Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাঠগড়ায় মুশফিক-মাহামুদুল্লাহ

প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী, কোলকাতা (ভারত) থেকে : এমন পরিস্থিতি কিন্তু এটাই প্রথম নয়। ১৯৯৭’র আইসিসি ট্রফির ফাইনালে শেষ বলে শান্ত বল ব্যাটে না পেরেও দিয়েছিলেন দৌড়, প্যাডে বল লেগে সিঙ্গলে বাংলাদেশ জিতেছে ট্রফি। কেনিয়ার বিপক্ষে ওই ফাইনাল ম্যাচের শেষ ডেলিভারির সুখস্মৃতি রোমন্থনের পাশে আক্ষেপও কিন্তু আছে। ২০১২ সালে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে ইনিংসের শেষ বলে বাউন্ডারির লক্ষ্যটা পাড়ি দিতে পারেনি বাংলাদেশ দল। আইজাজ চিমা’র ইয়র্কারে শাহাদত রাজিব এক রানের বেশি নিতে না পারায় ২ রানে হেরে ডুকরে কেঁদেছে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে তিসারা পেরেরার শেষ বলে তিন রানের লক্ষ্যমাত্রা পেরুতে পারেনি বাংলাদেশ দল, বীমার ডেলিভারি নো বলে গণ্য না হওয়ায়। এশিয়া কাপের ফাইনালে শেষ ওভারে ৯ রান এবং শ্রীলংকার বিপক্ষে ওই টি-২০তে ১৭ রানের লক্ষ্যটা শেষ বলে এসে যতোটা কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছিল, ততোটা কঠিন পরিস্থিতির মুখে কিন্তু গত পরশু বেঙ্গালুরুরে পড়তে হয়নি বাংলাদেশ দলকে। শেষ ওভারে ১১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে এসে হারদিক পান্ডের প্রথম ৩ বলে ৯ রান নিয়ে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে স্বাগতিক দলের চেহরায় ছেয়ে গিয়েছিল বিষাদের ছায়া। ১৮ বছর পর ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবতীর্ণ হয়ে ভারতের মাটিতে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে জয়টা কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র-তখনই একটার পর একটা অমার্জনীয় অপরাধ। ৪র্থ বলে মুশফিকুরের মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে আসার পর ৫ম বলেও একই ভুল মুশফিকুরের! ১৯ বছর আগে পেরেছেন শান্ত, তাও আবার বোলার হয়ে। অথচ চিন্নাস্বামীতে শেষ বলে অন্ততঃ ১ রান নিতে পারলে ম্যাচ টাই তো করতে পারতো, ব্যাটসম্যান পরিচয়ের পরও সেটাই যে পারেনি শুভাগতহোম।
এই তিন ব্যাটসম্যান এখন খলনায়ক। মাহামুদুল্লাহ-মুশফিকুর, এই দুই ক্রিকেটার শুধু টিমমেটই ননÑতারা দু’জন নিকটাত্মীয়, ভায়রা। বোঝাপড়টাও তাদের মধ্যে দারুণ। ২০১৫ বিশ্বকাপে এডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য জয়ে ৫ম জুটিতে ১৪১ রানের পার্টনারশিপে তাদের দু’জনের অবদান এখনো ভোলেনি কেউ। এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়ে গুলিয়ে ফেলবে তারা, তা মানবে কেন দর্শক, সমর্থকরা? তিন ভার্সনের ক্রিকেট মিলে মুশফিকুর ২৬২ এবং মাহামুদুল্লাহ ২০৪ ম্যাচ খেলার পর নিজেরাও নিশ্চয়ই অজুহাত খোঁজার উপায় পাবেন না! শেষ ওভারে ব্যাটিংয়ের সময় ভারত অধিনায়ক যখন প্রতিটি ডেলিভারির আগে সময়ক্ষেপণ করেছেন, টিমমেটদের নিয়ে করেছেন আলোচনা, সেখানে বাংলাদেশ দলের ডাগ আউটকে দেখাল নিস্ক্রিয়! যাদের ক্রিকেট ক্যারিয়ার এতো লম্বা, তাদেরকে কেন ডাগ আউট থেকে পাঠাতে হবে বার্তা? এটাই প্রশ্ন টিম ম্যানেজার খালেদ মেহমুদ সুজনেরÑ‘৩ বলে দরকার যেখানে মাত্র ২ রান, তখন কেন এমন হবে? এ প্রশ্ন এখন সবার। তা ছাড়া মাহামুদুল্লাহ, মুশফিকুরদের বার্তা পাঠানোর কিইবা আছে। তারা তো আর বয়সে কেউ ছোট নয়। তা ছাড়া মুশফিক যদি ওই ওভারের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ডেলিভারিতে বাউন্ডারি না মারতো তাহলে তো এত ক্লোজ হতো না ম্যাচটি।’ শেষ ডেলিভারির আগে অনেক সময় নিয়েছেন ভারত অধিনায়ক ধোনী। ডান হাত থেকে খুলে ফেলেছেন কিপিং গøাভস। হারদিক পান্ডেকে বোলিং নির্দেশনা দিতে আশিষ নেহরার মতো সিনিয়র ক্রিকেটারকে পর্যন্ত ডেকে এনেছেন তিনি! অথচ শেষ বলে করণীয় কী, নন স্ট্রাইক ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজুরকে সে নির্দেশনাই যে দেয়নি শুভাগতহোম! তবে ড্রেসিংরুম থেকে মুস্তাফিজুরকে পাঠানোর সময় বল ডেলিভারির সঙ্গে সঙ্গে মুস্তাফিজুরকে দৌড় দেয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সুজনÑ‘মুস্তাফিজুরকে বলা হয়েছিল, দৌড় দেওয়ার জন্য।’
