে তারা স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়েছিল। লেন্দুপ দর্জি নামক একজন রাজনৈতিক নেতার নেতৃত্বে সিকিম স্বাধীন দেশের মর্যাদা স্যারেন্ডার করে, ভারতের প্রদেশ হয়েছিল। বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি ছিল ইউএসএসআর (মানে: ইউনিয়ন অফ সোভিয়েট সোসালিস্ট রিপাবলিকস)। আশির দশকের শেষাংশে, ইউএসএসআর-এর রাষ্ট্রীয় কর্ণধার মিখাইল গরবাচভ, পেরেস্ট্রয়িকা নামক প্রক্রিয়া শুরু করেন। এই প্রক্রিয়ার ফলশ্রুতিতে দেশ ভেঙে যায়। ছয়টি অঙ্গরাজ্য স্বাধীন হয়ে যায়। ইতিহাস বিচার করবে গরবাচভ কতবড় খেদমত বা অ-খেদমত করেছিলেন তার জাতির প্রতি। আজ সময় এসেছে প্রশ্ন করার, আমাদের স্বাধীনতা কতটুকু সুরক্ষিত? আমাদের মন-মগজ কতটুকু সুরক্ষিত? আমাদের আইন-আদালত কতটুকু সুরক্ষিত? আমাদের অর্থনীতি কতটুকু সুরক্ষিত? আমাদের মৌলিক অধিকারসমূহ কতটুকু সুরক্ষিত? ২৬ মার্চ, ২০১৬, স্বাধীনতা দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক আত্মসমালোচনার ও অনুসন্ধানের।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাধীনতা ও জনকল্যাণ

আরও পড়ুন