Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু : যোগ দিচ্ছেন না মাওলানা সা’দ

মোঃ হেদায়েত উল্লাহ, টঙ্গী থেকে | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে আজ শুক্রবার বাদ ফজর থেকে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে তাবলীগ জামাত আয়োজিত এতদঞ্চলের সর্ববৃহৎ মুসলিম মহাসমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকাসহ দেশের ১৬টি জেলা থেকে বাস-ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চযোগে ও আশপাশের এলাকা থেকে পায়ে হেঁটে মুসল্ল­ীরা ইজতেমা ময়দানে এসে সমবেত হচ্ছেন। পুরো মাঠের জেলা ওয়ারী খিত্তায় তাবলীগ জামাতের মুসল্লীরা গত বুধবার থেকে অবস্থান নিতে শুরু করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদিনই বিভিন্ন যানবাহন ও পায়ে হেঁটে দলে দলে মুসল্লীদের কাফেলা বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। মুসল্লীদের স্রোত গতকাল রাত পর্যন্ত টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠের অভিমুখে অভ্যাহত ছিল। মানুষের এ স্রোত আগামী ১৪ জানুয়ারী প্রথম পর্বের শেষ দিনে আখেরী মোনাজাতের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজনকে ঘিরে তাবলীগ জামাতের আমির মাওলানা সা’দ এর ইজতেমা ময়দানে উপস্থিতি নিয়ে যে অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তার অবসান করেছেন মাওলানা সা’দ নিজেই। তিনি এবারের বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিচ্ছেন না বলে সূত্রে জানা গেছে। কাকরাইল মসজিদ ও ঢাকার ডিএমপি কমিশনার সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে মাওলানা সা’দ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ওই সূত্র থেকে বলা হয়েছে।
এদিকে মুসল্লীদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় ৮ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে। যাতে কোন কুচক্রীমহল ইজতেমা ময়দানে কোন ধরনের জঙ্গী কার্যক্রম চালিয়ে নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যে কোন জঙ্গী কার্যক্রম প্রতিহত করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ।
আগামী ১৪ জানুয়ারি রোববার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। মাঝে ৪ দিন বিরতি দিয়ে ১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। দ্বিতীয় পর্ব শেষে আগামী ২১ জানুয়ারি আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দু’পর্বের বিশ্ব ইজতেমা।
ইজতেমায় আগত মুসল্লীদের জন্য ইতিমধ্যে তাবলীগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবক কর্মী ও আশপাশের স্কুল-কলেজ, মাদরাসার ছাত্র, শিক্ষক, এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষ সম্মিলিত ভাবে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে টঙ্গীর তুরাগ তীরে ১৬০ একর খোলা ইজতেমা ময়দানের ওপর পাটের চট দিয়ে সুবিশাল সামিয়ানা তৈরী করেছেন। তাবলীগ জামাতের এ মিলন মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের শতাধিক দেশ থেকে দুই পর্বে সমন্বয় করে ১৫/২০ হাজার বিদেশী মেহমানসহ প্রায় ২০/২৫ লাখ মুসল্ল­­­ীর সমাবেশ ঘটবে বলে আয়োজক কমিটির মুরব্বিরা আশা করছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক হাজার তাবলীগ অনুসারী বিদেশী মুসল্লী ইজতেমাস্থলে এসে পৌছেছেন বলে ইজতেমা সূত্রে জানা গেছে। লাখো মুসল্লীর অংশগ্রহণে আজ শুক্রবার দেশের বৃহত্তম জুম্মার জামাত অনুষ্ঠিত হবে ইজতেমা ময়দানে।
১৯৬৬ সাল থেকে টঙ্গীর এই তুরাগ নদের তীরে নিয়মিত ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তাবলীগ অনুসারী মুসল্লীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় মুসল্লীদের চাপ কমাতে ২০১১ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইজতেমা মাঠে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় গত বছর থেকে ৪ ভাগে ভাগ করা হয়েছে মূল ইজতেমার কার্যক্রম। বিশ্ব ইজতেমার শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বীদের সিদ্ধান্তক্রমে প্রথম পর্বে ১৭ জেলা, দ্বিতীয় পর্বে ১৫ জেলার মুসল্লীরা ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন। বাকি ৩২ জেলার মুসল্লীরা আগামী ২০১৯ সালের বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন।
