Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জা হা না রা আ র জু

প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মায়ের ভাষা

খট খট করে হাঁটে মেয়েটি ক্র্যাচে ভর করে
হাত পাতে, ভিক্ষা চায়- কেউ ওকে দু’একটি টাকা
দ্যায়, কেউ চলে যায়, ব্যস্ত পথচারী, উদাসীন সময়ের
আবর্তে দাঁড়ায় না কেউ।
গাড়ির হর্ন, ধোঁয়াচ্ছন্ন যানবাহন
নাগরিক কোলাহল সবকিছুর সাথে
মিশে যায় মেয়েটি।
ভিক্ষে চাওয়ার কণ্ঠধ্বনি তার-
সে ধ্বনি আমার মায়ের মুখের ভাষা!

জোয়ান ছেলেটাও রাস্তার ওপারে
একদা সন্ত্রাসীর গুলিলাগা পঙ্গু কনুইটা
দেখিয়ে সহানুভূতির দৃষ্টি কেড়ে নিতে চায়
তার কথার ধ্বনিতেও
আমার মায়ের মুখের বুলি।
পর্ণকুড়ে থেকে সুরম্য প্রাসাদে নিয়ত বহমান
ধ্বনি প্রতিধ্বনি আমার মায়ের মুখের ভাষা।

জা হা ঙ্গী র ফি রো জ
স্পর্শাতীত রয়ে গেলে

ছাদের উপরেও আকাশ অনেক উপরে
তুমি ওই আকাশের মেঘ স্পর্শাতীত
তোমাকে পাওয়ার জন্যে পর্বতের শিখরে উঠেছ
তুমি ভেসে এলে আর্দ্র তোমার ছোঁয়ায় সিক্ত হই
তবুও স্পর্শাতীত রয়ে গেলে!


আ ল মু জা হি দী
হে আমার প্রাচীনকালের ভাষা
হে আমার প্রাচীনকালের ভাষা তোমাকে
ভালোবাসতে দাও
আমাকে ভালোবাসতে দাও।
আমি তোমার প্রাগতিক ভাষাপ্রেমিক।
তোমার ভাষাই আমার আকাক্সক্ষা আর
আত্মার অমোঘ আলোড়ন
তুমি এলে বসন্তের উদগম হয়
সৌন্দর্যের স্তনবৃন্তে
প্রকৃতি মহার্ঘ হয়ে ওঠে
আমার হৃদয়, আমার আবেগ
ভালোবাসা মঞ্জুরিত হয়
সব মানবীয় চিহ্ন
মহাপৃথিবীর আভরণ হয়ে ওঠে
হে আমার প্রাচীনকালের ভাষা!
তোমাকে ভালোবাসতে দাও
আমি তোমার প্রাগতিক
ভাষাপ্রেমিক।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১

খা লে ক বি ন জ য়ে ন উ দ্দী ন
বিষণœ ভোরে

[বন্ধুবর ফরহাদ খাঁ স্মরণে]

কথা ছিলো বর্ণমালার মিছিলে আবার দেখা হবে
নগ্ন পায়ে আমরা দুজন হেঁটে যাবো আজিমপুরে
ফাল্গুনের শোকার্ত হাওয়া তোমার হৃদয় ছুঁয়ে যাবে
আমার পদাবলি শুধু তোমাকেই শোনাবো নিরিবিলি।

কথা ছিলো শিশির ভেজা ঘাসে আমরা হাঁটবো
স্মৃতির মিনারের পাদদেশে বসাবো পদ্যের একান আসর
পলাশ শিমুলেরা আবির ছড়িয়ে আরো রক্তিম হবে
তুমি শুধু দীর্ঘযাত্রার কথা বলবে আন্তহীন প্রত্যাশায়।
কথা ছিলো কণ্ঠিত হবো না, দ্বিধাহীন চিত্তে আলো ছড়াবো
দিবসান্তে ভেসে উঠবে মায়ের সাজানো স্বর ব্যঞ্জনে ছায়াচিত্র,
তুমি বলবে-আমাদের ভালোবাসার বাগানে ফুল ফুটেছে।

অথচ তুমি এলে না, একুশের এই বিষণœ ভোরে
শুধু আমি একা। মৃত্যুর মহিমায় তুমি কত উজ্জ্বল।

জ হী র হা য় দা র
শিশিরে শিশিরে মায়ের ভাষা

দূর প্রাচ্যের আবহমান এ বাংলার
সুনীল-সবুজ শিশিরে শিশিরে গাঁথা
আমার মায়ের অন্তরঙ্গ ভাষা

যে নিবিড় ভাষার সঙ্গীত বেজে ওঠে
জল-মাটি-নীলিমা আর মধু ভরা
গোলাপের জলজ্যান্ত পাতায়...

দিগন্তের বহু দূর থেকে আমি শুধু
মুগ্ধ হই বার বার...

ফা হি ম ফি রো জ
পূবালিনামা : ১০

হৃদয়কে তোতাপাখি বানিয়ে এখন
কানের সামনে মেলে ধরি
কওনা... কওনা সোনা মণি
সেদিন ময়না কি কইল
পবনের কানে
সমুদ্র ঢেউর লগে?