শেষ তিন বলে ২ রান, এমন এক পরিস্থিতিতে পড়ে ভারত অধিনায়কের ফিল্ড পজিশন নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত ক্লোজ ফিল্ডিংকে গুরুত্ব দেয়ার কথা। অথচ, ম্যাচটা যখন হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম, তখনো ডিপে ৫ ফিল্ডার ব্যবহার করেছেন ধোনী। এমন ডিফেন্সিভ ফিল্ডিং দেখে সিঙ্গলে খেলায় উদ্বুদ্ধ হবেন, এটাই স্বাভাবিক। অথচ দলের ২ সিনিয়র ক্রিকেটার একজনের দেখাদেখি অন্যজনও একই ভুল করেছেন। চার ছক্কায় কেন প্রলুদ্ধ হবেন, কেনইবা ধোনীর পাতা ফাঁদে দিবেন তারা পা? এ প্রশ্ন মাশরাফিরওÑ‘ওই সময়টায় আরেকটু হিসেব করে খেললেই হতো, আমাদের এত ঝুঁকিতে পড়তে হতো না। বৃত্তের মধ্যে কোনো ফিল্ডার ছিল না। যদি এক রান নিতাম (যে বলটিতে মুশফিক আউট হলো), আমরাই অনেক ভালো অবস্থানে থাকতাম। ওভাবে চিন্তা করতে পারলে তো ভালোই হতো। কিন্তু আমরা সেটা পারিনি।’
চাপ থেকে মুক্ত করতে ওমন শট খেলেছেন মাহামুদুল্লাহ। তেমনটাই অবশ্য মনে করছেন ভারত অধিনায়ক ধোনীÑ‘ অনেক সময়ই এ রকম হয়, বড় শট খেলে ম্যাচ শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে। ভালো ব্যাটিং করতে থাকলে শট খেলার দিকেই ঝোঁক থাকে। বিশেষ করে উইকেট হাতে থাকলে, মনে হয় যে অন্য কেউ তো শেষ করতে পারবেই! মাহমুদুল্লাহর জন্য এটা শিক্ষা। ক্রিকেট খেলাটাই এমন। ওই শট যদি ছক্কা হতো, বলা হতো দারুণ সাহসিকতা। এখন হচ্ছে সমালোচনা। এটাই ক্রিকেট।’
শেষ ওভার থ্রিলারে জিতে ভারতের উৎসব বিশ্বজয়ের মতোই দেখিয়েছে। শেষ ওভারে অনোন্যপায় হয়ে হারদিক পান্ডের হাতে বল তুলে দিয়ে প্রথম তিন বলে মার খাওয়ার দৃশ্য দেখেও হতোদ্যম হননি ধোনী। কোনোভাবেই ইয়র্কার দেয়া যাবে না শেষ বলটিতে, তা নাকি স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছিলেন ধোনী পান্ডেকেÑ‘ওই ডেলিভারির আগে আমরা বেশ ক’জন মিলে কথা বলেছি। একটা জিনিষ নিশ্চিত করে বলতে পারি, হারদিক পান্ডে ইয়র্কার দিক, তা আমরা কেউ চাইনি। তাকে ব্যাক অব লেন্থ ডেলিভারি দিতে বলা হয়েছে, তবে কীভাবে ব্যাক অব লেন্থ ডেলিভারি দিবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। ওই সময়ে ওয়াইড ডেলিভারি দিক, আমরা চাইনি। আলোচনা করে আউটফিল্ড সাজিয়েছি, পরিকল্পনা ঠিকঠাকমতো বাস্তবায়ন করতে হবে। ’



 

Show all comments
  • Munshi Sujon ২৫ মার্চ, ২০১৬, ১০:৪১ এএম says : 1
    নিজেকে সবার সামনে ফুটিয়ে তোলার জন্য বাউন্ডারী হাকিয়ে জিততে চেয়েছিল। যেখানে ৩ বলে ১রান হলে ড্র আর ২রান হলে জয়। এটা শুধুই ওদের দুজনের সেচ্ছচারিতা। তাই ওদের দুজনকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। তা না হলে ক্রিকেটের প্রতি, খেলা দেখার প্রতি দেশের মানুষের আগ্রহ কমে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ahamed Yousuf ২৫ মার্চ, ২০১৬, ১০:৪২ এএম says : 0
    জ্ঞাণী ঠোকে শেখে বিজ্ঞ দেখেই শেখে। রিয়াদ ভাল খেলে তবে, -------------------
    Total Reply(0) Reply
  • MD Shamim Khan ২৫ মার্চ, ২০১৬, ১০:৪২ এএম says : 0
    কেন ১৬কোটি মানুষ কে কাদালে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাঠগড়ায় মুশফিক-মাহামুদুল্লাহ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