ইজতেমা উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠে হামর্দদের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিস, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিপ্তর, টঙ্গী ঔষধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করেছে। এছাড়াও ২৫০শয্যা বিশিষ্ট শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতালের অসুস্থ্য মুসল্লীদের চিকিৎসা দিতে পর্যাপ্ত বেড সংখ্যা বৃদ্ধি করে অতিরিক্ত চিকিৎসক সেবা কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকবে। স্থানীয় সংবাদিকদের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের জন্য ইজতেমা ময়দানে টঙ্গী প্রেসক্লাব মিডিয়া সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে শান্তিপূর্ণ ভাবে মুসল্লীরা এবাদত বন্দেগী করতে সরকারি-বেসরকারি সার্বিক সুযোগ সুবিধা এ বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এদিকে গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে ইজতেমায় আগত মুসল্লীদের সার্বিক নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। এসময় তিনি বলেন, এবারের বিশ্ব ইজতেমায় ৮স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলা হয়েছে। ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত পোশাকী ও সাদা পোশাকী সদস্য নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন।
সিসি ক্যামেরার আওতায় এবারের ইজতেমা ময়দান :
গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ইজতেমার চারপাশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এবারও বিশ্ব ইজতেমা ময়দানসহ মাঠের আশপাশসহ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। ইজতেমাস্থলের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে পুলিশের এক ব্রিফিংয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ এসব কথা জানান।
পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদ জানান, ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব-পুলিশসহ এবার বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বে ১২ হাজারের মতো নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করবে। টঙ্গী ব্রিজ থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা, মন্নু গেট থেকে কামারপাড়া পর্যন্ত এবং তুরাগ নদসহ পুরো এলাকাকে পাঁচটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি সেক্টরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নজরদারির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করবেন। তিনি বলেন, এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে ছয় হাজারের অধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। থাকবে ৮স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইজতেমা মাঠের ভেতরে সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত পুলিশও দায়িত্ব পালন করবেন। খিত্তায় খিত্তায় পুলিশের সংখ্যা এবার বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদ এসময় আরো জানান, ইজতেমা উপলক্ষে রাস্তার মোড়ে-মোড়ে, গলিতে-গলিতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ইজতেমার প্রবেশ পথগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ইজতেমাকে ঘিরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লিরা আসছেন। আমাদের কাজ তাদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করা।
তিনি আরো জানান, বিদেশি খিত্তায় তল্লাশির জন্য তিনটি আর্চওয়ে স্থাপন করা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে বেশি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে ইজতেমা ময়দানে আগত মুসল্লীদের গতিবিধি পুলিশ পর্যবেক্ষণ করছে। এ ছাড়া একটি অত্যাধুনিক কন্টোল রুম ও পাঁচটি সাব কন্টোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। পুরো ইজতেমা এলাকাকে পাঁচটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি সেক্টরে একজন করে অ্যাডিশনাল এসপিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের উদ্দেশে পুলিশ সুপার বলেন, তারা কোনো সমস্যায় পড়লে যেন পুলিশের শরণাপন্ন হন। পুলিশ ইবাদতের অংশ হিসেবে ইজতেমা মাঠে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে বলে জানান গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ২৪ঘন্টা মুসল্লীদের সেবায়: গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লীদের ২৪ঘন্টা সেবাদানে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। গাজীপুর সিটি মেয়র এম এ মান্নান জানান, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রশাসনের