ওই পাখিটা আমার গৃহ
এবং বহু নভবাদী

তোতা... তোতা... তুই তো কাছেই ছিলি
তবে চুপ ক্যান্

কাল... আমার সঙ্গেই তোকে
কোর্টে যেতে হবে।

১৫.১২.২০১৫

আ শু তো ষ ভৌ মি ক
চার পঙ্ক্তি
প্রভাতে ফিরে যাই ঘুমের শহরে
বালুচর সাঁতার খেলে ঢেউয়ের বহরে
আসমানের নীলে উড়ে নীল নীল পাখি
মৃত্তিকার অন্তরে কী খোঁজে নিদ্রিত আঁখি?

মা হ মু দ কা মা ল
শব্দগুলো
শব্দকে বন্দী করে প্রকরণে বাঁধতে গেলে
শব্দগুলো ঢেউ হয়ে দ্রুতই পালিয়ে যায়
শব্দের অভাবে বাক্য সঙ্গতিহীন
চাঁদের আলোর মতো দ্যুতিময় শব্দগুলো
আড়ালের উপমায় উপমিত হলে
বাক্য তার হারায় জৌলুস
শব্দকে ধরতে গেলে, সুতোয় বাঁধতে গেলে
মালা ছিঁড়ে যায়।
প্রত্যক্ষ জীবনে যদি প্রকাশিত অপরোক্ষ অমা
তবে কিছু দিন বাক্য নিয়ে বন্ধ হোক খেলা
সময়ের ব্যবধানে মুঠো বন্দী শব্দগুলো
সঙ্গম সুখের মতো ধ্বনি করে
ধরা দেবে ছন্দময় কবিতাকল্পনালতা
মূর্ত হবে কালির খেয়ায়
অবশেষে কালের খেয়ায়।
৭. ৬. ২০১৫

সা য়ী দ আ বু ব ক র
আমার বাংলাদেশ
তুমি বসে থাকো পাশে, আমি দেখে যাই তোমার চোখের মতো আমার এ দেশ;
তারও দুই চোখে সমুদ্রের ঢেউ খেলা করেÑঅন্তহীন, অথই, অশেষÑ
বুনোহাঁসের মতো ডুব মেরে আমি চলে যাই তার বুকের গভীরেÑ
সেখানে শুনতে পাই তোমারই হৃৎস্পন্দনের মতো তারও বুকের আওয়াজ;
যেভাবে কৃষক দিবসের শেষে ক্লান্ত পায়ে ফিরে আসে তার নীড়ে
আমার হৃদয়ও সেইভাবে তার কাছে ফিরে আসে আজ।
তুমি বসে থাকো পাশে, আমার কাঁধের’ পরে রেখে দাও ঘাসের মতন একখানা হাতÑ
পাখিরা অন্দরে ফিরে গেলে তোমার চুলের মতো নেমে আসবে রাতÑ
সেই রাতে ফুটবে হাস্নাহেনা, আকাশের এখানে ওখানে কয়েকটি তারা;
একটি শেয়াল ছুটে যাবে অন্ধকারেÑতুমি যেন পেয়ো না হে ভয়Ñ
বাঘের মতন নয় ওরাÑকুঁতকুঁতে চোখ, বড় ভীতু; সারা রাত আমার হৃদয়
দিয়ে যাবে ঈশা খাঁর মতো তোমাকে পাহারা।
তুমি বসে থাকো পাশে, আমি কাহ্নপার চোখে চেয়ে চেয়ে দেখি নির্বাক নিশ্চুপ
আমার বাংলাদেশ আর তুমি একাকার হয়ে, হয়ে গেছো এক কায়া, এক রূপ।

ই দ্রি স স র কা র
জীবন
শান্তি আর প্রেম প্রবাহের মতো আনন্দ
আনন্দ আর শ্রমের মতো জগতের তৃণময় সুখ
তবু কেনো মানুষেরা স্ব-ইচ্ছায় জ্বালাময়ী
সূর্যের হৃৎপি-ে দুঃখের লোকালয় খোঁজে
দৃশ্য থেকে অদৃশ্যে দিন থেকে দিনান্তে?
কিছু পাখি উড়ে যায় কিছু ফিরে আসে
কিছু পাখি নরকের অগ্নি প্রাসাদও
ফুটো করে ধনাঢ্য অন্তরীক্ষে ঠোঁট রাখে
পেছনে রাজহংসীর কালো চোখ থেকে
হলুদ ছন্দের মতো সবুজের ভালোবাসা
ঝরে যায় দূরে কালো ডাহুক সংসারে

গো লা ম আ শ রা ফ উ জ্জ্ব ল
কবির কলম
কবির কলম তরবারির চেয়েও ধারালো
প্রতিটি শব্দ রণাস্ত্র কখনো দুঃসময় চৈত্রের খরতাপ
বিপ্লব বিদ্রোহ দুঃশাসন নগন্য
ছন্দ চরণ ত্রিফলা মহৌষধ উৎসব আনন্দ সবুজের ঢেউ
আছড়ে পড়ে কবির হৃদয়ে পাহাড় নদী আর সাগর...



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জা হা না রা আ র জু

২৬ মার্চ, ২০১৬
আরও পড়ুন