নজরদারির জন্য পর্যাপ্ত কন্ট্রোল রুম নির্মাণ করা হয়েছে। ইজতেমায় আগত দেশী-বিদেশী মুসল্লীদের স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে তোরণ, ইজতেমার নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব ও পুলিশের ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, ইজতেমায় নিয়োজিত নিরাপত্তা সদস্যদের জন্য অস্থায়ী টয়লেট নিমাণ, ফগার মেশিনের মাধ্যমে মশক নিধন কার্যক্রম গ্রহণ, ইজতেমা কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবেক বিøচিং পাউডার সরবরাহ করা, ইজতেমা চলাকালীন সময় পর্যাপ্ত গার্বেজ ট্রাকের মাধ্যমে দিন-রাত বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম নিশ্চিতকরণ, কন্ট্রোল রুমসমূহ ও অন্যান্য অস্থায়ী ভাবে খুঁটি স্থাপনের মাধ্যমে কয়েক শতাধিক বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করণ, তুরাগ নদীতে নিরাপত্তার জন্য টঙ্গী ব্রীজ ও কামারপাড়া ব্রীজের নীচে দুই পার্শ্বে বাঁশ দ্বারা ২টি বেষ্টনী নির্মাণ, ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের চৌরাস্তা পর্যন্ত দুই পার্শ্বে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও রাস্তায় পার্কিং করা গাড়ীসমূহ অপসারণ, ধূলাবালি নিয়ন্ত্রণের জন্য সার্বক্ষণিক পানি ছিটানোর ব্যবস্থা, রাস্তার দুই পাশে দেয়ালের অশ্লীল পোষ্টার অপসারণ ও সিনেমা হলসমূহ সম্পূর্ণ বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য কন্ট্রোল রুমের সামনে অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র স্থাপন, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আগত বিদেশী মেহমানদের রান্নার কাজের জন্য গ্যাসের চুলা স্থাপনসহ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক মনিটর করা হচ্ছে। ১২টি উৎপাদক নলকূপ দ্বারা ১১কিঃমিঃ পাইপ লাইন স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিদিন ঘন্টায় ৩ কোটি ৫০ লক্ষ গ্যালন সুপেয় পানি মুসল্লীদের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে ২৪ঘন্টা ইজতেমায় মুসল্লীদের সেবায় নিয়োজিত করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানান, ইজতেমাস্থলে তাদের একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে সার্বক্ষণিক কর্মকর্তাসহ ফায়ারম্যানরা অবস্থান করবেন। ময়দানের প্রতি খিত্তায় ফায়ার এক্সস্টিংগুইসারসহ ফায়ারম্যান, গুদাম ঘর ও বিদেশি মেহমান খানা এলাকায় পানিবাহী গাড়ি, ডুবুরী ইউনিট, ১টি স্ট্যান্ডবাই লাইটিং ইউনিট এবং ৫টি অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। সূত্র আরো জানায়, ইজতেমা মাঠের ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে ইজতেমা মাঠের আশেপাশের এলাকায় পানি ছিটানো হচ্ছে।
ডেসকো’ কর্তৃপক্ষ জানান, ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রীড ও টঙ্গী নিউ গ্রীডকে মূল ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। যে কোন একটি গ্রীড নষ্ট হলেও সামগ্রিক বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত হবে না বলে জানায় ডেসকো কর্তৃপক্ষ। ইজতেমা এলাকায় ৪টি ষ্ট্যান্ডবাই জেনারেটর এবং ৫টি ট্রলি-মাউন্টেড ট্রান্সফরমারও সংরক্ষণ করা হয়েছে মুসল্লীদের সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করার লক্ষ্যে।
ইজতেমায় বিদেশী মেহমান : প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে প্রায় শতাধিক দেশের বিদেশী মুসল্লী আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এব্যাপারে টঙ্গীর ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইজতেমায় আগত বিদেশী মুসল্লী­দের সঠিক সংখ্যা জানাতে না পারলেও বিশ্বের অন্তত শতাধিক দেশ থেকে কয়েক হাজার বিদেশী মেহমান এবারের ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের প্রায় কয়েক হাজার বিদেশী মুসল্লী ঢাকার কাকরাইল মসজিদ, উত্তরা, টঙ্গী ও আশপাশের এলাকার মসজিদে মসজিদে অবস্থান করছেন। তাদের মধ্য থেকে প্রায় সহস্রাধিক বিদেশী মুসল্লী­ ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানের নির্ধারিত তাঁবুতে অবস্থান নিয়েছেন।
ইজতেমায় বিশেষ ট্রেন ও বাস সার্ভিস : ইজতেমা ময়দানে মুসল্ল­ীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ইজতেমা গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বিআরটিসির শতাধিক স্পেশাল বাস সার্ভিস চলাচল করতে দেখা গেছে। বিআরটিসির একটি সূত্র জানায়, আব্দুল­াহপুর-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল, শিববাড়ী-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল, টঙ্গী-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল, গাজীপুর-চৌরাস্তা, মতিঝিল-ভায়া ইজতেমাস্থল, গাবতলী-গাজীপুর ভায়া ইজতেমাস্থল, গাবতলী-মহাখালী ভায়া ইজতেমাস্থল, গাজীপুর-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল, মতিঝিল-বাইপাল ভায়া ইজতেমাস্থল বিআরটিসির বাস সার্ভিস চলাচল করবে।
অপরদিকে বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লী­দের যাতায়াতে সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিশেষ ট্রেন সার্ভিস পরিচালনা করবে। এ ছাড়াও সকল আন্তঃনগর, মেইল এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হয়েছে। ইজতেমা চলাকালীন সময়ে সকল আন্তঃনগর ট্রেন টঙ্গী রেলস্টেশনে দুই মিনিট করে যাত্রা বিরতি করবে।
আসছেন হাজার হাজার বিদেশী মুসল্লী
বেনাপোল অফিস জানায়, বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে বেনাপোল চেকপোস্ট দিযে প্রতিদিন কয়েক হাজার বিদেশী মুসল্লি বাংলাদেশে আসতে শুরু হয়েছে। টঙ্গির তুরাগ নদীর তীরে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাওয়া ৬৬তম বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিদেশি মুসল্লীরা আসছেন বাংলাদেশে। গত এক সপ্তাহে এই সংখ্যা ২ হাজারেরও বেশি বলে জানিয়েছেন ঢাকার তাবলীগ জামায়াতের কর্মকর্তা আলহাজ্ব কামাল হোসেন। বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলামও জানিয়েছেন, আখেরি মোনাজাতের আগের দিন পর্যšন আরও বিদেশি মেহমান আসবেন বাংলাদেশে। পুলিশ জানায়, যেসব দেশ থেকে বিদেশি মুসল্লিরা আসছেন সেসব দেশের তালিকায় রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া, আফ্রিকা, তুর্কমেনিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, ভারত, সউদী আরব ও কম্বোডিয়া। বিদেশী মেহমানদের অভ্যর্থনা জানানো, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা ও বাস যোগে ঢাকায় পাঠানোসহ সব কাজ দ্রুত করার জন্য ঢাকার কাকরাইল মসজিদ থেকে আসা ৩৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন বেনাপোল চেকপোস্টে । তাদের সঙ্গে কাজ করছেন বেনাপোলে চেকপোস্টের জামিয়া আরাবিয়া বাগে জান্নাত কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থী ও এতিমখানার নেতারা। বিশ্ব ইজতেমায় আগত বিদেশি মেহমানসহ মুসল্লিদের থাকা-খাওয়ার জন্য এ মাদরাসায় বিশেষ ব্যবস্থাও রয়েছে। এদিকে, পরিবহন স্বল্পতার কারণে বিদেশ থেকে আসা মুসল্লীরা দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছেন। কুয়াশার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিবহন না আসায় এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এছাড়া, ইজমেতায় যোগ দিতে আসা বিদেশি মেহমানরা ৫০০ টাকার ভ্রমণকর নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তারা বলছেন, ইসলামি দাওয়াতের কাজে তারা বাংলাদেশে আসছেন। তাই সরকার এই কর তাদের জন্য মওকুফ করতে পারত। ইউসুফ আলী নামে এক ভারতীয় নাগরিক জানান, ভারতীয় পুলিশ তাদের ৩/৪ ঘন্টা ধরে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে অহেতেুক দেরী করেছে। বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসা ভারতীয় নাগরিক মো. রিয়াসাদ হোসাইন জানান,‘আমরা শত শত বিদেশি মুসল্লি কেবল ধর্মীয় কাজে বিশ^ ্এজতেমায় যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছি। সরকারের উচিত ছিল ইজতেমায় আসা বিদেশি মেহমানদের ভ্রমণকর মওকুফ করে দেওয়া। তাহলে বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হতো।’ বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট পুলিশ ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান ‘বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসা বিদেশি মেহমানদের দ্রুততার সঙ্গে পাসপোর্টের কাজ সম্পন্ন করতে আমরা সকাল সন্ধ্যা কাজ করে যাচ্ছি। এ জন্য ইমিগ্রেশনে অতিরিক্ত অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিদেশি মেহমানদের সেবা করতে পেরে আমরাও খুব খুশি।’



 

Show all comments
  • বাবুল ১২ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:১১ এএম says : 0
    অন্যান্য বারের মত এবারও যেন সুন্দরভাবে এটা যেন সম্পন্ন হয় সেটাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্ব ইজতেমা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